ফেসবুক, গুগল, মাইক্রোসফট, আমাজন, নেটফ্লিক্স

সাত মাসে পাঁচ কোম্পানির আয় ২৭৩ কোটি টাকা

রহমত রহমান: বাংলাদেশে অনিবাসী হিসেবে মূসক (ভ্যাট) নিবন্ধন নেয়া কোম্পানিগুলোর ব্যবসা বাড়ছে, যার সঙ্গে বাড়ছে ভ্যাট আদায়। কোম্পানিগুলো নিবন্ধন নেয়ার পর সাত মাসে ব্যবসা করেছে প্রায় ২৭৩ কোটি টাকা। এই আয়ের ওপর ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট দিয়েছে প্রায় ৪১ কোটি টাকা। অনিবাসী কোম্পানিগুলোর মধ্যে ব্যবসা ও ভ্যাট পরিশোধে এগিয়ে রয়েছে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে জনপ্রিয় সার্চ ইঞ্জিন গুগল। আর তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে বহুজাতিক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান মাইক্রোসফট।

বহুজাতিক বিনোদনধর্মী প্রতিষ্ঠান নেটফ্লিক্স নিবন্ধন নেয়ার পর ডিসেম্বর মাসে প্রথমবারের মতো ভ্যাট দিয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলো ভ্যাটের পাশাপাশি নিয়মিত ভ্যাট রিটার্নও দাখিল করছে। তবে এসব প্রতিষ্ঠানের বহু বিজ্ঞাপন বিল ব্যাংকিং চ্যানেলের বাইরে পরিশোধ করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। এনবিআর এসব প্রতিষ্ঠানের সব ধরনের বিজ্ঞাপন মনিটরিং করতে পারলে ফাঁকি বন্ধ হবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। এনবিআর সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।

এনবিআর সূত্রমতে, অনিবাসী হিসেবে নিবন্ধন নেয়ার ক্ষেত্রে নতুন মূসক আইন জটিলতা তৈরি করে। এর ফলে প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিবন্ধনের আওতায় আনতে পারেনি এনবিআর। ফলে এসব প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে ব্যবসা করলেও ভ্যাট নেয়া সম্ভব হয়। অবশেষে দুই বছর চেষ্টার পর এনবিআর অনিবাসী নিবন্ধন দেয়া শুরু করে। প্রথম অবস্থায় ২০২১ সালের ২৩ মে নিবন্ধন দেয়া হয় বিশ্বের অন্যতম টেক জায়ান্ট গুগলের দুটি প্রতিষ্ঠানকে। যুক্তরাষ্ট্রের ইন্টারনেট ও সফটওয়্যার সেবাদানকারী বহুজাতিক কোম্পানি গুগল দুটি প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন নেয়। প্রতিষ্ঠান দুটি হলো গুগল এশিয়া প্যাসিফিক লিমিটেড ও গুগল আয়ারল্যান্ড লিমিটেড। ২৭ মে নিবন্ধন নেয় আমাজন ওয়েব সার্ভিস লিমিটেড। ১৬ জানুয়ারি তিনটি প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন নেয় ফেসবুক। প্রতিষ্ঠান তিনটি হলো ফেসবুক আয়ারল্যান্ড লিমিটেড, ফেসবুক পেমেন্টস ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড ও ফেসবুক টেকনোলজিস আয়ারল্যান্ড লিমিটেড।

১ জুলাই নিবন্ধন নেয় মাইক্রোসফট করপোরেশনের প্রতিষ্ঠান মাইক্রোসফট রিজিওনাল সেলস পিইটি লিমিটেড। সর্বশেষ নিবন্ধন নেয় যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ভিডিও স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম ও প্রযোজনা সংস্থা নেটফ্লিক্স। অনিবাসী হিসেবে এই পর্যন্ত আটটি প্রতিষ্ঠানকে নিবন্ধন দেয়া হয়। আটটি প্রতিষ্ঠানকে ঢাকা দক্ষিণ ভ্যাট কমিশনারেট থেকে নিবন্ধন দেয়া হয়। এর মধ্যে গুগল এশিয়া প্যাসিফিক পিইটি লিমিটেড মে মাসে মাসিক দাখিলপত্র (ভ্যাট রিটার্ন) ও ভ্যাট পরিশোধ করে। আর ফেসবুক জুন থেকে ভ্যাট পরিশোধ ও রিটার্ন জমা দিয়ে আসছে। সর্বশেষ ডিসেম্বর মাসে রিটার্ন জমা ও ৩২ লাখ টাকা ভ্যাট পরিশোধ করেছে নেটফ্লিক্স।

ঢাকা দক্ষিণ ভ্যাট কমিশনারেটের হিসাবমতে, নিবন্ধন নেয়ার পর গত সাত মাসে (জুন-ডিসেম্বর) বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি আয়ের পাশাপাশি সবচেয়ে বেশি ভ্যাট দিয়েছে ফেসবুক। ফেসবুকের তিনটি প্রতিষ্ঠান বিজ্ঞাপন থেকে বাংলাদেশে ১১৬ কোটি ১৯ লাখ টাকা আয় করেছে, যার ওপর ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট দিয়েছে ১৭ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে ফেসবুক আয়ারল্যান্ড লিমিটেড একাই আয় করেছে ১১৬ কোটি টাকা, যার ওপর ভ্যাট দিয়েছে ১৭ কোটি ৪০ লাখ টাকা। আর ফেসবুক পেমেন্টস ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড ১৩ লাখ টাকা আয়ের বিপরীতে দুই লাখ টাকা ও ফেসবুক টেকনোলজিস আয়ারল্যান্ড লিমিটেড ছয় লাখ ৬৭ হাজার টাকা আয়ের বিপরীতে এক লাখ টাকা ভ্যাট দিয়েছে।

হিসাবে আরও দেখা গেছে, বিজ্ঞাপন থেকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আয় করেছে অনিবাসী হিসেবে নিবন্ধন নেয়া গুগলের দুটি প্রতিষ্ঠান। দুটি প্রতিষ্ঠান আট মাসে আয় করেছে ১১১ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। এই আয়ের বিপরীতে ভ্যাট দিয়েছে ১৬ কোটি ৭২ লাখ টাকা। দুটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে গুগল এশিয়া প্যাসিফিক পিইটি লিমিটেড ১১০ কোটি ৬০ লাখ টাকা আয় করেছে, যার বিপরীতে ভ্যাট দিয়েছে ১৬ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। তৃতীয় সর্বোচ্চ আয় করেছে মাইক্রোসফট। প্রতিষ্ঠানটি সাত মাসে আয় করেছে ২৫ কোটি ২৫ লাখ টাকা, যার বিপরীতে ভ্যাট দিয়েছে তিন কোটি ৭৯ লাখ টাকা। আর ১৮ কোটি ৭৩ লাখ টাকা আয় করেছে আমাজন ওয়েব সার্ভিস লিমিটেড, যার বিপরীতে ভ্যাট দিয়েছে দুই কোটি ৮১ লাখ টাকা। নেটফ্লিক্স নিবন্ধন নেয়ার পর ডিসেম্বর মাসে ভ্যাট রিটার্ন ও ৩২ লাখ টাকা ভ্যাট পরিশোধ করেছে।

মোট হিসাব অনুযায়ী, ২০২১ সালের মে থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত এই আট মাসে আটটি প্রতিষ্ঠান মোট ভ্যাট দিয়েছে প্রায় ৪১ কোটি সাত লাখ টাকা, যার মধ্যে ফেসবুকের তিনটি প্রতিষ্ঠানই দিয়েছে ১৭ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। আর আটটি প্রতিষ্ঠান মোট আয় করেছে ২৭৩ কোটি টাকা, যার মধ্যে ফেসবুকের তিনটি প্রতিষ্ঠানের আয় ছিল ১১৬ কোটি ১৯ লাখ টাকা। মাসভিত্তিক হিসাব করলে আটটি প্রতিষ্ঠান জুন মাসে সর্বোচ্চ সাত কোটি ৯৪ লাখ টাকা ভ্যাট দিয়েছে। এছাড়া অক্টোবর মাসে ছয় কোটি ৮৬ লাখ টাকা, সর্বশেষ ডিসেম্বর মাসে পাঁচ কোটি ৯৩ লাখ টাকা, সেপ্টেম্বর মাসে পাঁচ কোটি ছয় লাখ টাকা, নভেম্বর মাসে পাঁচ কোটি দুই লাখ টাকা, জুলাই মাসে চার কোটি ৯৮ লাখ টাকা, আগস্ট মাসে চার কোটি ৭২ লাখ টাকা ও মে মাসে মাত্র ৫৬ লাখ টাকা ভ্যাট সরকারি কোষগারে জমা দিয়েছে। উল্লেখ্য, বাংলাদেশে ফেসবুক, গুগল, আমাজন ও নেটফ্লিক্সের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করছে প্রাইসওয়াটারহাউসকুপারস বাংলাদেশ।

এ বিষয়ে এনবিআরের এক সদস্য শেয়ার বিজকে বলেন, ফেসবুক, গুগল, আমাজন, নেটফ্লিক্স ও মাইক্রোসফট নিবন্ধন নেয়ার পর ভ্যাট রিটার্ন ও ভ্যাট জমা দিচ্ছে। এনবিআর প্রতিষ্ঠানগুলো মনিটরিং করছে, যাতে কোনো ভ্যাট ফাঁকি দিতে না পারে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০