Print Date & Time : 19 June 2025 Thursday 12:18 pm

সাক্ষরতার হার বাড়লেও জনসংখ্যার ২৫ শতাংশ এখনও নিরক্ষর

নিজস্ব প্রতিবেদক: সরকারি হিসাবে দেশে প্রতি বছর বাড়ছে সাক্ষরতার হার। যদিও সেটা খুবই ধীরগতিতে। এরই ধারাবাহিকতায় গত বছরের চেয়ে এ হার আরও প্রায় এক শতাংশ বেড়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশে সাক্ষরতার হার ৭৫ দশমিক ছয় শতাংশ, যা গত বছর ছিল ৭৪ দশমিক সাত শতাংশ। সাক্ষরতার হার বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলেও দেশে এখনও মোট জনসমষ্টির ২৪ দশমিক চার শতাংশ মানুষ নিরক্ষতার অন্ধকারে নিমজ্জিত রয়েছেন।

আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস সামনে রেখে গতকাল সোমবার প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য তুলে ধরেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, শিক্ষার সুযোগবঞ্চিত জনগোষ্ঠীকে সাক্ষরজ্ঞান দেয়া, জীবনব্যাপী শিক্ষা সুযোগ সৃষ্টি, কারিগরি ও বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে জীবিকায়ন, দক্ষ মানবসম্পদে রূপান্তর, আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং বিদ্যালয়বহির্ভূত ঝরেপড়া শিশুদের শিক্ষার বিকল্প সুযোগ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে সরকার উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা আইন-২০১৪ প্রণয়ন করেছে। এ আইন অনুযায়ী উপানুষ্ঠানিক প্রাথমিক শিক্ষা আট থেকে ১৪ বছর বয়সের শিশু, যারা কখনোই স্কুলে যায়নি বা প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করার আগে ঝরে পড়েছে এবং বয়স ১৫ বছর বা তদূর্ধ্ব বয়সের নারী-পুরুষ যারা স্কুলে যাননি, তাদের এ শিক্ষা কার্যক্রমের আওতায় সাক্ষরজ্ঞান দেয়া হয়।

জাকির হোসেন বলেন, বর্তমানে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর অধীনে এক কোটি ৮০ লাখ নিরক্ষর মানুষকে সাক্ষরতা দেয়া হয়েছে। আগামী ৮ সেপ্টেম্বর নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস উদ্যাপন করা হবে।

অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা প্রসঙ্গে প্রতিমন্ত্রী জানান, এ কার্যক্রমের আওতায় ২০২১ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে ৩৩ দশমিক ৭৯ মিলিয়ন কিশোর-কিশোরী ও বয়স্ক নিরক্ষর জনগোষ্ঠীকে মৌলিক সাক্ষরতা দেয়া হবে। মৌলিক সাক্ষরতা অর্জনকারীদের কার্যকর দক্ষতার প্রশিক্ষণ দেয়া ও উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা বোর্ডে কার্যকর করা আমাদের চ্যালেঞ্জ।

বিদ্যালয়বহির্ভূত শিশুদের জন্য কর্মসূচি বিষয়ে তিনি বলেন, সব শিশুদের জন্য মানসম্মত ও যুগোপযোগী শিক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। এর আওতায় আট থেকে ১৪ বছর বয়সে বিদ্যালয়বহির্ভূত ১০ লাখ শিশুকে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষাদানের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।

উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো পরিকল্পনা প্রসঙ্গে জাকির হোসেন জানান, উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা বোর্ডের মাধ্যমে দেশের সুবিধাবঞ্চিত নিরক্ষর জনগোষ্ঠীকে মৌলিক শিক্ষাসহ দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলার প্রত্যয় নিয়ে জীবনব্যাপী শিক্ষা কর্মসূচির কাজ চলমান। এ কর্মসূচি বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশের আট থেকে ১৪ বছর বয়সী বিদ্যালয়বহির্ভূত ঝরেপড়া শিশুদের এবং ১৫ বছর বয়সী নারী-পুরুষদের মৌলিক সাক্ষরতা ও দক্ষতার প্রশিক্ষণসহ আয়বর্ধক কাজে অংশগ্রহণ বা কর্মসংস্থানের সুযোগে নানা ট্রেডে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে।

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সচিব মো. হাসিবুল আলম ও অতিরিক্ত সচিব রতন চন্দ্র পণ্ডিত প্রমুখ।

২০১০ সালে দেশে সাক্ষরতার হার ছিল ৫৯ দশমিক ৮২ শতাংশ। এক দশকের ব্যবধানে এ হার ৭৫ দশমিক ছয় শতাংশ ছুঁলেও ‘আত্মতুষ্টির সুযোগ নেই’ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।