সাধারণ বিমার ব্যবস্থাপনা ব্যয় নির্দেশনা উপেক্ষার কারণেই আইডিআরএ’র প্রবিধান বাতিল  

 

পলাশ শরিফ: সাধারণ বিমার ব্যবস্থাপনা ব্যয় ইস্যুতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা উপেক্ষা করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। অর্থ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশিত সীমার চেয়ে ব্যবস্থাপনা ব্যয়সীমা ১৫ শতাংশ কমিয়ে গেজেট প্রকাশ করেছে সংস্থাটি। বিষয়টি ফাঁস হওয়ার পর অর্থমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে ওই ‘বিতর্কিত’ প্রবিধান বাতিল করেছে মন্ত্রণালয়। সে সঙ্গে দূরদৃষ্টির মাধ্যমে চলমান পরিস্থিতি বিবেচনায় নতুন প্রবিধান প্রণয়নের তাগিদও দেওয়া হয়েছে। তবে মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত উপেক্ষার বিষয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির দায়িত্বশীলরা স্পষ্টভাবে কিছু জানাতে রাজি হননি।

তথ্যানুসন্ধানে মিলেছে, সাধারণ বিমা কোম্পানির ব্যবস্থাপনা ব্যয় বিষয়ে গত বছরের ১৮ জুলাই প্রবিধান প্রকাশ করে বিমা নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ। প্রবিধানে কোম্পানিগুলো প্রিমিয়াম আয়ের কত শতাংশ পর্যন্ত ব্যবস্থাপনার জন্য ব্যয় করবে, সে বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়। তবে ওই নির্দেশনার পরই সমালোচনার মুখে পড়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। কারণ ব্যবস্থাপনা ব্যয় ১৯৫৮ সালে নির্দেশিত সীমার মধ্যে রাখতেই হিমশিম খাচ্ছে কোম্পানিগুলো। তাই নীতিমালা সংশোধনের দাবি করে আসছে কোম্পানিগুলো। এমন অবস্থার মধ্যেই নতুন প্রবিধানে ব্যবস্থাপনা ব্যয়সীমা আরও কমিয়ে দিয়েছিল আইডিআরএ।

নির্ভরযোগ্য সূত্রের তথ্যমতে, প্রবিধানের গেজেট প্রকাশের আগে সাধারণ বিমা কোম্পানিগুলোর ব্যবস্থাপনা ব্যয় বিষয়ে দিকনির্দেশনা দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। নির্দেশনায় ১৯৫৮ সালের নির্দেশিত সীমা বাড়িয়ে অগ্নি ও অন্য বিমায় প্রথম পাঁচ কোটি টাকা প্রিমিয়াম আয়ের ক্ষেত্রে ৫০ শতাংশ ও নৌ বিমায় ৪১ শতাংশ অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। অগ্নি ও অন্য বিমায় নির্দেশিত সীমা ঠিক রাখলেও নৌ বিমার ক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ কমিয়ে ২৬ শতাংশ নির্ধারণ করেছিল নিয়ন্ত্রক সংস্থা। একইভাবে দ্বিতীয় পাঁচ কোটি টাকা প্রিমিয়াম আয়ের ক্ষেত্রে অগ্নি ও অন্য বিমায় ৪৫ শতাংশ এবং নৌ বিমায় ৪০ শতাংশ নির্ধারণ করেছিল অর্থ মন্ত্রণালয়। এক্ষেত্রেও কাটছাঁট করেছে আইডিআরএ। শুধু ওই দুটিই নয়, সাতটি ধাপেই ব্যয় অনুমোদিত সীমার তুলনায় ১৫ শতাংশ কমিয়ে প্রবিধান চূড়ান্ত করেছে আইডিআরএ। যে কারণে ‘বিতর্কিত’ ওই প্রবিধানে ব্যয়সীমা বাড়ানোর বিপরীতে উল্টো কমানো হয়েছিল। এতে নতুন জটিলতায় পড়ে ৩১ সাধারণ বিমা কোম্পানি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সাধারণ বিমা কোম্পানির দায়িত্বশীল কর্মকর্তার মতে, বিমা কোম্পানির প্রতিনিধিদের পরামর্শ আমলে না নিয়েই ওই প্রবিধান তৈরি করা হয়েছিল। যে কারণে ব্যয়সীমা বাড়ানোর বদলে উল্টো কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। এতে কোম্পানিগুলো বিতর্কের মুখে পড়ে। অর্থ মন্ত্রণালয় বিষয়টি আমলে নেওয়ায় দেরিতে হলেও সমাধান হচ্ছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার বিতর্কিত সিদ্ধান্তে যাতে নেতিবাচক প্রভাব না পড়ে, সেদিকে খেয়াল রাখার ওপর জোর দিয়েছেন তারা।

বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশন (বিআইএ) সভাপতি শেখ কবির হোসেন শেয়ার বিজকে বলেন, ‘বিমা খাতে শৃঙ্খলা আনতে নতুন প্রবিধান প্রণয়নে এ খাতের প্রতিনিধিদের সুপারিশ সব সময় বিবেচনায় নেওয়া হয় না। যে কারণে নিয়ন্ত্রক সংস্থার সিদ্ধান্ত নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়। সংস্থাটির বিতর্কিত নির্দেশনায় জটিলতার মুখে পড়ে কোম্পানিগুলো। যেমন: বিমা কোম্পানির স্বতন্ত্র পরিচালকের সংখ্যা, ব্যবস্থাপনা ব্যয় ও মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়েও জটিলতা আছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা আরেকটু আন্তরিক হলে এমন পরিস্থিতি এড়ানো যাবে।’

প্রবিধানের গেজেট প্রকাশের পর এ নিয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থার সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠকও করেছেন সাধারণ বিমা কোম্পানির প্রতিনিধিরা। ওই ‘বিতর্কিত’ প্রবিধান সংশোধন চেয়েছে কোম্পানিগুলো। কিন্তু কোনো প্রস্তাবই আমলে নেয়নি আইডিআরএ। নিয়ন্ত্রক সংস্থা প্রস্তাব আমলে না নেওয়ায় বিষয়টি অর্থ মন্ত্রণালয় পর্যন্ত গড়ায়। এ বিষয়ে কথা বলতে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সঙ্গে সাক্ষাৎও করেন বিমা কোম্পানির প্রতিনিধিরা। বিষয়টি খতিয়ে দেখে সময়োপযোগী প্রবিধান প্রণয়নের নির্দেশ দেন অর্থমন্ত্রী। আর এটি তলিয়ে দেখতে গিয়ে আইডিআরএ’র বিরুদ্ধে নির্দেশনা উপেক্ষার প্রমাণ পেয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এর জেরে বিতর্কিত প্রবিধান  বাতিল করে নতুন করা হচ্ছে। অর্থমন্ত্রীর নির্দেশনার পর সবশেষ গত ১৮ জানুয়ারি অর্থ মন্ত্রণালয়ে এ সভায় ওই প্রবিধান বাতিল করে আগামী ১৫ মার্চের মধ্যে নতুন প্রবিধান প্রণয়নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ওই সভায় গড়া এ সংক্রান্ত কমিটিকে বিমা খাতের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি নতুন প্রবিধান না হওয়া পর্যন্ত সাধারণ বিমার ব্যবস্থাপনা ব্যয় নিয়ে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া থেকে রিবত থাকার কথাও বলা হয়েছে।

‘ওই বিধিমালায় কিছু ভুল ছিল’ বলে স্বীকার করলেও এ বিষয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থার দায়িত্বশীলরা গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন। সংস্থাটির সদস্য ও মুখপাত্র জুবের আহমেদ খানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি শেয়ার বিজকে বলেন, ‘ওই প্রবিধানে কিছু ত্রুটি ছিল। যে কারণে নতুন করে প্রবিধান করা হচ্ছে বলে জেনেছি। তবে আমি এ বিষয়ে কিছু জানি না।’

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০