শখ করে রঙিন মাছের চাষ শুরু করেন সাইফুল ইসলাম। সেই শখ পাল্টে দিয়েছে তার জীবন ও জীবিকা। পেয়েছে দেশজুড়ে খ্যাতি। এখন তাকে অনেকেই চেনেন ‘রঙিন মাছের কারিগর’ হিসেবে।
গল্প নয়, সত্যি। বলছিলাম সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার ব্রজবক্স গ্রামের সাইফুল ইসলামের কথা। রঙিন মাছ চাষ করে পাল্টে গেছে তার জীবন। সাইফুল জানান, সংসারে অভাব ছিল নিত্যসঙ্গী, তবে শখ তার পিছু ছাড়েনি। নানা সংকটের মাঝে তিনি রঙিন মাছ চাষ করেন। ২০০৪ সালে এক বন্ধুর সহায়তায় প্রথমে ছয় জোড়া রঙিন মাছ ৬২০ টাকায় কিনে এই মাছ চাষ শুরু করেন। পরে একটি বেসরকারি সংস্থা থেকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে পুকুর ইজারা নেন, বাড়ান রঙিন মাছ চাষের পরিধি। আজ তার মূলধন প্রায় ২৫ লাখ টাকা।
একসময় তার আর্থিক অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। অভাবের কারণে ভারতে গিয়েছিলেন কাজের সন্ধানে। সেখানে একটি রঙিন মাছ উৎপদনকারী প্রতিষ্ঠানে খুব কম বেতনে চাকরি শুরু করেন। বিদেশে ভালো না লাগায় কিছু দিন পর দেশে ফিরে আসেন। সংসার চালাতে রাজধানীর মিরপুরে একটি তৈরি পোশাক কারখানায় কাজ শুরু করেন। কিন্তু ওই বেতনে বাসাভাড়া দেওয়ার পর সংসার চলত না। ফিরে আসেন গ্রামে। এক
বন্ধুর সহায়তায় প্রথমে তিনি ছয় জোড়া রঙিন মাছ নিয়ে চাষ শুরু করেন। এভাবেই ধীরে ধীরে আজ তিনি বড় জায়গায় এসে পৌঁছেছেন।
২০১৪ সালে পুকুর ইজারা নিয়ে বেশি করে রঙিন মাছ চাষ শুরু করেন। বিশেষ পদ্ধতিতে উৎপাদন করা কমেট, কই কার্প, গোল্ড ফিস, অরেন্ডা, মিল্কি, সিল্কি কই কার্প, কিচিং গোরামিনসহ ২০ থেকে ২৫ প্রজাতির রঙিন মাছ তার পুকুরে উৎপাদিত হচ্ছে। এই মাছ তিনি রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করেন।
বিশেষ পদ্ধতিতে মাছের রং পরিবর্তনও করার কথাও উল্লেখ করেছেন সাইফুল ইসলাম। রং বদলে সিল্কি নামের একটি মাছ তৈরি করেছেন তিনি। অনেকটা জরির মতো দেখতে। সে জন্যই নাম দিয়েছেন সিল্কি। রং পরিবর্তন করা এ মাছের বেশ চাহিদা রয়েছে।
বর্তমানে ১৬টি পুকুর ইজারা নিয়ে তিনি রঙিন মাছ চাষ করছেন। প্রতিটি মাছ সর্বনি¤œ ১২ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১২০ টাকায় বিক্রি করেন। এই ব্যবসা ঘিরেই বড় ছেলের নামে ‘রেজা অ্যাকুরিয়াম ফিস’ নামে একটি আলাদা প্রতিষ্ঠানও চালু করেছেন। সাইফুল এক সময় অন্যের শ্রমিক ছিলেন। এখন তার প্রতিষ্ঠানে ২৫ জন শ্রমিক কাজ করছেন।
উৎপাদন বাড়িয়ে রঙিন মাছের অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটানো সম্ভব। সহজ শর্তে ব্যাংক ঋণ পেলে আরও অনেকে এ ব্যবসায় আগ্রহী হবেন। সরকারি সহযোগিতা পেলে ব্যাপকভাবে রঙিন মাছ চাষ করে রফতানি করা সম্ভব হবে। তার মতো অনেকেই এখন রঙিন মাছ চাষ শুরু করেছেন।
সাইফুলের স্ত্রী জেসমিন সুলতানা জানান, ২০০৪ সালে স্বামীর সঙ্গে মাছ চাষে সহযোগিতা করে আসছেন। তাদের উৎপাদন করা মাছ রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যাচ্ছে। সাতক্ষীরা শহরের সুলতানপুর এলাকার অ্যাকুয়ামিয়ামে রঙিন মাছ সংগ্রহকারী মুবাশ্বের হোসেন জানান, এই খাতে দেশ ধীরে ধীরে স্বয়ংসম্পূর্ণ হচ্ছে। শহরের সুলতানপুর বড়বাজারের নাহার এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী আজমল হক জানান, সাইফুল ইসলাম রঙিন মাছ উৎপাদন করার পর থেকে এই মাছ এখন খুব একটা আমদানি করতে হচ্ছে না। তার মাছ টেকসই ও প্রতিকূল আবহাওয়ায় অনেক সময় টিকে থাকে।
ফারুক রহমান