Print Date & Time : 19 June 2025 Thursday 9:05 am

সাজানো মামলায় ফাঁসানো হয়েছে দাবি পরিবারের

প্রতিনিধি, জবি : ইসলামী ছাত্র শিবিরের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে সম্প্রতি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২ শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এজন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাদের সাময়িকভাবে বহিষ্কারও করা হয়েছে। যদিও ওইসব শিক্ষার্থীর পরিবারের অভিযোগ সাজানো মামলায় তাদের ফাঁসানো হয়েছে। গতকাল সন্তানের সুবিচারের দাবিতে কান্নাজড়ানো কণ্ঠে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মোস্তফা কামালের কাছে আকুতি করেন আটককৃত শিক্ষার্থী রওশনুল ফেরদৌসের বাবা মোরশেদুল করিম।

জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের প্রথম ক্লাসে যুক্ত হতে গত ৩ মার্চ নীলফামারীর গ্রামের বাড়ি থেকে ঢাকায় আসেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাকাউন্টিং বিভাগে সদ্য ভর্তি হওয়া প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী রওশনুল ফেরদৌস রিফাত।

বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের জন্য কোনো আবাসিক হল না থাকায় সদ্য ভর্তি হওয়া এই শিক্ষার্থী ওঠেন বিশ্ববিদ্যালয়-সংলগ্ন একটি ভাড়া মেসে। তবে ২০ দিন অতিবাহিত না হতেই গত ২৪ মার্চ ভোররাতে রাষ্ট্রীয় ভাবমূর্তি ক্ষুণœ ও সরকারবিরোধী সেøাগান দেয়ার অভিযোগে কোতোয়ালি থানা পুলিশের একটি টিম সেই মেসে অভিযান চালিয়ে শিবির সন্দেহে তাকেসহ মোট ১২ শিক্ষার্থীকে আটক করে। পরে আদালতের নির্দেশে তাদের তিন দিনের রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠানো হয়।

এদিকে পুলিশের অভিযোগ আমলে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হয়েছে অভিযোগ করে ১১ শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। যদিও এ নিয়ে সমালোচনার মুখেও পড়তে হয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে।

গতকাল মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিসে এসে এ শিক্ষার্থীর বাবা নীলফামারি জেলার ডিমলা উপজেলার পশ্চিম ছাতনাই ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মোরশেদুল করিম কল্লোল দাবি করেন, তার ছেলে নির্দোষ। তাকে সাজানো মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আগে থেকেই তার ছেলে ছাত্রলীগ করতেন এবং কখনও শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন না।

এছাড়া ১নং পশ্চিম ছাতনাই ইউনিয়নের সভাপতি ওয়াহেদুন্নবী ও সাধারণ সম্পাদক জাফর আলী এক লিখিত বিবৃতিতে জানিয়েছেন, গ্রেপ্তারকৃত এ শিক্ষার্থী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। আলাদা বিবৃতিতে উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক আবু সায়েম সরকারও একই দাবি জানান।

শুধু রিফাতের পরিবার নয়, একই দাবি জানিয়েছেন গ্রেপ্তার হওয়া রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে সদ্য ভর্তি হওয়া আব্দুর রহমান অলির পরিবার। অলির বাবা মো. জাহাঙ্গীর ইসলাম নিজেও একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মোস্তফা কামাল বলেন, অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে নানা অপতৎপরতার অভিযোগ পাওয়া গেছে, যা সরকারবিরোধী। এমন অপতৎপরতায় যদি তারা যুক্ত থাকেন, তবে তা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করে। তাই তাদের সাময়িক বহিষ্কার করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আদালতের জামিন দেওয়া সাপেক্ষে এ শিক্ষার্থীরা তাদের ছাত্রত্ব ফিরে পাবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ইমদাদুল হক বলেন, রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপের অভিযোগে এসব শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। একই অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িকভাবে বহিষ্কারের আদেশ দেয়া হয়। যদি আদালত তাদের জামিন দেন, বা তারা নির্দোষ প্রমাণিত হন, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাদের বহিষ্কারের আদেশ প্রত্যাহার করা হবে।