সৈয়দ মহিউদ্দীন হাশেমী, সাতক্ষীরা: সাতক্ষীরায় এখন বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে ‘বারি-১’ জাতের সবুজ মাল্টা। এ বছর জেলায় ৬১ হেক্টর জমিতে মাল্টার আবাদ হয়েছে। তবে সবুজ মাল্টা চাষে সফল সাতক্ষীরার চাষি নুরুল আমিন। প্রায় ২০ বিঘা জমিতে তিনি মাল্টা চাষ শুরু করেন। একজন সফল চাষি হিসেবে মাল্টা চাষে তিনি পেয়েছেন অভাবনীয় সাফল্য। তার চাষ কৌশল দেখতে বিভিন্ন জায়গার সাধারণ কৃষক প্রতিনিয়তই ভিড় জমাচ্ছেন তার মাল্টা বাগানে।
জানা যায়, সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার বাহদুরপুরে তিন বছর আগে ২০ বিঘা জমিতে সাড়ে তিন হাজার মালটা গাছের চারা রোপণ করে মাল্টা চাষ শুরু করেন নুরুল আমিন। মাল্টা সাইট্রাস পরিবারভুক্ত একটি বিদেশি ফল। কমলালেবুর তুলনায় এর অভিযোজন ক্ষমতা বেশি। মাল্টা পাহাড়ি ফল হিসেবে পরিচিত হলেও সমতল ভূমিতে রয়েছে এ ফলের ব্যাপক সম্ভাবনা। তবে হালকা লবণাক্ত মাটিতে এর মিষ্টতা ও ফলন ভালো হয়। তেমনি একজন সফল চাষি সাতক্ষীরার নুরুল আমিন। কৃষিতে বরাবরের মতোই সফল চাষি হিসেবে স্বীকৃতিস্বরূপ গ্রহণ করেছেন ২০০৫ ও ২০১০ সালে প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক বৃক্ষরোপণে জাতীয় পুরস্কার।
সাতক্ষীরার দি হাইব্রিড নার্সারির মালিক নুরুল আমিন তিন যুগেরও বেশি সময় ধরে নিজেকে ব্যস্ত রেখেছেন কৃষির সঙ্গে। সফল চাষি হিসেবে মাল্টা চাষ করে তিনি পেয়েছেন অভাবনীয় সাফল্য। তিনি জানান, সাধারণত দুই থেকে তিন বছরেই মাল্টা গাছে পরিপূর্ণ ফল আসে, যা নুরুল আমিনের মাল্টা বাগান দেখলেই বোঝা যায়। তার বাগানের মাল্টার আকার ও রং বেশ সুন্দর; স্বাদও চমৎকার।
নুরুল আমিনের এ সাফল্যে সাতক্ষীরায় মাল্টা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন নতুন নতুন উদ্যোক্তা। নুরুল আমিন শেয়ার বিজকে বলেন, এ অঞ্চলে চাষোপযোগী জাতের মধ্যে ‘বারি মাল্টা-১’ অন্যতম। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত এ জাতটি উচ্চফলনশীল। গাছের ডালপালা ছড়ানো ও ঝোপানো থাকে। মার্চ-এপ্রিল মাসে ফুল আসে। সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে ফল পাকে। তিনি তার বাগান থেকে প্রতিদিন পাইকারি দরে কেজিপ্রতি মাল্টা বিক্রি করছেন ৭০ থেকে ৮০ টাকায়। তিনি জানান, মাল্টা চাষের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ কৃষি অফিস ও ইউটিউব থেকে পেয়েছেন। কৃষি কর্মকর্তারা নিয়মিত তাকে পরামর্শ দিচ্ছেন।
তিনি বলেন, মাল্টা চাষ অন্য যেকোনো ফসলের চেয়ে সহজ। যেকোনো ধরনের মাটিতেই মাল্টা চাষ করা সম্ভব। ৮-১০ ফুট দূরত্বে চারাগাছ রোপণ করতে হয়। মে থেকে অগাস্ট মাস মাল্টা গাছের চারা/কলম লাগানোর উত্তম সময়। বীজ ও অঙ্গজ উভয় পদ্ধতিতে মাল্টার বংশবিস্তার হয়। তবে মাতৃগুণ বজায় রাখা, দ্রুত ফল ধরা, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো এবং অধিক ফলন পেতে অঙ্গজ পদ্ধতির পরামর্শ দেন তিনি।
তিনি আরও জানান, মাত্র ৫০-১০০ টাকায় চারা পাওয়া যায়। তিনি নিজেও চারা বিক্রি করছেন। তার বাগানের সব গাছের ডালে কলম করে চারা তৈরি করছেন। অনেকেই তার কাছ থেকে চারা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।
তিনি জানান, মাল্টা চাষে বিঘাপ্রতি খরচ বাদে এক লাখ টাকা লাভ করা খুব কঠিন নয়। মাল্টার নতুন বাগান সৃষ্টি ও উৎপাদনে সাতক্ষীরায় নতুন উদ্যোক্তা যেমন সৃষ্টি হচ্ছে, তেমনি চাষিরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। আগামীতে আমের মতো মাল্টা চাষেও সাতক্ষীরা সাফল্য অর্জন করবে বলে তিনি বিশ্বাস করেন।
এ বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খামার বাড়ির উপপরিচালক নূরুল ইসলাম শেয়ার বিজকে জানান, বারি মাল্টা-১ চাষ সম্প্রসারণে চাষিদের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। এটি লাভজনক। প্রতি বিঘা জমিতে ১০০ থেকে ১২০টি মাল্টা চারা রোপণ করে একটানা ২০ বছর ফল সংগ্রহ করা যায়। সাতক্ষীরা জেলার মাটি ও আবহাওয়া একটু লবণাক্ত হওয়ায় এ অঞ্চলের মাল্টা খুবই সুমিষ্ট। তিনি জানান, এ বছর সাতক্ষীরায় ৬১ হেক্টর জমিতে মাল্টার আবাদ হয়েছে। আগামীতে আমের মতো মাল্টা চাষেও সাতক্ষীরা জেলার চাষিরা সুনাম অর্জন করবেন।