মেহেদী হাসান: আবারও বড় ধাক্কা খেল বাংলাদেশের প্রবাসী আয়। দেশের বাইরে থাকা বাংলাদেশিরা গত সাত বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন আয় পাঠিয়েছেন গত সেপ্টেম্বর মাসে। ফলে প্রবাসী আয় সংগ্রহ নিয়ে যে নিম্নগতি তৈরি হয়েছিল, তা কয়েকগুণ বাড়ল।
সদ্য সমাপ্ত সেপ্টেম্বরে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে মাত্র ৮৫ কোটি ৩৭ লাখ ডলার, যা এর আগের মাসের তুলনায় ৪০ শতাংশ কম এবং একক মাস হিসেবে গত সাত বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। আগস্টে ১৪১ কোটি ৮৫ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত সাত বছরের মধ্যে একক মাসে সর্বনিম্ন রেমিট্যান্স এসেছিল ২০১০-১১ অর্থবছরে। সে বছর সেপ্টেম্বরে ৮৩ কোটি ৭০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স আসে।
ব্যাংকিং খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দরপতনের কারণে সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব এবং কুয়েতের মতো উপসাগরীয় দেশগুলোর অর্থনীতি ক্ষতির মুখে পড়েছে। ফলে ওই সব দেশে অবস্থানরত প্রবাসীদের বেতন ও মজুরি কমে গেছে। তবে জ্বালানি তেলের দাম কমার পাশাপাশি রেমিট্যান্স কমার পেছনে ডলারের সঙ্গে বেশ কিছু দেশের স্থানীয় মুদ্রার অবমূল্যায়ন, সৌদি আরবে আকামা (কাজের অনুমতিপত্র) সংক্রান্ত খরচ বৃদ্ধি, প্রবাসী বাংলাদেশিদের বিদেশে স্থায়ী হওয়া ও অবৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠানোর প্রবণতা বৃদ্ধি রেমিট্যান্স প্রবাহ কমার অন্যতম কারণ।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র শুভঙ্কর শাহা শেয়ার বিজকে বলেন, ‘চলতি অর্থবছরের তিন (জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর) মাসের তথ্য অনুযায়ী রেমিট্যান্স প্রবাহ গত অর্থবছরের তুলনায় এবার কিছুটা ভালো। তবে সেপ্টেম্বরে রেমিট্যান্স কমার যেটা প্রধান কারণ, সেটা হলো গত বছরের সেপ্টেম্বরে ঈদের ৯ থেকে ১০ দিন পেয়েছিল। কিন্তু এবার সেপ্টেম্বরে সেটা পায়নি। যার ফলে আগস্টে বেড়েছিল, যা সেপ্টেম্বরে কমেছে।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) ব্যাংকিং চ্যানেলে ৩৩৮ কোটি ৭৮ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। গত অর্থবছরের এই তিন মাসে রেমিট্যান্স আসে ৩২৪ কোটি ৫৭ লাখ ডলার। গত বছরের তুলনায় তিন মাসে রেমিট্যান্স বেড়েছে চার দশমিক ৩২ শতাংশ।
উল্লেখ্য, ২০১৪-১৫ অর্থবছরের পর থেকে প্রতিবছরই আগের বছরের তুলনায় রেমিট্যান্স কমেছে। সর্বশেষ গত অর্থবছরে তার আগের বছরের তুলনায় রেমিট্যান্স কমেছে সাড়ে ১৪ শতাংশ। তবে রেমিট্যান্স বাড়াতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। যার মধ্যে অন্যতম হলো মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের অপব্যবহার প্রতিরোধ।
সম্প্রতি অবৈধ আর্থিক লেনদেনের সঙ্গে জড়িত থাকায় মোবাইল আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান বিকাশের দুই হাজার ৮৮৭টি এজেন্টের কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে এক হাজার ৮৬৩টি গ্রাহক হিসাব বন্ধেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ও সন্ত্রাসবিরোধী আইন অনুযায়ী, এসব সিদ্ধান্ত দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। দেশে-বিদেশে রেমিট্যান্স আয় বিতরণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের একাধিক বিশেষ পরিদর্শনে বিকাশের এসব এজেন্টের বিরুদ্ধে অনিয়ম ধরা পড়ে। দেশে প্রবাসী আয় পাঠানোর ক্ষেত্রে অনিয়ম খুঁজে বের করতে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও সৌদি আরব পরিদর্শন করে তথ্য সংগ্রহ করেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
Add Comment