কুদরতে খোদা সবুজ, কুষ্টিয়া: কুষ্টিয়ার কুমারখালীর ছেঁউড়িয়ার বাউল সম্রাট ফকির লালন সাঁইয়ের ধামে নেমেছে মানুষের ঢল। সেখানকার মরাকালী নদীর পাড় বাউল, সাধু, ফকির আর সাধারণ দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখর। দোল পূর্ণিমায় তিন দিনের স্মরণোৎসবকে ঘিরে পুরো ছেঁউড়িয়া এলাকা যেন উৎসবের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। সাধুসঙ্গ, বাউল গান আর তত্ত্ব আলোচনায় সময় পার করছেন বাউল অনুসারী সাধুরা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, লালনের মাজার চত্বরে পা ফেলার মতো কোনো জায়গা নেই। সাদা পোশাকসহ নানা বেশধারী বাউল মানুষের জটলা আশপাশের এলাকায়ও। এ বছর দেশের নানা প্রান্ত ছাড়াও ভারতীয় পর্যটক ও বাউল সাধুরা মেলায় অংশ নিয়েছেন। মাজারের গেট থেকে শুরু করে মাজার পর্যন্ত দুই পাশে গাছের নিচে বাউলরা ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে আসন গেড়েছেন। সেখানে অবিরাম চলছে লালনের গান। সাধারণ দর্শনার্থীদের অনুরোধেও গান পরিবেশন করেছেন তারা।
বাউলরা জানান, দোল পূর্ণিমার অনুষ্ঠান চলে আসছে শত বছরেরও বেশি সময় ধরে। লালন ফকির জীবিত থাকতেই এ অনুষ্ঠান শুরু করেন। দোল পূর্ণিমার রাতে ফকির লালন তার শিষ্যদের নিয়ে গানের মচ্ছব বসাতেন। সেখানে অনেক নতুন নতুন গান পরিবেশন করতেন ফকির লালন।
বিশিষ্ট লালন গবেষক ড. একেএম আজাদুর রহমান বলেন, বাউলদের সমাজের কাছে কিছু চাওয়া-পাওয়া নেই। তারা তাদের মতো চলতে পছন্দ করেন। ফকির লালন মানুষের মধ্যে কোনো ভেদাভেদ তৈরি করেননি।
স্মরণোৎসব বা দোল উৎসব মানেই বাউল ফকিরদের মহাসম্মেলন। বাউলরা ভাবপরম্পরা বিনিময় করেন আপন মনে, নিজস্ব রীতিতে। দূর-দূরান্ত থেকে সাদা বসনে বাউল সাধকরা সেখানে হাজির হয়েছেন। এসেছেন দলে দলে একতারা-দোতারা, ঢোল-খোল, বাঁশি, প্রেমজুড়ি, চাকতি ও খমক হাতে। হাতে থাকে বিশেষ ধরনের লাঠি ও বাদ্যযন্ত্র। লালন ধামের ভেতর ও বাইরে নিজেদের পছন্দমতো জায়গা করে নিয়ে গানবাজনা করেন তারা। লালন আঁখড়ায় এবার নারী বাউলদের অংশগ্রহণও চোখে পড়ার মতো।
বাউল ও ফকিরদের পাশাপাশি সারা দেশ থেকে অনুষ্ঠানে এসেছেন অসংখ্য দর্শনার্থী। তাদের মধ্যে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও রয়েছেন। ঢাকা থেকে যাওয়া দর্শনার্থী রাকিবুল ইসলাম ও সজীব জানান, তারা প্রথমবারের মতো মাজারে এসেছেন। তিন দিন থাকবেন। তবে অনুষ্ঠানকে ঘিরে সবকিছুর দাম বেড়ে গেছে বলেও অভিযোগ করেন তারা।
অনুষ্ঠান ঘিরে সামনের মাঠে বসেছে মেলা। এতে শতাধিক স্টল রয়েছে। খাদ্য, প্রসাধনী ও পোশাক ছাড়াও ফার্নিচারের একাধিক শোরুম রয়েছে সেখানে। এছাড়া শিশুদের বিনোদনের জন্য নাগরদোলাসহ বিভিন্ন রাইডেরও ব্যবস্থা করা হয়েছে।
কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক মো. জহির রায়হান জানান, দ্বিতীয় দিনে পাঁচ হাজারের অধিক বাউল সাধুকে পূর্ণসেবা দেওয়া হয়। এর বাইরেও সবাইকে সকাল ও রাতের খাবার দেওয়া হচ্ছে।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার রাতে ছেঁউড়িয়ার আখড়াবাড়িতে বাউল সম্রাট ফকির লালন সাঁইয়ের তিন দিনব্যাপী স্মরণোৎসবের উদ্বোধন করা হয়। প্রধান অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ। লালন একাডেমি ও কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসনের আয়োজনে এবং সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।