সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: বিদেশি থেকে আমদানিকৃত ভোজ্যতেল, চিনি নিয়ে আসা পাঁচটি জাহাজ ব্যাংক ঋণপত্রের বিপরীতে ডলারে মূল্য পরিশোধ করতে না পারায় জাহাজের তেল ও চিনি খালাস করা যাচ্ছে না। এসব জাহাজ মোট অপরিশোধিত চিনির পরিমাণ এক লাখ ৪৭ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন আর ভোজ্যতেল ১৭ হাজার মেট্রিক টন। আর রমজান মাসের বাজার সামনে রেখে আনা অপরিশোধিত চিনি ও ভোজ্যতেল নিয়ে ভাসা জাহাজগুলো অতিরিক্ত অবস্থানের কারণে প্রতিদিন এক লাখ ডলারের বেশি জরিমানা গুনতে হচ্ছে। ফলে এসব পণ্যের দাম আরও বাড়ার আশঙ্কা আছে।
চট্টগ্রাম বন্দর ও কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, জাহাজের তেল ও চিনি খালাস করতে না পারা জাহাজের ‘এমটি সুপার ফরটি’ জাহাজটি মালয়েশিয়া থেকে প্রায় ১২ হাজার টন পাম তেল নিয়ে গত ২৫ নভেম্বর চট্টগ্রাম বন্দরের বহিনোর্ঙরে পৌঁছায়। ১ কোটি ২৪ লাখ ডলার মূল্যের এই তেল আমদানি করেছে চট্টগ্রামের এস আলম সুপার এডিবল অয়েল লিমিটেড। জাহাজ আসার পর ৫৫ দিন পেরিয়ে গেলেও তারা পণ্য খালাস করতে পারেনি। এ গ্রুপের আমদানি করা চিনি নিয়ে ‘এমভি একিলিস’ গত ২৪ ডিসেম্বর ৫৫ হাজার ৬৫০ টন চিনি নিয়ে বঙ্গোপসাগরের কুতুবদিয়ায় পৌঁছায়। কিন্তু বিদেশি ব্যাংক থেকে ঋণপত্রের বিল পরিশোধের নিশ্চয়তা না পাওয়ায় জাহাজটি থেকে পণ্য খালাসের অনুমতি মিলছে না। দেশবন্ধু গ্রুপের ৫৫ হাজার টন চিনি নিয়ে বন্দর জলসীমায় ‘এমভি ট্রুঅং মিন প্রসপারিটি’ জাহাজ পৌঁছায় গত ১৮ অক্টোবর। জাহাজটি একটানা ৯২ দিনে জাহাজটি থেকে ২৯ হাজার ২৩৯ টন চিনি খালাস হয়েছে। ডলারে আমদানিমূল্য শোধ না করায় বাকি ২৫ হাজার ৭৫১ টন চিনি খালাস হয়নি। আর মেঘনা গ্রুপ ব্রাজিল থেকে ৬০ হাজার ৫০০ টন চিনি নিয়ে ‘এমভি কমন অ্যাটলাস’ জাহাজ বন্দরে পৌঁছায় ৫ জানুয়ারি। জাহাজটি থেকে ২৩ হাজার ৬৫০ টন চিনি খালাস হয়েছিল। তবে ১১ জানুয়ারি থেকে খালাস স্থগিত করে দেয় রপ্তানিকারক। কারণ, বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট ব্যাংক ডলার সংকটে ঋণপত্রের বিপরীতে আমদানি দায় পুরোপুরি পরিশোধ করতে পারেনি। একই গ্রুপের ব্রাজিল থেকে অপরিশোধিত সয়াবিন তেল নিয়ে ‘এমটি সোগান’ জাহাজ বন্দর জলসীমায় আসে ৬ জানুয়ারি। এ জাহাজে আমদানিকারক বাংলাদেশ এডিবল অয়েল ও মেঘনা অয়েল রিফাইনারি লিমিটেডের তেল ছিল। এর মধ্যে বাংলাদেশ এডিবল অয়েলের তেল খালাস করা হয়েছে। আটকে আছে মেঘনা এডিবলের ৬২ লাখ ডলারের প্রায় ৫ হাজার টন তেল। ফলে আমদানিকারককে প্রতিদিন জরিমানা দিতে হয় ৩৮ হাজার ডলার (৪০ লাখ টাকা)।
গতকাল পর্যন্ত চট্টগ্রাম বন্দরের জলসীমায় আমদানি পণ্যবাহী ৭৫টি জাহাজ ছিল। এর মধ্যে চিনিবাহী জাহাজের সংখ্যা ছিল পাঁচটি। এর মধ্যে একটি জাহাজ থেকে চিনি খালাস করা হচ্ছে। বাকি চারটি চিনিবাহী জাহাজ অলস বসে ছিল। অপরদিকে তেলবাহী জাহজের সংখ্যা ছিল নয়টি। এর মধ্যে তিনটি থেকে তেল খালাস করা হচ্ছে। বাকি ছয়টি তেলবাহী জাহাজ অলস বসে ছিল।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের শেষ প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) অপরিশোধিত চিনির ঋণপত্র খোলার পরিমাণ আগের বছরের চেয়ে ২৮ শতাংশ কমেছে। এছাড়া অপরিশোধিত সয়াবিন তেলের ৪৭ শতাংশ, সয়াবিন বীজ ৮৩ শতাংশ, অপরিশোধিত পাম তেল ৯৯ শতাংশ, ছোলা ৪৭ শতাংশ ও খেজুর আমদানির ঋণপত্র খোলা কমেছে ৩০ শতাংশ।
একটি শিল্পগ্রুপের নির্বাহী পরিচালক শেয়ার বিজকে বলেন, ব্যাংকে বাংলাদেশি মুদ্রায় ঋণপত্র খুলে পণ্য আমদানি করা হয়। নিয়ম অনুযায়ী ব্যাংক মার্কিন ডলারে দাম পরিশোধ করবে। কিন্তু ডলারের সংকটে ব্যাংক মূল্য পরিশোধ করতে পারেনি। ফলে বিদেশি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান জাহাজ থেকে পণ্য খালাসের অনুমতি দিচ্ছে না। এতে আমদানিকারকরা প্রতিদিন এক লাখ ডলারের চেয়ে বেশি জরিমানা গুনতে হচ্ছে। আগামী মার্চ মাসের শেষ দিকে শুরু হবে রমজান। আর রোজায় তেল, চিনি, ডালসহ বিভিন্ন নিত্যপণ্যের চাহিদা বাড়বে। এমন সময়ে ডলার সংকটে আমদানি করতে না পারলে নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যেতে পারে। এ বছর রোজার আগে পণ্য আমদানির ঋণপত্র খোলা কম হয়েছে। বিষয়গুলো নিয়ে দায়িত্বশীলদের আরও ভাবতে হবে।