সাতক্ষীরায় খোলপেটুয়া নদীর বেড়িবাঁধ ভাঙ্গনের ৪ দিনেও মেরামত হয়নি

সৈয়দ মহিউদ্দীন হাশেমী, সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের দুর্গাবাটি এলাকায় গত বৃহস্পতিবার (১৪ জুলাই) রাতে খোলপেটুয়া নদীর বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হওয়ার ৪ দিন পার হলেও রিংবাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু হয়নি।
এতে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে ১৩টি গ্রামের প্রায় ২৫ হাজার মানুষ।এখানকার মানুষের বাড়ির উঠানে চলছে জোয়ার-ভাটা। নিরাপদ পানি ও খাদ্যের অভাব দেখা দিয়েছে, সেই সাথে পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় বিপাকে পড়েছেন নারীরা। ফলে চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে পড়েছেন পানিবন্দী এলাকার হাজারো মানুষ।

স্থানীয়রা জানান, প্রতি বছর বেড়িবাঁধ ভেঙে গ্রামের পর গ্রাম প্লাবিত হয়, আর প্রতি বছরই তারা পায় আশার বাণী। কিন্তু ভাগ্যের চাকা ঘোরে না এই উপকূলের মানুষগুলোর। তারা বলেন, গত ১৪ জুলাই রাত ১১টার দিকে প্রবল জোয়ারের চাপে শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের পশ্চিম দুর্গাবাটির প্রায় দেড়শ ফুট জরাজীর্ন বেড়িবাঁধ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায় এবং প্রবল বেগে নদীর পানি লোকালয়ে প্রবেশ করতে থাকে । এতে বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের পূর্ব দুর্গাবাটি, পশ্চিম দুর্গাবাটি, পূর্ব পোড়াকাঠলা, পশ্চিম পোড়াকাঠলা, আড়ঙ্গাশিয়া, করবাড়ি, দাতিনাখালি, ভামিয়া, মাদিয়া ও নীল ডুমুর গ্রাম প্লাবিত হয়। তবে দ্রুত বাঁধটি মেরামত করা সম্ভব না হলে নতুনকরে পার্শ্ববর্তী আটুলিয়া ইউনিয়নের একাধিক গ্রামও প্লাবিত হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তারা।বর্তমানে কলাগাছের ভেলা এবং নৌকা দিয়ে বাড়িতে যাতায়াত করছেন অনেকেই। তাছাড়া ভেসে গেছে কয়েক হাজার হেক্টর জমির চিংড়ি ঘের ও
দুই শতাধিক কাঁকড়ার ছোট বড় প্রজেক্ট।
চলাচলের রাস্তা ডুবে যাওয়া,বাড়িঘরে পানি ওঠায় রান্না করতে না পারায় কোনরকম শুকনো খাবার খেয়ে দিন পার করছে এলাকার হাজারো মানুষ।এদিকে জোয়ার-ভাটার সাথে সাথে লোকালয়ে জোয়ারের পানি ওঠানামা অব্যাহত থাকায় ভাঙন কবলিত অংশে গভীর খাদের সৃষ্টিসহ ভাঙনের বিস্তৃতি দিনকে দিন বৃদ্ধির পাচ্ছে।

দুর্গাবাটি গ্রামের বাসিন্দা আসাদুল ইসলাম জানান, খোলপেটুয়া নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ায় চারিদিক পানিতে ডুবে আছে। ভেলায় করে চলাফেরা করতে হয়। চারিদিকে পানি থাকলেও কোথাও খাওয়ার পানি নেই। গোসল করতে হচ্ছে নোংরা ও লবণাক্ত পানিতে। যেই পানিতে পায়খানা প্রসাব আবার সেই পানিতেই গোসল করতে হচ্ছে। তবে দ্রুততম সময়ের মধ্যে বাঁধ মেরামত সম্ভব না হলে বদ্ধ পানির মধ্যে থাকার কারণে জ্বর, কাশি, সর্দি, ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলেও জানান তিনি।

বুড়িগোয়ালিনী ইউপি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম জানান, প্রবল জোয়ারের চাপে ইউনিয়নের পশ্চিম দুর্গাবাটির প্রায় দেড়শ ফুট জরাজীর্ন বেড়িবাঁধ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করায় এখনও পর্যন্ত প্রায় ২৫হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। সেই সঙ্গে দুর্গত এলাকায় খাবার পানির সংকট দেখা দিয়েছে।তিনি আরো জানান আজ জোয়ারের পানি গতকালের চেয়ে অনেক বেশি। ফলে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা করছি। তবে এলাকার মানুষ স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধটি সংস্কারের চেষ্টা অব্যহত রেখেছে।

এব্যাপারে সাতক্ষীরা পাউবোর বিভাগ-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবুল খায়ের জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে বস্তা, দড়ি, বাঁশ ও পেরেকসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সরবরাহ করা হয়েছে। প্রায় ৬০০ ফুট এলাকায় পাইলিং করার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। তবে বর্তমানে তীব্র জোয়ারের কারণে কাজ করা যাচ্ছে না।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০