সানেম সম্মেলনে বক্তারা: নতুন ব্যাংক নয়, দরকার দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন

 

নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রয়োজনের তুলনায় দেশে ব্যাংকের সংখ্যা অনেক। আরও বাড়ানোর কথা শোনা যাচ্ছে। মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে ব্যাংকের সংখ্যা বাড়লেও সেই হারে বাড়েনি সেবার পরিধি ও মান। নতুন-পুরোনো সব ব্যাংকই বড় গ্রাহক টানতে প্রতিযোগিতা করছে। ফলে ব্যাংক বাড়লেও সেবা মুষ্টিমেয় কয়েকজনের কাছে সীমাবদ্ধ থেকে যাচ্ছে। তাই সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় ব্যাংকিং সেবা পৌঁছাতে নতুন ব্যাংকের প্রয়োজন নেই। দরকার শুধু দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন।

গতকাল রোববার রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) আয়োজিত দ্বিতীয় অর্থনীতিবিদ সম্মেলন ২০১৭-তে ‘ডিজিটাল টেকনোলজি অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এসব কথা বলেন। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ।

বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নীতিবিষয়ক উপদেষ্টা (এটুআই) আনির চৌধুরী বলেন, ব্যাংকিং সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছাতে ১০ টাকায় ব্যাংক অ্যাকাউন্টের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাতে অনেক সাড়াও পাওয়া গেছে। এখন কথা হলো, ব্যাংকের অর্থনৈতিক লেনদেনে আরও অনেক সেবামূল্য আছে, যা গ্রাহকরা জানেন না। দরিদ্রদের জন্য এসব সেবায় মূল্য ছাড় দেওয়ার দাবি আছে অনেক দিনের। এগুলো ছাড় নয়, বরং সহনীয় পর্যায়ে রাখার দাবি আসতে পারে। আর এটাই ভাবা হচ্ছে।’

তিনি জানান, সরকারের ১০ টাকার ব্যাংক অ্যাকাউন্টের নতুন নাম হিসেবে স্মল ভ্যালু অ্যাকাউন্ট করার চিন্তা চলছে। এ অ্যাকাউন্টে সেবামূল্যসহ সার্বিক বিষয় নির্দিষ্ট করে দেওয়া হবে।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম) মহাপরিচালক ড. তৌফিক এ চৌধুরী বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ বা তদারকি রিকশাওয়ালার ওপর নয়। সমাজের উচ্চবিত্ত শ্রেণির জন্যই বলা যায়। তাই আমরা ফোকাস করতে চাইছি, ব্যাংকের বাইরের ও ভেতরের লেনদেন কী হতে পারে এবং দুই লেনদেনের ভেতর কোনটি বৈধ বা অবৈধ। কোনটি যৌক্তিক আর কোনটি অযৌক্তিক।’

বিকাশ লিমিটেড-এর সিইও কামাল এস কাদির জানান, গত বছর বিকাশ ৭৩৯ কোটি টাকা রাজস্ব দিয়েছে। দিন দিন জনগণের কাছে এর সেবা গ্রহণ সহজতর হওয়ার কারণে বিকাশ-এর পরিধি বাড়ছে। এখন ব্যাংকিং সেবাও যদি এমন সহজ সেবা হয় গ্রাহকরা সেদিকেই যাবে। এটা সহজ হিসাব।

বৈঠকে মুক্ত আলোচনায় বক্তারা বলেন, ব্যাংকিং সেবা কয়েকজন ধনীর মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে সবার মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা দরকার। সেবামূল্য দরিদ্রদের জন্য সহনীয় রাখা। নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানের তদারকিতে ভারসাম্য রাখা। টেকনোলজিকে আমন্ত্রণ জানাতে গিয়ে অতি উৎসাহী না হওয়ারও পরামর্শ দেওয়া হয়। পাশাপাশি বিকাশ লিমিটেডের সেবামূল্যও গ্রাহকদের কাছ থেকে কম নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।

সভাপতির বক্তব্যে সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘দেশে নতুন ব্যাংক হচ্ছে, কিন্তু তাদের চরিত্র একই থেকে যাচ্ছে। ব্যাংকগুলো যাদের টাকা আছে সেবা নিতে তাদের ডেকে আনে। এ প্রতিযোগিতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। তা না হলে যতই টেকনোলজি আসে, কাজের কাজ হবে না।’ ব্যাংকিং সেবা বাড়াতে টেকনোলজি ও নতুন ব্যাংকের পরিবর্তে ব্যাংকারদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনের ওপর জোর দেন তিনি।

আলোচনায় অন্যদের মধ্যে পিআই স্ট্র্যাটেজি কনসালটিংয়ের ম্যানেজিং পার্টনার পিয়াল ইসলাম, বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন ডিপার্টমেন্টের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার এম আনোয়ারুল ইসলাম, বাংলাদেশ ব্যাংকের পেইমেন্ট সিস্টেমস ডিপার্টমেন্টের জয়েন্ট ডিরেক্টর খন্দকার আলী কামরান জাহিদ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

 

Add Comment

Click here to post a comment

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০