রোহান রাজিব: স্কুল-কলেজপড়–য়া ছেলেমেয়েদের জন্য যে ব্যাংকিং ব্যবস্থা মূলত তা-ই স্কুল ব্যাংকিং। এ ধরনের অ্যাকাউন্ট থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী সরকারের আরোপিত ট্যাক্স ছাড়া অন্য কোনো চার্জ কাটার সুযোগ নেই। তবে সাতটি ব্যাংককে এসব অ্যাকাউন্ট থেকে ট্রান্সফার চার্জ, চেকবই ইস্যু চার্জ, ডেবিট কার্ড ইস্যু চার্জ এবং এনআইডি ভেরিফিকেশন সার্ভিস চার্জ কাটার প্রমাণ পেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ ছাড়া এসব হিসাবের বিপরীতে মুনাফাও দেয়নি ব্যাংকগুলো; যা বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়মের পরিপন্থি। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
গতকাল মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংক ৬১টি ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সঙ্গে এ নিয়ে একটি সভা করে। সভায় জড়িত ব্যাংকসহ অন্যান্য ব্যাংকগুলোকে এ বিষয়ে সতর্ক করা হয় বলে সভা সূত্রে জানা যায়।
মুনাফা না দেয়া, বাড়তি সার্ভিস চার্জ কাটা এবং চেকবই ইস্যু করা ব্যাংকগুলো হলোÑসাউথইস্ট ব্যাংক লিমিটেড, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড, ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড, এবি ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড এবং ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড।
জানা যায়, গত ২৫ এপ্রিল বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন ডিপার্টমেন্ট একটি দ্বিমাসিক সভার আয়োজন করে। যেসব ব্যাংক স্কুল ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করে তারা বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী, স্কুল ব্যাংকিংয়ের হিসাব পরিচালনা করছে কি না, তা যাচাই করার পরামর্শ দেয়া হয়। এরপর যেসব ব্যাংক লিড ব্যাংক হিসেবে স্কুল ব্যাংকিং পরিচালনা করে তাদের থেকে স্কুল ব্যাংকের অ্যাকউন্টের তথ্য চাওয়া হয়। ব্যাংক থেকে পাঠানো তথ্য পর্যালোচনা করার পর এসব অনিয়ম উঠে আসে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের স্কুল ব্যাংকিং নীতিমাল অনুযায়ী, স্কুল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টে শিক্ষার্থীদের যেসব অর্থ জমা হবে। তা ব্যাংকের বিভিন্ন ধরনের সঞ্চয়ী হিসাবের প্রদত্ত সর্বনি¤œ ও সর্বোচ্চ মুনাফা দেয়ার বিধান রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা থাকলেও মুনাফা দেয়ার ক্ষেত্রে নির্দেশনা মানছে না অধিকাংশ ব্যাংক।
প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, সাউথইস্ট ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক এবং ইস্টার্ন ব্যাংক শিক্ষার্থীদের স্কুল ব্যাংকিং হিসাবের বিপরীতে মুনাফা দেয়নি। অন্যদিকে এবি ব্যাংক ও সাউথইস্ট ব্যাংক স্কুল ব্যাংকিং হিসাবগুলোর সর্বোচ্চ মুনাফাও দেয়নি, যা বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়মের পরিপন্থি কাজ। এ ছাড়া স্কুল ব্যাংকিং হিসাবগুলোর মুনাফা দেয়ার ক্ষেত্রে আরও অনেক ব্যাংক বিদ্যমান নীতিমালা মানছে না বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
অন্যদিকে স্কুল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টের বিপরীতে এটিএম কার্ড (শুধু ডেবিট কার্ড) ইস্যু করা যাবে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা রয়েছে। এ ক্ষেত্রেও মানা হয়নি বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম। এ নির্দেশনার ব্যত্যয় ঘটিয়ে সাউথইস্ট ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক, আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক এবং এক্সিম ব্যাংক স্কুল ব্যাংকিং হিসাবগুলোর চেকবই ইস্যু করেছে।
জানা যায়, স্কুল ব্যাংকিং নীতিমালা অনুযায়ী, একজন হিসাবধারী মাসে সর্বোচ্চ দুই হাজার টাকা উত্তোলন করতে পারেন। তবে অভিভাবকের অনুমতি নিয়ে সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত উত্তোলন করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে ইস্টার্ন ব্যাংক কোনো সীমা মেনে হিসাবগুলো পরিচালনা করেনি, যা বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন ডিপার্টমেন্টের স্কুল ব্যাংকিং-সংক্রান্ত নীতিমালার নির্দেশনার পরিপন্থি কাজ।
প্রতিবেদন পর্যালোচনায় আরও জানা যায়, স্কুল ব্যাংকিং হিসাবসমূহের ক্ষেত্রে সরকার কর্তৃক আরোপিত ট্যাক্স ছাড়া অন্য কোনো সার্ভিস চার্জ নেয়ার বিধান নেই। এ ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, কিছু ব্যাংক নিয়ম না মেনে বাড়তি সার্ভিস চার্জ আরোপ করেছে। এক্সিম ব্যাংক ট্রান্সফার সার্ভিস চার্জ, সাউথইস্ট ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক এবং আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক কর্তৃক চেকবই ইস্যু চার্জ এবং সাউথইস্ট ব্যাংক লিমিটেড কর্তৃক ডেবিট কার্ড ইস্যু চার্জ আরোপ করা হয়। এছাড়া ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক ধারা এনআইডি ভেরিফিকেশন চার্জ এবং ইস্টার্ন ব্যাংক কর্তৃক বিবিধ চার্জ আরোপ করা হয়, যা পুরো বাংলাদেশ ব্যাংকের স্কুল ব্যাংকিং নীতিমালার পরিপন্থি কাজ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক শেয়ার বিজকে বলেন, ব্যাংকগুলোর লেনদেন প্রোফাইল মেইনটেইন করা হয়নি। তাই ব্যাংকগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংক বসেছে। যেহেতু এ নীতিমালটা পুরোনো, তাই এ বিষয়ে কী করণীয়Ñসেসব নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এছাড়া নীতিমালার কেউ যদি ব্যত্যয় ঘটায়, তা থেকে বিরত থাকার কথা বলা হয়েছে।