মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: সাত মাসের ব্যবধানে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বস্ত্র খাতের কোম্পানি হামিদ ফেব্রিকসের শেয়ারের দর বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। অল্প সময়ের মধ্যে এভাবে দরবৃদ্ধি নিয়ে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কেউ কেউ এ বৃদ্ধিকে যৌক্তিক মনে করলেও অনেকে বলেছেন ভিন্ন কথা। তাদের অভিমত, বিশেষ কারণ ছাড়া অল্প সময়ের মধ্যে এভাবে দরবৃদ্ধি অস্বাভাবিক। এক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীদের সতর্ক থাকার বিকল্প নেই।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, কোম্পানিটির শেয়ারের দর বাড়লেও তিন বছর ধরে নেই কাক্সিক্ষত মুনাফা। উল্টো তিন বছর ধরেই প্রতিষ্ঠানের মুনাফায় ভাটা দেখা যাচ্ছে। ২০১৪ সালে কোম্পানির মুনাফা ছিল ২৭ কোটি ২৫ লাখ টাকা। ২০১৫ সালে তা নেমে আসে ১৩ কোটি ৫৫ লাখ টাকায়। সবশেষ ২০১৬ সালে তা আরও কমে ৯ কোটি ২১ লাখ টাকায় নেমে আসে। একই সময়ের মধ্যে ধারাবাহিকভাবে কমেছে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারপ্রতি সম্পদের পরিমাণও। ২০১৪ সালে কোম্পানির প্রতিটি শেয়ারের (এনএভিপিএস) ছিল ৪৬ টাকা ৭৮ পয়সা। পরের বছর তা নেমে আসে ৩৯ টাকা ৫৭ পয়সায়। গত বছর তা আরও কমে দাঁড়ায় ৩৮ টাকা ১ পয়সা।
হামিদ ফেব্রিকসের দর বাড়ার কারণ জানতে চাইলে কোম্পানির শেয়ার বিভাগ থেকে জানানো হয়, কোম্পানির শেয়ারের দর বাড়ার কোনো কারণ নেই। কিছুদিন আগে কোম্পানিটির নতুন প্ল্যান্টের উৎপাদন শুরু হয়েছে। ফলে দরবৃদ্ধির পেছনে সেটি কারণ হিসেবে কাজ করতে পারে। তবে কোনো কোম্পানির শেয়ারের দর অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেলে সেসব কোম্পানির ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীদের সতর্ক হওয়া দরকার। তা না-হলে হিতে বিপরীত ঘটতে পারে।
এ প্রসঙ্গে ডিএসইর সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বর্তমান পরিচালক রকিবুর রহমান শেয়ার বিজকে বলেন, বিনিয়োগকারীদের উচিত হবে বিনিয়োগের আগে প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে ভালো করে খোঁজ নেওয়া। পুঁজি যার, তাকেই নিরাপত্তা দিতে হবে। ফলে অধিক লাভের আশায় ঝুঁকি না নিয়ে কম লাভ হলেও মৌলভিত্তির কোম্পানিতে থাকা উচিত।’
কোম্পানির লেনদেন চিত্র লক্ষ করলে দেখা যায়, গত মে মাসে এ শেয়ারের দর ছিল ১৩ টাকা ৭০ পয়সা। এর পর থেকে বেশিরভাগ সময়ই এ শেয়ারের দর ঊর্ধ্বমুখী দেখা গেছে। সবশেষ গতকাল প্রতিটি শেয়ার লেনদেন হয় ২৭ টাকা ৭০ পয়সা। অর্থাৎ এ সময়ের মধ্যে প্রতিটি শেয়ারের দর বেড়েছে ১৪ টাকা।
কোম্পানিটি ২০১৪ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। কোম্পানি পরিশোধিত মূলধন ৯১ কোটি পাঁচ লাখ টাকা এবং অনুমোদিত মূলধন ২০০ কোটি টাকা। কোম্পানির মোট শেয়ার সংখ্যা ৯ কোটি ১০ লাখ ৫৭ হাজার ৩১২টি। এর মধ্যে উদ্যোক্তা পরিচালকদের হাতে রয়েছে ৫১ দশমিক ৭৪ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর হাতে রয়েছে ২৮ দশমিক ৪২ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীর হাতে ১৯ দশমিক ৮৪ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। কোম্পানির ২০১৫-১৬ অর্থবছরে শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে এক টাকা এক পয়সা, যা আগের বছর ছিল এক টাকা ৮০ পয়সা। আর শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) হয়েছে ৩৮ টাকা এক পয়সা, যা আগের বছর ছিল ৩৯ টাকা ৫৭ পয়সা। এদিকে সবশেষ প্রকাশিত প্রথম প্রান্তিকের (জুলাই-সেপ্টেম্বর, ১৬) কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ২৬ পয়সা। গত বছরের একই সময়ে কোম্পানিটির ইপিএস ছিল ৩৬ পয়সা। এ সময়ে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি প্রকৃত সম্পদমূল্য হয়েছে ৩৮ টাকা ২৭ পয়সা। গত বছর ছিল ৩৮ টাকা ১ পয়সা।
Add Comment