সাতক্ষীরায় ৭৯ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ

 

 

প্রতিনিধি, সাতক্ষীরা: উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরায় এবার চলতি বোরো মৌসুমে ৭৯ হাজার ৮২০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। হেক্টর প্রতি হাইব্রিড ও উফশী ৪.২২ মেট্রিক টন ফলনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি সম্প্র্রসারণ অধিদপ্তর। কৃষিপ্রধান বাংলাদেশের কৃষকদের জন্য বোরো ধানের চারা রোপণের গুরুত্বপূর্ণ সময় শীতকাল। এজন্য শীতের বৈরিতা উপেক্ষা করে সাতক্ষীরা জেলার বিস্তীর্ণ এলাকায় এবার চাষ হচ্ছে বোরো আবাদ।

চলতি বোরো মৌসুমে জেলায় প্রায় চার লাখ কৃষক বিভিন্ন জাতের ধানের চারা রোপণ করছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য উফশী জাতের ৬৩, ৬৭, ৭৪, ৮১, ৮৮, ৮৯ ও ৯২ এবং হাইব্রিড, এসএল ৮, হিরা-২, তেজগোল্ড, ইস্পাহানি ৮ ও শক্তিসহ দেশি হাইব্রিড ২৮ জাতের ধান। চারা রোপণে পর কৃষকরা এখন কৃষকরা ব্যস্ত সেচ ও সার কীটনাশক প্রয়োগে।

সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (খামরবাড়ি) তথ্যমতে, চলতি বোরো মৌসুমে জেলায় হেক্টর প্রতি হাইব্রিড ও উফশী ৪.২২ মেট্রিক টন ফলনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে জেলায় ৭৯ হাজার ৮২০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

এর মধ্যে সাতক্ষীরা সদর উপজেলায় ২৩ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে ৯৬  হাজার ৭৫৮ মেট্রিক টন, কলারোয়া উপজেলায় ১২ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে ৫২ হাজার ২৪৬ মেট্রিক টন, তালা উপজেলায় ২০ হাজার ২৬০ হেক্টর জমিতে ৮৫ হাজার ৭০৫ মেট্রিক টন, দেবহাটা উপজেলায় ৬ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে ২৬ হাজার ৮৪৬ মেট্রিক টন, কালিগঞ্জ উপজেলায় ৬ হাজার ৮৮০ হেক্টর জমিতে ২৮ হাজার ৫২৮ মেট্রিক টন, আশাশুনি উপজেলায় ৮ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে ৩৬ হাজার ২৩১ মেট্রিক টন ও শ্যামনগর উপজেলায় ২ হাজার ৪৩০ হেক্টর জমিতে ১০ হাজার ৪৫৭ মেট্রিক টন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। চলতি মৌসুমে বিঘা প্রতি ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা খরচে ২২ থেকে ২৪ মণ ধান পাবে বলে আশা করছে সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও কৃষকরা।

এদিকে, চলতি বোরো মৌসুমে সরকারের প্রণোদনার দুটি প্যাকেজে জেলার প্রায় ৪ লাখ কৃষকের মধ্যে উফশীতে ২০ হাজার ও হাইব্রিডে ১৪ হাজার কৃষকের বিনামূল্যে বীজ ও সার বিতরণ করা হয়েছে। এর মধ্যে কৃষক প্রতি উফশীতে ৫ কেজি বীজ ও সার এবং হাইব্রিডে ২ কেজি বীজ বিতরণ করা হয়েছে।

সরেজমিনে জেলার কয়েকটি উপজেলার এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, জেলার প্রায় চার লক্ষাধিক কৃষক সরাসরি কৃষি কাজের সঙ্গে জড়িত। ভরা মৌসুমে জেলার কৃষকরা মাঠে বোরো আবাদে ব্যস্ত। একানকার কৃষকরা কৃষি কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। জেলায় ৭৯ হাজার ৮২০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা জমিতে বোরো চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্র নির্ধারণ করা হলেও ধানের মূল্য বেশি হওয়ায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ৫০০ হেক্টরের বেশি জমিতে এবার বোরো চাষা হচ্ছে। চলতি মৌসুমে জলাবদ্ধতা না থাকায় উপজেলার সর্বত্রই লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে বোরো চাষ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

তালা উপজেলার নগরঘাটা গ্রামের কৃষক আমিরুল ইসলা, আজিজুর রহমান জামাল মোড়ল জানান, চলতি মৌসুমে বৃষ্টি কম হওয়ায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়নি। এবার কোনো জমি অনাবাদি থাকবে না। সরকার বিনামূল্যে আমাদের সার বীজ দিয়েছে। যদি বড় কোনো ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হয়, আবহাওয়া ভালো থাকে, ধানের রোগবালাই কম থাকে তাহলে সাতক্ষীরায় বোরো ধানের বাম্পার ফলন হবে।

সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (খামারবাড়ি)  উপপরিচালক সাইফুল ইসলাম বলেন, প্রতি বছরের মতো এবারও সরকার কৃষকদের বিনামূল্যে সার, বীজ সরবরাহ করেছে। সাতক্ষীরার কোনো উপজেলায় অতিবৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়নি। দুর্যোগপ্রবণ এলাকায়, নিচু আবাদি জমি পানিতে তলিয়ে না থাকার কারণে বোরো ধান চাষ করা সম্ভব হচ্ছে। গত কয়েক বছরে বোরো চাষের ভরা মৌসুমেও নিচু জমি পানিতে তলিয়ে থাকে। ফলে জলাবদ্ধতায় আবাদি জমি অনাবাদি থেকে যায়। কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই মৌসুমে প্রাকৃতিক দুর্যোগে জলাবদ্ধতা না থাকায় কৃষকরা ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে বোরো চাষের ওপর জোর দিয়েছে।

তিনি আরও বলেন, জেলায় প্রায় ৮০ হাজার হেক্টর জমিতে এবার বোরো আবাদে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৩ লাখ ৩৬ হাজার ৭৭১ মেট্রিক টন ধান/চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। বড় ধরনের প্রাকৃতি দুর্যোগ না হলে চলতি এবার গত মৌসুমের চেয়ে চলতি মৌসুমে কৃষকরা লাভবান হবে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০