পুরনো ধ্যান-ধারণার বাইরে গিয়ে আর্থিক লেনদেন এখন প্রতিনিয়ত নতুন মাত্রা পাচ্ছে। গত কয়েক বছরে অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও ইন্টারনেটভিত্তিক লেনদেন বেড়েছে। তবে কম্পিউটার ও অনলাইনভিত্তিক কার্যক্রমে শতভাগ নিরাপত্তা বলে কিছু নেই। হ্যাকার ও অনলাইন দুর্বৃত্তরা নিয়তই নিরাপত্তা প্রটোকল ভাঙার নতুন নতুন উপায় বের করছে। ফলে একেবারে আপডেটেড অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার, কয়েক স্তরের নিরাপত্তা কিংবা শক্তিশালী এনক্রিপশন ব্যবস্থা চালু থাকার পরও বিশ্বের কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠানই নিরাপত্তার ব্যাপারে নিশ্চিন্তে থাকতে পারছে না। সাইবার দুর্বৃত্ত প্রতিরোধের প্রয়াসে যেমন নিত্যনতুন প্রযুক্তি আবিষ্কৃত হচ্ছে, তেমনি অপরাধীরাও সেসবের ফাঁকফোকর বের করার ক্ষেত্রে মেধা ও কৌশলের পরিচয় দিচ্ছে। নিরাপত্তার ফোকর গলে কীভাবে অর্থ পাচার বা স্থানান্তর হয়ে যায়, তার একটি বড় উদাহরণ বলা যেতে পারে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থ চুরির ঘটনাটি। কিছুদিন আগে বেশ কয়েকটি ব্যাংকের কার্ড ক্লোন করে টাকা উত্তোলনের মতো ঘটনাও ঘটেছে। ঘটনাগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ও অন্যান্য বাণিজ্যিক ব্যাংক তাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় পরিবর্তন এনেছে এবং প্রতিনিয়তই এ ব্যাপারে কাজ চলছে।
যেহেতু আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে সাইবার হামলার শিকার হতে হয় বেশি, সুতরাং তাদেরই নিরাপত্তার ব্যাপারটিতে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে। সম্প্রতি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) বিষয়টিতে মনোযোগী হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমদ পলক। এনবিআরে যেহেতু করদাতাদের বিভিন্ন তথ্য থাকে, সুতরাং এটি সাইবার অপরাধীদের একটি বড় লক্ষ্যবস্তু হতে পারে। এতে ব্যক্তি ও রাষ্ট্র উভয়েরই ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা। ডিজিটাল পদ্ধতিতে কর শনাক্তকরণ, করের হিসাব তৈরি ও কর প্রদান প্রক্রিয়ার কাজে এনবিআর অনেক দূর এগিয়েছে এবং আগামী দিনগুলোয় পুরো প্রক্রিয়াটিকেই অনলাইনভিত্তিক করা হবে বলে ধারণা। সুতরাং এগুলো প্রচলনের পাশাপাশি নিরাপত্তা বিধানের ব্যবস্থাও থাকা জরুরি। শুধু এনবিআর নয়, তাদের মতো মোট ২১টি সংস্থা সাইবার ঝুঁকিতে রয়েছে বলে তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জানিয়েছেন।
আমরা মনে করি, তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী যথাযথভাবেই একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উত্থাপন করেছেন। উল্লেখ করা যেতে পারে, সাইবার ঝুঁকিতে থাকার অন্যতম কারণ হচ্ছে পাইরেটেড সফটওয়্যার ব্যবহার। আমাদের ব্যাংক, বিমা ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কোথাও যেন কোনো ধরনের পাইরেটেড সফটওয়্যার ব্যবহার না হয়, সেটি নিশ্চিত করা জরুরি। এ ব্যাপারে লিনাক্সভিত্তিক বিভিন্ন সলিউশন বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়। বিশেষত প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের মূল সার্ভার সুরক্ষিত রাখা, লেনদেন ও তথ্য আদান-প্রদানে প্রয়োজনে টু-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশনের মতো আরও আপডেটেড পদ্ধতি চালু করা যেতে পারে। সব ক্ষেত্রেই যে একই ধরনের সমাধান কার্যকর হবে, তা নয়; কিন্তু প্রয়োজন বুঝে সাইবার নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে সবাইকে।
সাইবার নিরাপত্তায় মনোযোগ বাড়াতে হবে

Add Comment