সাতক্ষীরায় মৌসুম শুরুর আগেই মুকুলে ছেয়ে গেছে আমবাগান

সৈয়দ মহিউদ্দীন হাশেমী, সাতক্ষীরাঃ ঋতুরাজ বসন্তের আগমনের শুরুতেই মধুমাসের আগমনী বার্তা সাতক্ষীরা জেলার সর্বত্র। ফলের রাজা আমের মুকুল ফুটেছে গাছে গাছে, প্রতিটি ডালে শোভা পাচ্ছে সোনালি মুকুল। বসন্তের আগমনে আমগাছের শাখাগুলো ভরে গেছে উজ্জ্বল সোনালি মুকুলে, যেন আকাশের বুকে ডানা মেলে দিয়েছে গাছগুলো। আর এতে উদীপ্ত হয়ে উঠেছেন আমচাষিরাও।

আমচাষি ও বাগান মালিকরা বলছেন, মাঘের মাঝামাঝিতে গাছে মুকুল দেখে বাগানের যতœ নিতে কঠোর পরিশ্রম শুরু করে দিয়েছেন তারা। এবার নির্ধারিত সময়ের আগেই আবহাওয়াগত ও জাতের কারণেই মূলত আমের মুকুল আসতে শুরু করেছে বলে তারা জানান।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলায় এখন জনতার পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন আমচাষে সংশ্লিষ্টরা। সাতক্ষীরার সুপরিচিত পণ্যের মধ্যে আম অন্যতম। স্বাদ ও গন্ধের  কারণে দেশের সীমানা ছাড়িয়ে বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে এ জেলার আম। এজন্য বাণিজ্যিকভাবে গড়ে উঠেছে অনেক আমবাগান। এর ফলে প্রায় আট বছর ধরে এ জেলার আম ইউরোপের বিভিন্ন দেশেও রপ্তানি শুরু হয়েছে। ফলে বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদও বেড়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এবার মধ্য মাঘে আমের আগাম মুকুল আমচাষিদের মধ্যে আশা জাগিয়ে তুলেছে। এ অঞ্চলে প্রসিদ্ধ গোপালভোগ, গোবিন্দভোগ, হিমসাগর, ল্যাংড়া, আম্রপলিসহ অসংখ্য জাতের আম উৎপাদিত হয়। সেজন্য বাগান মালিক ও আমচাষিরা মাঘের শুরু থেকেই বাগান পরিচর্যা শুরু করেছেন।

সাতক্ষীরা সদরের দহাকুলা গ্রামের জনতার মালিক কওছার আলী জানান, এ বছর আবহাওয়া অনুক‚লে থাকায় আম গাছে আগাম মুকুল এসেছে। তিনি বলেন, কৃষি বিভাগের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের পরামর্শ গ্রহণ করছি। কর্মকর্তারা বাগানে এসে আমের ভালো ফলন পাওয়ার জন্য বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ প্রদান করছেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, সাতক্ষীরা জেলায় চার হাজার ১১৫ হেক্টর জমিতে এবার ৪০ হাজার মেট্রিক টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি বিভাগ। পাঁচ হাজার ২৯৯টি বাগানে প্রায় ১৩ হাজার ১০০ আমচাষি রাতদিন পরিচর্যা করে আম উৎপাদনের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন। এবার সাতক্ষীরা সদরে এক হাজার ২৩৫ হেক্টর, তালা উপজেলায় ৭১৫ হেক্টর, কলারোয়ায় ৬৫০ হেক্টর, কালীগঞ্জে ৮২৫ হেক্টর, দেবহাটায় ৩৮০ হেক্টর, আশাশুনিতে ১৪৫ হেক্টর ও শ্যামনগরে ১৬৫ হেক্টর জমির বাগানে আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে জেলা কৃষি বিভাগ।

সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. নুরুল ইসলাম বলেন, তিনটি পর্যায়ে আমের মুকুল আসে। আবহাওয়া অনুক‚লে থাকলে আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত সব গাছ মুকুলে ভরে যাবে। জেলায় গত বছর আম্পানের কারণে ব্যাপকভাবে আমের ক্ষতি হয়েছে। এবার সে ক্ষতি পুষিয়ে যাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট আমচাষিরা।

তিনি বলেন, আম চাষের জেলা রাজশাহী হলেও সুস্বাদু আমের জন্য সাতক্ষীরার সুনাম দেশের সীমানা ছাড়িয়ে বিদেশেও ছড়িয়ে পড়েছে। এখানকার মাটি ও আবহাওয়ার গুণেই গোবিন্দভোগ, হিমসাগর, গোপালভোগ, লেংড়া, বোম্বাই, আম্রপালিসহ বিভিন্ন জাতের আম খুবই সুস্বাদু। দেশব্যাপী সাতক্ষীরার আমের চাহিদা থাকায় নতুন নতুন উদ্যোক্তা উন্নত জাতের আমের বাগান তৈরিতে আগ্রহী হয়ে উঠছেন।

তিনি আরও বলেন, নিয়মিত যতœ নিলে আমের অফ ইয়ার বলে কিছু থাকে না। জেলায় এ বছর ১১০ হেক্টর জমিতে রপ্তানিযোগ্য বিষমুক্ত নিরাপদ আম চাষের ব্যবস্থা গ্রহণ করা   হয়েছে। উৎপাদিত আম সরাসরি বাগান থেকে প্যাকেটে করে ইউরোপে যাবে বলেও জানান তিনি।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০