Print Date & Time : 25 June 2025 Wednesday 3:48 pm

সাত মাসে ১২ হাজার ৭০২ কোটি টাকা কৃষিঋণ বিতরণ

নিজস্ব প্রতিবেদক: চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত (জুলাই ২০০৭ ফেব্রুয়ারি ২০০৮) মাসে ১২ হাজার ৭০২ কোটি টাকা কৃষিঋণ বিতরণ করা হয়েছে। আগের অর্থবছরের একই সময়ে ঋণ বিতরণের পরিমাণ ছিল ১২ হাজার ১৫৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ চলতি অর্থবছরের সাত মাসে আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় কৃষি খাতে ৫৪৩ কোটি টাকা বেশি ঋণ বিতরণ করা হয়েছে।

এদিকে এ খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ এখন পাঁচ হাজার ২৭২ কোটি টাকা। গত জানুয়ারিতে কৃষিঋণের খেলাপি বেড়েছে ৫০ কোটি টাকা। কৃষিঋণে মোট খেলাপির প্রায় ৯০ শতাংশ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর।

সংশ্লিষ্টরা জানান, বোরো মৌসুমে কৃষকরা এখন ব্যাংক থেকে ঋণ নিচ্ছেন। এ মৌসুমে কৃষিঋণ বিতরণ আরও বাড়বে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা।

কৃষিঋণ খেলাপের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ শেয়ার বিজকে বলেন, ‘কৃষিঋণ খেলাপি হয়ে যাওয়ার বিষয়টি মোটেই ইতিবাচক নয়। কৃষিঋণ খেলাপি হওয়ায় প্রকৃত কৃষকদের দোষ নেই। তারা অনিয়ম-দুর্নীতি করে না, বরং কিছু অসাধু ব্যাংক কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ী যোগসাজশ করে কৃষকদের ফাঁসায়।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্যমতে, ২০১৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত কৃষিঋণে খেলাপির পরিমাণ ছিল পাঁচ হাজার ২২২ কোটি টাকা। জানুয়ারিতে ৫০ কোটি টাকা বেড়ে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে পাঁচ হাজার ২৭২ কোটি টাকা, যার মধ্যে প্রায় পাঁচ হাজার ৯৪ কোটি টাকা রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর। কৃষি খাতে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে সর্বোচ্চ দুই হাজার ২৬৯ কোটি টাকা, সোনালী ব্যাংকে এক হাজার ৪৯১ কোটি টাকা, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকে ৮০৮ কোটি টাকা, অগ্রণী ব্যাংকে ১৯৬ কোটি টাকা, বেসিক ব্যাংকে ৩৬ কোটি টাকা ও রূপালী ব্যাংকে ৩০ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ রয়েছে। এদিকে বেসরকারি ও বিদেশি ব্যাংকগুলোতে ১৭৮ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ রয়েছে।

কৃষিঋণ খেলাপি হওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইসমাইল শেয়ার বিজকে জানান, কৃষকদের নানা ধরনের সমস্যার কারণে অনেক কৃষিঋণ খেলাপি হয়ে পড়ছে। তবে আমাদের খেলাপি ঋণ আগের চেয়ে কিছুটা কমেছে। কৃষিঋণে আমরা অনেক ভালো করছি। কৃষিঋণের মধ্যে শস্য খাতে ঋণ বিতরণে সব সময় প্রথম হই।

এদিকে চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) কৃষি খাতে ১২ হাজার ৭০২ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করেছে ব্যাংকগুলো। আগের অর্থবছরের একই সময়ে এ পরিমাণ ছিল ১২ হাজার ১৫৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ চলতি অর্থবছরের সাত মাসে আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় কৃষি খাতে ৫৪৩ কোটি টাকা বেশি বিতরণ হয়েছে। গত সাত মাসে যে পরিমাণ বিতরণ হয়েছে তা চলতি অর্থবছরের মোট লক্ষ্যমাত্রার ৬২ দশমিক ২৭ শতাংশ। একই সময়ে আদায় হয়েছে ১১ হাজার ৮৭৬ কোটি ২৩ লাখ টাকা।

জানা গেছে, চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরে কৃষি খাতে মোট ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা ২০ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে রাষ্ট্রীয় আটটি ব্যাংকের জন্য নির্ধারিত ৯ হাজার ৫৯০ কোটি টাকা। আলোচ্য সাত মাসে এ খাতের ব্যাংকগুলো বিতরণ করেছে পাঁচ হাজার ২৯৯ কোটি টাকা। এদিকে বেসরকারি ও বিদেশি ব্যাংকের জন্য এবার ১০ হাজার ৮১০ কোটি টাকা বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। জানুয়ারি পর্যন্ত বিতরণ করা হয়েছে সাত হাজার ৪০২ কোটি টাকা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী, সব বাণিজ্যিক ব্যাংকের বিতরণ করা মোট ঋণের দুই দশমিক পাঁচ শতাংশ ঋণ পল্লি অঞ্চলে বিতরণ করতে হবে। পল্লি অঞ্চলে অর্থ সরবরাহের মাধ্যমে গ্রামীণ অর্থনীতিকে চাঙা করা ও খাদ্য নিরাপত্তা সৃষ্টিতে সরকারের লক্ষ্যের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে বাংলাদেশ ব্যাংক এ নির্দেশনা জারি করে। ২০০৯ সাল থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক এ ব্যবস্থা চালু করে এর সফলতাও পায়। তারই ধারাবাহিকতায় ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বিতরণ হয় প্রায় ১৮ হাজার কোটি টাকা। এ বছর বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ হয় ২০ হাজার ৪০০ কোটি টাকা।

তথ্যমতে, সাত মাসে কিছু কিছু ব্যাংক লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক কম, আবার কিছু ব্যাংক কোনো ঋণ বিতরণই করতে পারেনি। আলোচ্য সময়ে ব্যাংক আল-ফালাহ, ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান ও সীমান্ত ব্যাংক কোনো ঋণ বিতরণ করেনি। এছাড়া লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম বিতরণ করেছে মধুমতি ব্যাংক আট দশমিক ২১ শতাংশ এবং এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক করেছে চার দশমিক ৫০ শতাংশ। তবে এ সময়ে কিছু ব্যাংক লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি ঋণ বিতরণ করেছে। এর মধ্যে কমার্শিয়াল ব্যাংক অব সিলন লক্ষ্যমাত্রার ১৯২ শতাংশ, স্টেট অব ব্যাংক ইন্ডিয়া ১৮৭ শতাংশ, কমার্স ব্যাংক ও ডাচ্-বাংলা ব্যাংক শতভাগ, ব্র্যাক ব্যাংক ১১১ শতাংশ, ইস্টার্ন ব্যাংক ১৫৫ শতাংশ, মিডল্যান্ড ব্যাংক ১৫৭ শতাংশ, এনআরবি ১০৩ শতাংশ, প্রাইম ব্যাংক ১২৮ শতাংশ, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক ১২১ শতাংশ ও স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক লক্ষ্যমাত্রার ১২৪ শতাংশ বিতরণ করেছে।