সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকা ব্যয় বাড়ল মেট্রোরেল প্রকল্পে

মেট্রোরেল প্রকল্পের ব্যয় বাড়ল সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক” মেট্রোরেল (এমআরটি-৬) প্রকল্পের ব্যয় আরেক দফা বাড়ল। প্রকল্পটিতে নতুন নতুন অঙ্গ সংযোজনের কারণে এ ব্যয় বেড়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। সংশোধিত প্রকল্পে মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত নতুন অংশ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এবারের সংশোধনীতে প্রকল্পে ব্যয় বেড়েছে ৫০ শতাংশের ওপরে। প্রকল্পটির মূল ব্যয় ছিল ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা। সংশোধনীতে ১১ হাজার ৪৮৬ কোটি ৯২ লাখ টাকা বেড়ে এখন মোট ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৩৩ হাজার ৪৭১ কোটি ৯৯ লাখ টাকা।

প্রকল্পটির দ্বিতীয় সংশোধনী প্রস্তাবসহ মোট আটটি প্রকল্প গতকাল অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে গণভবন থেকে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা। এ সময় তিনি মেট্রোরেলের গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনগুলোয় পার্কিং স্পেস তৈরির নির্দেশ দেন। সেইসঙ্গে মেট্রোরেল প্রকল্পের কারণে জমিদাতাতের কম দামে ফ্ল্যাট দেয়ার নির্দেশও দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। পাশাপাশি তিনি বলেছেন, মেট্রোরেল পথের যেখানে হাসপাতাল বা গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা থাকবে, সেখানে সাউন্ড ব্রেকার লাগাতে হবে।  বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান এবং প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম। সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনা সচিব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী, আইএমইডি সচিব আবু হেনা মোরশেদ জামান, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য মোসাম্মৎ নাসিমা বেগম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, অপচয়, অপরাধ ও দুর্নীতি রোধে সবাইকে সচেতন থাকার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি (প্রধানমন্ত্রী) বলেছেন, বিদ্যুৎ ব্যবহারে মিতব্যয়ী হতে হবে। এছাড়া স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের আওতায় তৈরি রাস্তার মান বজায় রাখার নির্দেশও দেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে বলা হয়েছে, রাস্তা যাতে টেকসই হয়, সে বিষয়ে এলজিইডিকে নজর রাখতে হবে। সাম্প্রতিক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার জন্য একটি সমন্বিত প্রকল্প তৈরির কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, আগামী ডিসেম্বর মাসে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেল চালু হবে বলে প্রকল্প পরিচালক জানিয়েছেন।

পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী জানান, জনদুর্ভোগ কমানোর জন্য কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত কানেকটিং রেল চালুর নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এক্ষেত্রে বলা হয়েছে কানেকটিং রেলের পাশাপাশি যেখানে প্রয়োজন, সেখানেই আন্ডারপাস তৈরি করতে হবে। বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ যেসব প্রতিষ্ঠান লাভজনক হবে, তার অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা দেয়ার নির্দেশও দিয়েছেন শেখ হাসিনা।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, মেট্রোরেল প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে মেয়াদও। ২০১২ সালের জুলাই থেকে ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের লক্ষ্য ছিল। কিন্তু এবার দ্বিতীয় সংশোধনীর মাধ্যমে দেড় বছর বাড়িয়ে ২০২৫ সালেরর ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়াদ নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় গত এপ্রিল মাস পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ১৭ হাজার ৮৪৯ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। এছাড়া বাস্তব অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৮১ দশমিক ১৯ শতাংশ। মূল প্রকল্পটি রাজধানীর  উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত করার কথা ছিল। পরে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সেটি কমলাপুর পর্যন্ত নেয়া হচ্ছে।

প্রকল্পটির ব্যয় বৃদ্ধি প্রসঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত অনেক জমি অধিগ্রহণ করতে হয়েছে। ঢাকার জমির দাম কেমন হবে, তা সহজেই অনুমেয়। জমি অধিগ্রহণেই মোটা অঙ্কের খরচ হবে।

জরায়ুমুখ ও স্তন ক্যানসার স্কিনিং প্রকল্পে ৫০ কর্মকর্তার  বিদেশ সফর প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য মোসাম্মৎ নাসিমা বেগম বলেন, আমরা তাদের কাছে জানতে চেয়েছি। প্রকল্প-সংশ্লিষ্টরা যে ব্যাখা দিয়েছেন, এতে আমরা সন্তুষ্ট হওয়ায় এ ব্যবস্থা রেখেছি। এটা একটি স্বাস্থ্য-সম্পর্কিত প্রকল্প। তাই প্রায় ৩০ জন ডাক্তার ও নার্স যাবেন বিদেশে প্রশিক্ষণ নিতে। বাকি ২০ জন বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা থাকবেন।

একনেকে অনুমোদন পাওয়া অন্য প্রকল্পগুলো হলোÑচট্টগ্রাম-রাঙামাটি জাতীয় মহাসড়কের হাটহাজারী থেকে রাউজান পর্যন্ত সড়কাংশ চার লেনে উন্নীতকরণ। এটি বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ১০৪ কোটি টাকা। এছাড়া  নরসিংদী সড়ক বিভাগের আওতায় ইটাখোলা-মঠখোলা-কাটিয়াদী সড়ক ও নয়াপাড়া আড়াইহাজার নরসিংদী-রায়পুরা দুটি আঞ্চলিক মহাসড়ক যথাযথ মানে প্রশস্ততায় উন্নীতকরণে ব্যয় হবে ৯৮৪ কোটি টাকা। ময়মনসিংহ কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহের জন্য ধনুয়া থেকে ময়মনসিংহ পর্যন্ত গ্যাস পাইপলাইন নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৫৩ কোটি টাকা। ইলেকট্রিক ডেটা ট্র্যাকিংসহ জনসংখ্যাভিত্তিক জরায়ুমুখ ও স্তন ক্যানসার স্ক্রিনিং কর্মসূচি প্রকল্পে ব্যয় হবে ১২৯ কোটি টাকা। খাগড়াছড়ি শহর ও তৎসংলগ্ন অবকাঠামো নদীভাঙন থেকে সংরক্ষণ প্রকল্পে ব্যয় হবে ৫৮৬ কোটি টাকা। উপজেলা পরিচালন ও উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ২১১ কোটি টাকা। বৃহত্তর দিনাজপুর জেলার গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যয় হবে এক হাজার ৮০০ কোটি টাকা।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০