সৈয়দ মহিউদ্দীন হাশেমী, সাতক্ষীরা: ২৮ ফেব্রুয়ারি সারাদেশে আমন সংগ্রহ অভিযান শেষ হয়েছে। এ অভিযানে সাতক্ষীরা থেকে আমন সংগ্রহ করা হয়নি। অন্যদিকে মিল মালিকদের কাছ থেকে চাল কেনার সরকারি লক্ষ্যমাত্রা ব্যর্থ হতে চলেছে।
জেলা খাদ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, জেলায় তিন হাজার ৪৪১ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহের চুক্তি হয়। কিন্তু চুক্তি অনুযায়ী সংগ্রহ হয়েছে মাত্র দুই হাজার ৫৭৭ মেট্রিক টন।
জেলার সাত উপজেলায় এক কেজি ধানও সংগ্রহ হয়নি। ফলে খাদ্যগুদামগুলো খালি থাকার আশঙ্কা করা হচ্ছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকার খাদ্যশস্য সংগ্রহ অভিযান ১৫ মার্চ পর্যন্ত বাড়িয়েছে।
জেলা খাদ্য কর্মকর্তার দপ্তর জানিয়েছে, সাত উপজেলায় ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা ছিল সাড়ে তিন মেট্রিক টন, সেখানে এক কেজিও ধান কিনতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। অন্যদিকে চাল কেনার চুক্তি হয়েছিল তিন হাজার ৪৪১ মেট্রিক টন। এর বিপরীতে কেনা হয়েছে দুই হাজার ৫৭৭ মেট্রিক টন।
আরও জানা যায়, এবার আমন মৌসুমে চাল সংগ্রহের জন্য জেলার মিল মালিকদের সঙ্গে চুক্তি করে খাদ্য বিভাগ। কিন্তু খাদ্য বিভাগের নিবন্ধিত অটোরাইস মিলসহ হাসকিং মিলার মালিক ৩৪০ জন থাকলেও চুক্তি করেছেন ২৫৭ জন। উপরন্তু চুক্তিবদ্ধ চালকল মালিকরা চুক্তি অনুযায়ী চাল সরবরাহ করেননি।
উল্লেখ্য, গত বোরো মৌসুমেও সাতক্ষীরা জেলায় ধান-চাল কেনার অভিযান ব্যর্থ হয়। ওই মৌসুমে খাদ্য বিভাগ ঘোষণা দিয়েছিল, যেসব চুক্তিবদ্ধ মিলার চুক্তি অনুসারে চাল দেয়নি তাদের আর্নেস্ট মানি বাজেয়াপ্তসহ চুক্তি বাতিল করা হবে। পাশাপাশি নতুন করে আর চুক্তি করা হবে না বলেও জানানো হয়েছিল। সে অনুযায়ী জেলার খাদ্য বিভাগ ১৬ মিলারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়।
এবার আমন মৌসুমে খাদ্য বিভাগের নির্ধারিত দামের চেয়ে বাজারে ধানের দাম বেশি হওয়ায় কৃষকরা ধান বিক্রি করতে রাজি হননি। তার ওপর খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের দুর্নীতি ও ঘুষ বাণিজ্য এবং হয়রানির কারণে কৃষকরা ধান বিক্রি করতে অনীহা প্রকাশ করেন। ফলে খাদ্যশস্য সংগ্রহ অভিযানে এ সংকট সৃষ্টি হয়েছে।
জেলা খাদ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সাতক্ষীরায় এবার উপজেলাওয়ারি চাল কেনার চুক্তি হয়েছিল সাতক্ষীরা সদর উপজেলায় এক হাজার ৭৭৩ মেট্রিক টন। বিপরীতে কেনা হয়েছে এক হাজার ৩৩২ মেট্রিক টন চাল। তালা উপজেলায় এক হাজার ৪১ মেট্রিক টন, বিপরীতে কেনা হয়েছে ৭৯৫ মেট্রিক টন।
আশাশুনি উপজেলায় ৩৩ মেট্রিক টনের বিপরীতে এক কেজিও চাল কিনতে পারেনি আশাশুনি উপজেলা খাদ্য বিভাগ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন খাদ্য কর্মকর্তা জানান, উপজেলার খাদ্য বিভাগের গুদাম ও উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তারা এক কেজিও ধান ও চাল কিনতে পারেননি। এজন্য তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া উচিত।
কলারোয়া উপজেলায় ২০৩ মেট্রিক টনের বিপরীতে কেনা হয়েছে ১১১ মেট্রিক টন চাল। দেবহাটা উপজেলায় ১৭৩ মেট্রিক টন কেনার লক্ষ্যমাত্রা ছিল, অথচ কেনা হয়েছে ১৩৮ মেট্রিক টন। কালিগঞ্জ উপজেলায় ১৮২ মেট্রিক টনের বিপরীতে কেনা হয়েছে ১৬২ মেট্রিক টন চাল। শ্যামনগর উপজেলায় ৩৭ মেট্রিক টন কেনার লক্ষ্যমাত্রা ছিল, যার পুরোটাই কেনা হয়েছে।
অপরদিকে সাতক্ষীরা থেকে আতপ চাল কেনার চুক্তি হয়েছিল ৩০০ মেট্রিক টন। এর বিপরীতে কেনা হয়েছে মাত্র ১০ মেট্রিক টন চাল।
সদর উপজেলা চালকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান বলেন, সদর উপজেলায় খাদ্য বিভাগের সঙ্গে যে চুক্তি হয়েছে তার পূরণ করার চেষ্টা করছি। তিনি বলেন এক কেজি ধানের দাম ৩১ টাকা। এক কেজি ধানে চাল হয় ৬৫০ গ্রাম। সে হিসেবে এক কেজি চালের দাম হয় ৪৭ টাকা। সেখানে সরকারিভাবে দাম দেয়া হচ্ছে ৩৭ টাকা। কেজিপ্রতি ৯ থেকে ১০ টাকা ভর্তুকি দিয়ে আমাদের চাল সরবরাহ করতে হচ্ছে। এ কারণে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত।
সাতক্ষীরা জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক শেখ মো. জাহেদুল ইসলাম বলেন, চাল সংগ্রহের জন্য মিলারদের সঙ্গে যে চুক্তি হয়েছে সেটা অর্জন কষ্টসাধ্য হলেও এই বাড়তি সময়টুকু কাজে লাগাতে চাই। কৃষকদের কাছ থেকে ধান সংগ্রহ অভিযান ব্যর্থ হয়েছে বলে স্বীকার করেন তিনি। তিনি বলেন, বিক্রির জন্য কৃষকের ঘরে ধানের মজুত নেই। অনেক মিলার ধানের অভাবে তাদের মিলে চাল উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছেন।