রহমত রহমান: রাজস্ব আহরণের পালে হাওয়া লাগছে। প্রতি মাসেই আহরণ আর প্রবৃদ্ধি বাড়ছে। কভিড পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে। এরই সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি স্বাভাবিক হচ্ছে। ব্যবসা-বাণিজ্যের গতি বাড়ছে। ফলে রাজস্ব আহরণও বাড়ছে। রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় কিছুটা ঘাটতি থাকলেও আহরণ আর প্রবৃদ্ধি বাড়ছে। চলতি অর্থবছরের জানুয়ারিতে গত অর্থবছরের জানুয়ারির তুলনায় এক হাজার ২৯৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা বেশি রাজস্ব আহরণ হয়েছে। প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ৩৬ শতাংশ। আর অর্থবছরের সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) গত অর্থবছরের তুলনায় ৫ হাজার ৫৮৬ কোটি ৪১ লাখ টাকা বেশি আহরণ হয়েছে, প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ৪ দশমিক ৪১ শতাংশ। সাত মাসে আহরণের ক্ষেত্রে শুল্ক ও আয়কর খাত এগিয়ে গেলেও পিছিয়ে পড়েছে ভ্যাট খাত। তবে অর্থবছরের শেষ ৫ মাসে ঘাটতি তেমন না থাকলেও প্রবৃদ্ধি বাড়বে বলে জানিয়েছেন এনবিআর কর্মকর্তারা।
জানুয়ারিতে এনবিআরের প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের জানুয়ারিতে সবচেয়ে বেশি রাজস্ব আহরণ বাড়ে শুল্ক খাতে। এ মাসে রাজস্ব প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৮ দশমিক ৯৬ শতাংশ। জানুয়ারিতে শুল্ক খাতে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৬ হাজার ১৫০ কোটি টাকা, যা গত অর্থবছরের জানুয়ারির চেয়ে ৫০৫ কোটি ৯২ লাখ টাকা বেশি। আর চলতি অর্থবছরের জানুয়ারি পর্যন্ত (জুলাই-জানুয়ারি) সাত মাসে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৩৯ হাজার ৭৯৩ কোটি ১২ লাখ টাকা, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২ হাজার ৬৩৯ কোটি ৬ লাখ টাকা বেশি। সাত মাসে শুল্ক খাতে রাজস্ব আহরণ প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ১০ শতাংশ।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, জানুয়ারিতে রাজস্ব আহরণ প্রবৃদ্ধিতে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে আয়কর খাত। জানুয়ারিতে শুধু আয়কর আহরণে প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ। আর ভ্রমণ কর ও আয়করসহ আহরণ প্রবৃদ্ধি ৪ দশমিক ৮২ শতাংশ। জানুয়ারিতে আয়কর খাতে রাজস্ব আহরণ হয়েছে ৬ হাজার ৫৮৭ কোটি ৩১ লাখ টাকা, যা গত অর্থবছরের জানুয়ারির তুলনায় ৩০২ কোটি ৯২ লাখ টাকা বেশি। আহরণ প্রবৃদ্ধি ৪ দশমিক ৮২ শতাংশ। জানুয়ারিতে শুধু আয়কর আহরণ হয়েছে ৬ হাজার ৫৬৩ কোটি ৭০ লাখ টাকা, যা গত অর্থবছরের একই মাসের তুলনায় ৩৭৫ কোটি ১৬ লাখ টাকা বেশি। শুধু আয়কর আহরণে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ। আর জানুয়ারি মাসে ভ্রমণ কর আদায় হয়েছে ২৩ কোটি ৬১ লাখ টাকা, যা গত অর্থবছরের একই মাসের তুলনায় ৭২ কোটি ৩৮ লাখ টাকা কম। ভ্রমণকরে প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাইনাস ৭৫ দশমিক ৪০ শতাংশ বেশি।
অন্যদিকে আয়কর খাতে চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে কর আহরণ হয়েছে ৪০ হাজার ৯৫০ কোটি ৭৮ লাখ টাকা, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় এক হাজার ৯৭২ কোটি ৭০ লাখ টাকা বেশি। জানুয়ারি পর্যন্ত আহরণ প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ।
প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি অর্থবছর জানুয়ারিতে ভ্যাট (মূসক) খাতে রাজস্ব আহরণ প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫ দশমিক ৭৭ শতাংশ। তবে জানুয়ারি পর্যন্ত (জুলাই-জানুয়ারি) আহরণ প্রবৃদ্ধি মাত্র ১ দশমিক ৯৩ শতাংশ। ভ্যাট খাতে জানুয়ারিতে রাজস্ব আহরণ হয়েছে ৮ হাজার ৮৯৪ কোটি ৫৯ লাখ টাকা, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৪৮৫ কোটি ৬১ লাখ টাকা। আর সাত মাসে ভ্যাট খাতে আহরণ হয়েছে ৫১ হাজার ৪২২ কোটি ১ লাখ টাকা, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৯৭৪ কোটি ৬৫ লাখ টাকা বেশি। সাত মাসে ভ্যাট খাতে আহরণ দাঁড়িয়েছে ১ দশমিক ৯৩ শতাংশ। তবে জানুয়ারি মাসে শুধু ভ্যাট (স্থানীয় পর্যায়ে) আহরণ হয়েছে ৫ হাজার ৫৬৬ কোটি ৭ লাখ টাকা; যা গত অর্থবছরের একই মাসের তুলনায় ৪৯৪ কোটি ৯৩ লাখ টাকা বেশি। আহরণ প্রবৃদ্ধি ৯ দশমিক ৭৬ শতাংশ। আর জানুয়ারি পর্যন্ত সাত মাসে ভ্যাট আহরণ হয়েছে ৩৩ হাজার ৪২২ কোটি ৫১ লাখ টাকা, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৭২৪ কোটি ৭১ লাখ টাকা কম। প্রবৃদ্ধি মাইনাস ২ দশমিক ১২ শতাংশ।
এনবিআরের ভ্যাট বিভাগ সূত্রমতে, চলতি অর্থবছরের প্রথম থেকেই ভ্যাট খাতে আহরণ কমেছে। একদিকে কভিড মহামারির কারণে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। অন্যদিকে ইএফডি মেশিন বসানো হয়। এছাড়া নতুন ভ্যাট আইনের কারণে আহরণ কমেছে। তবে করোনা পরিস্থিতি যতই স্বাভাবিক হচ্ছে ততই ভ্যাট আহরণ বাড়ছে। অর্থবছরের শেষ নাগাদ এ খাতে আহরণ আরও বাড়বে বলে মনে করেন কর্মকর্তারা। চলতি অর্থবছর রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। জানুয়ারি মাসে রাজস্ব আহরণ হয়েছে ২১ হাজার ৬৩১ কোটি ৯০ লাখ টাকা, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১ হাজার ২৯৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা বেশি। আহরণ প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৩৬ শতাংশ। আর জানুয়ারি পর্যন্ত (জুলাই-জানুয়ারি) রাজস্ব আহরণ হয়েছে ১ লাখ ৩২ হাজার ১৬৫ কোটি ৯১ লাখ টাকা, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৫ হাজার ৫৮৬ কোটি ৪১ লাখ টাকা বেশি। সাত মাসে আহরণ প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ৪ দশমিক ৪১ শতাংশ।