প্রতিনিধি, সাতক্ষীরা: রপ্তানিযোগ্য দানাবিহীন বিচি ছাড়া চীনা লেবু উৎপাদন করে লাভবান হচ্ছেন সাতক্ষীরা জেলার কৃষক। অধিক ফলনশীল জাতের এই লেবু রপ্তানিতে খুবই সম্ভাবনাময় কৃষি ফসল চাষে কৃষকের আর্থিক উন্নতি হওয়ার কথা বললেন জেলা হর্টিকালচারের উপপরিচালক আমজাদ হোসেন। তিনি তথ্য দিয়ে বললেন, সাতক্ষীরার মাটি ও আবহাওয়ায় এই লেবু উৎপাদনে সম্ভাবনা রয়েছে।
কৃষি উদ্যোক্তা সদর উপজেলার লাবসা ইউনিয়নে মথুরাপুর গ্রামের কৃষক লিয়াকত হোসেন বলেন, তিনি দেড় বিঘা জমিতে এক হাজার বিচি ছাড়া চীনা লেবুর চারা (কলম) রোপণ করেন দুই বছর আগে। দেড় বছর পর সব গাছে ফলন এসেছে। প্রতিটি গাছে ভালোই ফলন হয়েছে।
কৃষক লিয়াকত হোসেন আরও বলেন, গত ৫-৬ ছয় মাসে প্রায় এক লাখ টাকার লেবু বিক্রি হয় তার। বাগানের গাছে এখন যথেষ্ট লেবু রয়েছে। প্রতিশ’ লেবু ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা দরে পাইকারি বিক্রি করছেন। ব্যবসায়ীরা ক্ষেত থেকে পাইকারি নিয়ে যান, আবার কখনও তিনি নিজেই বাজারে বিক্রি করেন। এই লেবু রপ্তানি করতে পারলে প্রান্তিক কৃষক লাভবান হবেন। এ জাতের লেবুর চারা কীভাবে সংগ্রহ করেছেনÑজানতে চাইলে তিনি বলেন, উত্তরবঙ্গ থেকে কলমের চারা এনে রোপণ করেছিলেন। এতে চারা রোপণ ও সেচ এবং পরিচর্যা ছাড়া অন্য কোনো খরচ নেই।
পার্শ্ববর্তী নলকুড়া গ্রামের কৃষক মনোয়ার হোসেন তার দুই বিঘা জমিতে বিচি ছাড়া চীনা লেবু বাগান করেছে। বাগান ছাড়াও বসতবাড়ির চারপাশে লেবুর চারা রোপণ করেছেন। বাগান ও বাড়িতে মোট দেড় হাজার চারা রোপণ করেছেন গত আড়াই বছর আগে। এই বছরের প্রথম দিকে লেবু উত্তোলন শুরু করেছেন। তিনি জানান, এক-দু’দিন পরপর লেবু উত্তোলন করে বাজারে বিক্রি করেন। স্থানীয় ব্যবসায়ী ছাড়াও ঢাকার পাইকাররা তার লেবু কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। প্রতিটি লেবু ৪-৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে গরম কমে যাওয়ায় হঠাৎ দাম একটু কমে গেছে।
এই দুজন কৃষককে অনুসরণ করে কৃষক খোকন হোসেন অন্য ফসলের সঙ্গে এক হাজার এই জাতের লেবু চারা রোপণ করেন। দুই থেকে তিন মাস লেুব বিক্রি করছেন তিনি। তিনি বলেন, বিচি ছাড়া চীনা লেবুর ফলন খুবই ভালো। রপ্তানি করা যেতে পারলে কৃষকরা ভালো লাভবান হতে পারবেন। কৃষকরা সরকারি উদ্যোগের আহŸান জানিয়েছেন।
সাতক্ষীরা হর্টিকালচারের উপপরিচালক আমজাদ হোসেন জানান, সাতক্ষীরার মাটি ও আবহাওয়া উপযোগী হওয়ায় বিচি ছাড়া চীনা লেবু উৎপাদনে সম্ভাবনাময়। তাছাড়া এ জাতের লেবু বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হয়ে থাকে। ইতোমধ্যে কয়েকটি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা বলেছি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণের উপপরিচালক মো. সাইফুল ইসলাম জানান, সব ধরনের লেবু চাষে খুবই সম্ভাবনাময় সাতক্ষীরা জেলার মাটি। এখানে বিচি ছাড়া চীনা লেবু, মাল্টা, কমলা, কাগুজি ও বাতাবি লেবু চাষ হয়। তবে বিগত তিন-চার বছর জেলায় চীনা লেবু চাষ করা হচ্ছে। এটি অধিক ফলনশীল ও লাভজনক একটি ফসল। ইতোমধ্যে কৃষকদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এ জাতের লেবু উৎপাদনে। তিনি বলেন, এটি একক বা সাথি ফসল হিসেবেও চাষ করে করে লাভবান হতে পারেন কৃষক। জেলায় বিচি ছাড়া চীনা লেবু, মাল্টা, কমলা ও কাগুজি লেবু চাষ হয়েছে ২১০ হেক্টর পরিমাণ। আগামীতে এর চাষ বাড়বে বলে আশা করছি।