নিজস্ব প্রতিবেদক: করোনাভাইরাসে আক্রান্ত সাধারণ মানুষরা কেন সর্বোত্তম চিকিৎসাসেবা পাবে না তা সরকারের কাছে জানতে চেয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
গতকাল এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘একটি আইসিইউ, একটি ভেন্টিলেটর বা একটি সিলিন্ডার এখন সোনার হরিণ। যখন শুনি ক্ষমতাসীন দলের নেতারা হাসপাতালে আইসিইউ বেড বুকিং করে রেখেছেন। অনেককে দেখা গেছে, এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে ভাড়া করে ভালো হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে। এ ব্যবস্থাগুলোকে সাধারণ মানুষের জন্য নেই কেন?’
তিনি বলেন, ‘দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে সিলেটের কভিড-১৯ আক্রান্ত ডা. মইন উদ্দিন চিকিৎসার জন্য একটি আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্স পাননি। তিনি প্রায় বিনা চিকিৎসায় মারা গেছেন। সড়কে, যানবাহনে, অ্যাম্বুলেন্সে, মর্গে এখন শুধু লাশের সারি। সবার চিকিৎসা নিশ্চিত করা তো সরকারেরই দায়িত্ব। চিকিৎসা ব্যবস্থা হওয়া উচিত সার্বজনীন। কিন্তু সরকার তা করতে ব্যর্থ।’
দেশের হাসপাতালগুলোতে কোনো চিকিৎসাসেবা নেই অভিযোগ করে ফখরুল বলেন, ‘বিভিন্ন হাসপাতালে শুধু করোনা নয়, অন্য রোগীরাও চিকিৎসাসেবা পাচ্ছে না। চিকিৎসা করতে গেলে বলে আগে করোনা টেস্ট করে আসেন। আর করোনা টেস্ট সোনার হরিণের মতো। কিডনি, ডায়াবেটিস, ক্যানসারসহ জটিল রোগের চিকিৎসাও পাচ্ছে না মানুষ। এ হলো দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা।’
এই অবস্থা থেকে উত্তরণে প্রয়োজনে সারা দেশে এলাকাভিত্তিক কঠোর ‘লকডাউন’ ঘোষণাসহ সাত দফা সুপারিশও তুলে ধরেন মির্জা ফখরুল। এর মধ্যে রয়েছে চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, সাংবাদিক ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের জন্য পর্যাপ্ত মানসম্মত পিপিই সরবারহ নিশ্চিতকরণ ও তাদের হোটেলে থাকার ব্যবস্থা গ্রহণ, জেলায় জেলায় করোনাভাইরাস শনাক্তকরণ ও চিকিৎসাসেবা দ্রুত সম্প্রসারণ, অভাবগ্রস্ত পরিবারগুলোকে রেশন কার্ডের মাধ্যমে চাল, ডাল, তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী বিতরণ, পোশাক শিল্প-কারখানার কর্মীসহ সাধারণ শ্রমিকদের আর্থিক সুবিধা, খাদ্যসামগ্রী সহায়তা ও সুচিকিৎসার ব্যবস্থা, সরকারি ত্রাণ বিতরণের দায়িত্ব সেনাবাহিনীকে দেওয়া এবং করোনা আক্রান্ত ও মৃতের সঠিক সংখ্যা উপস্থাপন এবং তথ্য লুকোনোর নীতি পরিহার করা।
এ সংকট মোকাবিলায় সব দল-শ্রেণি-পেশাকে নিয়ে সমন্বিত উদ্যোগের কোনো বিকল্প নেই উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এ করোনা পরিস্থিতিকে অবহেলা না করে, ?উদাসীন না হয়ে দেশের সব মানুষকে বাঁচানোর জন্য সব শক্তিগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করে রাজনৈতিক দল, অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞ এবং যারা চিকিৎসার সঙ্গে জড়িত রয়েছেন তাদের সবার ঐক্যবদ্ধ মতামত নিয়ে একটি সমন্বিত প্রয়াস চালাতে হবে। মহামারি পরিস্থিতিতে গণমাধ্যমের সাংবাদিকদের ‘বিশেষ বিমা’ ও ‘বিশেষ ভাতা’ প্রদানের দাবিও জানান তিনি।
বিএনপি মহাসচিব জানান, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত বিএনপির ঢাকা মহানগরের উত্তরের সাধারণ সম্পাদক আহসানউল্লাহ হাসানসহ ৫৬ জন নেতাকর্মী মারা গেছেন। আক্রান্ত হয়েছে ১২১ জন নেতাকর্মী।
উত্তরার নিজের বাসা থেকে করোনা পর্যবেক্ষক জাতীয় কমিটির উদ্যোগে এ ভার্চুয়াল সংবাদ ব্রিফিয়ে স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ও কমিটির সদস্য দলের ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেনও যুক্ত ছিলেন।