সাত হাজার টন চিনি অবিক্রীত বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না কর্মীরা

তাপস কুমার, নাটোর: দীর্ঘদিন থেকে মানসম্পন্ন চিনি উৎপাদনে সুনাম অর্জন করলেও আর্থিক সংকটে পড়ে নাটোর সুগার মিল মুখ থুবড়ে পড়ছে। মার্চের পর প্রতিষ্ঠানটির প্রায় সাড়ে ৬০০ কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শ্রমিকের বেতন, বিভিন্ন ভাতা, মজুরি ও অতিরিক্ত কাজের মজুরি দিতে পারেনি চিনিকলটি। টাকার পরিবর্তে দেওয়া চিনি নিয়েও কমিশন বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। মিলের তালিকাভুক্ত এক এসইডিও চিনির দামের ওপর পাঁচ শতাংশ কমিশন বাগিয়ে নিচ্ছেন। সে সঙ্গে জুড়ে দিয়েছেন আরও শর্ত। এ নিয়ে গত রোববার সকালে সুগার মিলে গেট মিটিং ডেকে কমিশন বাণিজ্যের প্রতিবাদ জানিয়ে ন্যায্য পাওনাদি পরিশোধের দাবি জানিয়েছেন মিলের শ্রমিক-কর্মচারীরা।
শ্রমিক কর্মচারীদের অভিযোগ, সময়মতো বেতন ভাতা না পেয়ে ঈদুল ফিতরের আনন্দ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন তারা। এছাড়া টাকার অভাবে তাদের সন্তানদের লেখাপড়া ব্যাহত হচ্ছে। পরীক্ষার ফি জমা দিতে না পেরে অনেকেই পরীক্ষা দিতে পারেনি বলেও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শ্রমিকরা। নাটোর সুগার মিল ঘুরে দেখা যায়, চিনিকলের গুদামে প্রায় সাত হাজার টন চিনি মজুদ রয়েছে। কারণ, কয়েক মৌসুম মিলে উৎপাদিত চিনি বিক্রিই হয়নি। এর ওপর শ্রমিক কর্মচারীদের বেতন-মজুরিসহ আনুষঙ্গিক পাওনাদি পরিশোধে নিজস্ব তহবিল বা ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা না থাকার ফলে কয়েক বছর ধরে মজুরি পরিশোধে সৃষ্টি হয়েছে জটিলতা। এক পর্যায়ে মজুির দিতে না পারায় এর পরিবর্তে মিল কর্তৃপক্ষ সমপরিমাণ অর্থের চিনি শ্রমিক ও কর্মচারীদের দেওয়ার প্রস্তাব দেন। শুরুতে রাজি না হলেও শ্রমিক-কর্মচারীদের কেউ কেউ নিরুপায় হয়ে চিনি নিতে সম্মত হন। বাজার মূল্যের চেয়ে কম দামে চিনি বিক্রি করেও পাওনাদি আদায়ে কমিশন বাণিজ্যের শিকার হচ্ছেন শ্রমিক-কর্মচারীরা।
তাদের অভিযোগ, চিনি বিক্রি করে যে টাকা পাওয়া যাবে তার ওপর পাঁচ শতাংশ কমিশন দাবি করছেন সুগার মিলের এসইডিও স্থানীয় একজন প্রভাবশালী ব্যবসায়ী। এককভাবে তাকে চিনি দিলে তবেই তিনি সুগার মিলের মজুদ চিনি কিনবেন, এমন শর্তে মিল কর্তৃপক্ষ তার কাছে চিনি বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সে সুযোগে তিনি শ্রমিক-কর্মচারীদের থেকে পাঁচ শতাংশ কমিশন বাগিয়ে নিচ্ছেন। তাদের দাবি, এ কমিশন বাণিজ্যের নেপথ্যে রয়েছেন ব্যবস্থাপকসহ মিল প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
এদিকে মিল পাওনাদি পরিশোধ না করায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন শ্রমিক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তাদের ভয়, গণমাধ্যমের সঙ্গে এ নিয়ে কথা বললে, ছোট ছোট অভিযোগ এনে নোট দিয়ে চাকরিচ্যুত করা হয়। এমনকি সময়মতো মজুরি না পাওয়ায় এক শ্রমিকের সন্তান এইচএসসি পরীক্ষা দিতে পারেনি।
বয়লার হাউজের শ্রমিক আবু তালেব বলেন, ‘ঈদের আগে মজুরি কমিশনের অগ্রিম টাকা পাইনি, তার ওপর দুই মাসের বেতনও বকেয়া। ধারদেনা করে ঈদ পার করেছি, এখন আর চলার সামর্থ্য নেই।’
মিলের ওয়ারিং ও বিদ্যুৎ হাউজের কর্মচারী বাবর আলী বলেন, ‘তিন মাস ধরে বেতন পাই না। চাইতে গেলে মিল কর্তৃপক্ষ বলে, মিলের টাকা নেই। পাঁচ শতাংশ কমিশনে চিনি বিক্রি করে বেতন নেন।’
হিসাব বিভাগের জ্যেষ্ঠ করণিক সাহেব আলী বলেন, ‘ওভারটাইম, বকেয়া বেতন, বাড়িভাড়াসহ দুই মাসের বেতন দিচ্ছে না মিল কর্তৃপক্ষ। চিনি দিতে চাইছে বাজারের চেয়েও কম দামে। আবার সে চিনি বিক্রি করতেও পাঁচ শতাংশ কমিশন দিতে হবে ক্রেতাকে। এটা মেনে নেওয়া যায় না। কমিশনের বিনিময়ে বেতন-ভাতা গ্রহণ করব না আমরা’। শ্রমিক জালাল উদ্দীন বলেন, ‘ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের গৃহীত পাঁচ শতাংশ কমিশনের সিদ্ধান্ত মানি না। কাজ করেছি বেতন পাওয়ার জন্য। অথচ টাকা দিয়ে বেতন নেওয়ার কথা বলছে ব্যবস্থাপনা পরিচালক।’
চিনিকল শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘ন্যায্য বেতন-মজুরি সাড়ে ৬০০ কর্মকর্তা-কর্মচারীর ন্যায্য অধিকার। সবাই একমত হয়েছে কমিশন দিয়ে বেতন না নিতে। এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে শিল্পমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।’ ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শরীফুল ইসলামও শীর্ষ স্থানীয় এ চিনিকলের ছয় শতাধিক কর্মকর্তা-শ্রমিক-কর্মচারীর পাওনা পরিশোধ করতে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। তিনি বলেন, ‘পাঁচ শতাংশ কমিশন দিয়ে শ্রমিক-কর্মচারীরা বকেয়া বেতন নিলে অবশিষ্ট কিছুই থাকে না। এখানকার কর্মকর্তা-শ্রমিক-কর্মচারীরা তাদের ন্যায্য পাওনাদি না পেলে ভবিষ্যতে চিনি উৎপাদনে উৎসাহ হারাবে। তখন চিনিশিল্প মুখ থুবড়ে পড়বে।’
মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শহীদ উল্লাহ মিলের আর্থিক সংকটের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ‘চিনি বিক্রির টাকা থেকে গত ফেব্রæয়ারি ও মার্চ মাসের বেতন দেওয়া হয়েছে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। সরকারের বেঁধে দেওয়া ৫০ টাকা কেজিতে ব্যবসায়ীরা চিনি কিনতে চান না। তাই চিনি অবিক্রীত থাকছে এবং বকেয়া বেতন-ভাতা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। অন্যান্য মিলগুলোতে নির্দিষ্ট কমিশনের বিনিময়ে চিনি বিক্রি করেই বকেয়া পরিশোধ করা হচ্ছে জানিয়ে সংকট নিরসনে কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সরকারের সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি।

জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমেলা

‘মেধাই সম্পদ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিই ভবিষ্যৎ’ সেøাগান সামনে রেখে শুরু হওয়া তিন দিনব্যাপী ৩৯তম জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মেলা শেষ হচ্ছে আজ। রোববার জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘর রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান মেলার উদ্বোধন করেন। পাশাপাশি দ্বিতীয় জাতীয় বিজ্ঞান অলিম্পিয়াড ও দ্বিতীয় জাতীয় বিজ্ঞানবিষয়ক কুইজ প্রতিযোগিতাও শুরু হয়েছে।
সারা দেশের জেলা পর্যায়ের জুনিয়র, সিনিয়র ও বিশেষ গ্রæপে প্রথম স্থান অধিকারী প্রতিযোগী বা প্রকল্প, গাইড, তরুণ ও অপেশাদার খুদে বিজ্ঞানীরা এ মেলায় অংশ নিয়েছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমেলায় ১৯২টি প্রকল্পের প্রদর্শনী চলছে। অন্যদিকে বিজ্ঞান অলিম্পিয়াডে ২৫৬ জন এবং বিজ্ঞানবিষয়ক কুইজ প্রতিযোগিতায় ৭২ জন অংশ নিয়েছে। সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মেলা দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকবে। আজ মেলা শেষ হবে। গতকাল সোমবার প্রদর্শিত হয়েছে ‘সায়েন্স শো’ এবং শওকত লাভলীর নির্দেশনায় মঞ্চস্থ হবে বিজ্ঞানবিষয়ক নাটক।
জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরের মহাপরিচালক স্বপন কুমার রায়ের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সচিব মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ডা. আ ফ ম রুহুল হক ও বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমির সভাপতি অধ্যাপক ড. কাজী আবদুল ফাত্তাহ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন জাদুঘরের কিউরেটর কাজী হাসিব উদ্দিন আহমেদ।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এ সরকার বিজ্ঞানচর্চার মাধ্যমে বিজ্ঞানমনস্ক জাতি গঠন এবং বিজ্ঞানের উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এ মেলার আয়োজন সে রকমই একটি উদ্যোগ। এ দেশের ছেলেমেয়েরা অত্যন্ত মেধাবী। নতুন প্রজšে§র এরাই বিজ্ঞানচর্চা করে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে এ দেশকে বিশ্বের বুকে উন্নত দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবে। বিজ্ঞপ্তি

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০