সাতক্ষীরায় জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে পানিফল চাষ

সৈয়দ মহিউদ্দীন হাশেমী, সাতক্ষীরা: সারাবছর জলাবদ্ধতায় থাকা পতিত জমিতে বিকল্প সম্ভাবনাময় ফসল হচ্ছে পানিফল চাষ। পুষ্টিসমৃদ্ধ ও কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় জলমগ্ন জমিতে বিকল্প কৃষি হিসেবে সাতক্ষীরা জেলায় পানিফলের চাষ বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

স্থানীয় নাম ‘পানি শিঙাড়া’, অনেকেই চেনেন ‘পানিফল’ হিসেবে। ইংরেজিতে বলা হয় ওয়াটার চেস্টনাট। এর বৈজ্ঞানিক নাম ‘ট্রাপা নাটানস’। তাছাড়া এ ফলের নানা জায়গায় নানা নাম রয়েছেÑওয়াটার কালট্রপ, বাফেলো নাট, ডেভিল পড ইত্যাদি। তিন কোনাবিশিষ্ট ফলটি দেখতে বাজারে তৈরি শিঙাড়ার মতো হওয়ায় অনেকেই একে পানি শিঙাড়া বলে। এটি কেবল হাঁটু বা কোমর পানিতেই জš§ায়।

বর্ষা মৌসুমে বাংলা সনের ভাদ্র মাস থেকে পানিফল রোপণ শুরু হয়ে চলে আশ্বিন মাস পর্যন্ত। আর অগ্রহায়ণ থেকে পৌষ মাসের শেষ পর্যন্ত চলে পানি থেকে ফল তোলার কাজ। এসময় কৃষক জলাবদ্ধ পতিত জমি ফেলে না রেখে তাতে বিকল্প ফসল হিসেবে চাষ করেন পানিফল। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরার নি¤œাঞ্চল সাত থেকে ৯ মাস পানিতে নিমজ্জিত থাকে, ফলে অন্য কোনো ফসল না হওয়ায় পানিফল চাষে ঝুঁকছেন চাষিরা।

লতার মতো বর্ষজীবী এ জলজ উদ্ভিদ পাঁচ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। পাতাগুলো শাপলা ফুলের মতো পানির ওপর ভেসে থাকে। ফলগুলোতে শিংয়ের মতো কাঁটা থাকে বলে এর নামকরণ হয়েছে পানিশিঙাড়া।

রোপণের তিন থেকে সাড়ে তিন মাসের মধ্যে ফল আসে গাছে। এ ফল দুই ধরনের। একটি সবুজ, অন্যটি লাল। ফলটির খোসা ছাড়িয়ে ভেতরের মিষ্টি শাঁসটি খেতে বেশ সুস্বাদু। পুষ্টিকর এ ফলের চাহিদা থাকায় সাতক্ষীরায় পানিফলের চাষ বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বর্তমানে জেলার চাহিদা পূরণ করে এটি দেশের বিভিন্ন হাট-বাজারে চলে যাচ্ছে। এ ফল কৃষি খাতে নতুন এক সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দেবে বলে মনে করেন কৃষিসংশ্লিষ্টরা।

পানি ফলচাষি সাতক্ষীরা সদর উপজেলার আলিপুর গ্রামের সাইফুল ইসলাম বলেন, এ ফল চাষে সার কীটনাশকের তেমন প্রয়োজন হয় না। অন্যান্য ফসলের থেকে এর পরিচর্যাও কম। অল্প পুঁজি ব্যয় করে লাভ বেশি। খেতেও সুস্বাদু। এ বছর আমি পাঁচ বিঘা জমিতে পানিফল চাষ করেছি। খরচ হয়েছে বিঘাপ্রতি ছয় হাজার টাকা। এখন পর্যন্ত  প্রতি বিঘায় ফল বিক্রি করেছি ২৮ হাজার টাকার মতো। জমিতে এখনও ফল শেষ হতে ২০ থেকে ২৫ দিন লাগবে। সব মিলিয়ে বিঘাপ্রতি মুনাফা ৩২ হাজার টাকা হবে বলে আশা করছি।

তিনি বলেন, অন্যান্য ফসল চাষ করা অসম্ভব, তাই এ পতিত জমিতে পানিফল চাষ করেছি। অন্যান্য ফসলের চেয়ে খরচের তুলনায় লাভও অনেক বেশি। ফলে এ চাষের প্রতি মানুষের আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে।

এ বিষয়ে সাতক্ষীরা কৃষিসম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক নুরুল ইসলাম জানান, জলাবদ্ধতার কারণে কৃষকরা ধান বা অন্য ফসল আবাদ করতে পারে না। এ কারণে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে বিভিন্নভাবে জলাবদ্ধ পতিত জমিতে পানিফল চাষের জন্য কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। সাতক্ষীরায় এ বছর ১২০ হেক্টর জমিতে পানিফলের চাষ হয়েছে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০