থাইল্যান্ডের ব্যাংককে একটি দোকান খুলে ব্যবসা শুরু করেছিলেন দুই ভাই এক চর ও সিউ হুই। বিক্রি করতেন শস্যবীজ। তারাই ধীরে ধীরে গড়ে তুলেছেন বহুজাতিক ব্র্যান্ড সিপি। এক শতাব্দী ধরে কৃষিভিত্তিক এই কোম্পানিটি এখন এশিয়ার অন্যতম খাদ্য তৈরি, সরবরাহ ও বিতরণকারী প্রতিষ্ঠান। এদেশের কৃষি খাতের ব্যবসায়ও প্রতিষ্ঠানটি সফল। কর্মকর্তাদের কাছে বাংলাদেশে সিপির সাফল্যের গল্প শুনেছেন জাকারিয়া পলাশ
বাংলাদেশে কৃষিভিত্তিক ব্যবসায় উদাহরণ সৃষ্টি করেছে বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান সিপি। পশুপাখির খাদ্য তৈরি, খামার ব্যবস্থাপনা ও বাজারজাতকরণসহ সবক্ষেত্রেই নিজস্ব সাপ্লাই চেইন নিয়ন্ত্রণ করছে কোম্পানিটি। লেয়ার-ব্রয়লারসহ বিভিন্ন প্রজাতির মুরগি পালন ও ডিম উৎপাদনে ব্যবহার করছে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি। বাংলাদেশে দ্রুত প্রসারমান কোম্পানিটি শিক্ষিত তরুণদের জন্য নতুন কর্মক্ষেত্র সৃষ্টি করেছে।
১৯২১ সালে থাইল্যান্ডের ব্যাংককে একটি দোকান খুলে ব্যবসা শুরু করেছিলেন দুই ভাই এক চর ও সিউ হুই। তারা ফসলের বীজ বিক্রি করছিলেন। তারাই ধীরে ধীরে গড়ে তুলেছেন বহুজাতিক ব্র্যান্ড সিপি। থাই ভাষার দুটি শব্দ চারোয়েন পোকফান্ড (Charoen Pokphand) ) থেকে সংক্ষেপে সিপি। এর অর্থ হলো, খাদ্যে সমৃদ্ধি। গত এক শতাব্দীর মধ্যে কৃষিভিত্তিক এ কোম্পানিটি এখন এশিয়ার অন্যতম খাদ্য তৈরি, সরবরাহ ও বিতরণকারী প্রতিষ্ঠান। বিশ্বের ৩৫টি দেশে ব্যবসা বিস্তারের মাধ্যমে হয়ে উঠেছে কিচেন অব দ্য ওয়ার্ল্ড। ৩৩ বিলিয়ন ডলারের এই বহুজাতিক কোম্পানিটি বিশ্বব্যাপী দুই লাখ ৮০ হাজার লোকের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করেছে।
গবেষণার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠানটি সারা বিশ্বে তাদের পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণ করে। তাদের উৎপাদিত ব্রয়লার মুরগি, লেয়ার, চিংড়ি ও ডেইরিসহ বিভিন্ন কৃষিপণ্য শতভাগ নিরাপদ বলে দাবি করে কোম্পানিটি। কোম্পানির মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রধান মো. কামরুজ্জামান বললেন, ‘বাংলাদেশে এ প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম নিয়ে সিপি বাংলাদেশে আধুনিক প্রযুক্তি ও প্রাকৃতিক সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে পরিবেশবান্ধব উপায়ে ব্যবসা করছে। দেশে প্রায় সাড়ে তিন হাজার কর্মসংস্থান নিশ্চিত করেছে সিপি। খাদ্য প্রকৌশল, যন্ত্র প্রকৌশল, ব্যবসায় প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনাসহ বিভিন্ন বিষয়ে স্নাতকধারী শিক্ষার্থীদের জন্য ভালো গন্তব্য এখানে। সিপির মূলনীতি হলো : জেনে নাও, বেড়ে ওঠো ও নেতৃত্ব দাও।’
বাংলাদেশে এর তিন ধরনের কার্যক্রম আছে। ফিড, ফার্ম ও ফুড। গবাদিপশু, পোষাপাখি ও মাছের খাদ্য তৈরি হয় ফিড প্রকল্পের আওতায়। দেশে চিটাগং, গাজীপুর ও চুয়াডাঙ্গায় রয়েছে ফিড মিল। এতে তৈরি করা খাদ্য সারাদেশে সিপি পরিচালনাধীন বিভিন্ন খামারে নেওয়া হয়। এজন্য রয়েছে নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থা। কোম্পানির ফার্মগুলোর প্রয়োজন পূরণের পাশাপাশি ওই তিনটি ফিড মিল থেকে ফিড সরবরাহ করা হয় বিভিন্ন এলাকায়।
গাজীপুরের চন্দ্রায় সিপির প্রধান কার্যালয়ের পেছনেই রয়েছে কয়েকশ একর জায়গাজুড়ে ফিড মিল। কর্মকর্তারা জানান, ফিড মিল ছাড়াও সিপির মালিকানাধীন চারটি লেয়ার মুরগির খামার থেকে প্রতিদিন গড়ে দেড় লাখ ডিম সংগ্রহ হয়। এছাড়া ছয়টি ব্রয়লার খামারে মাসে গড়ে দুই লাখ মুরগি উৎপাদন হয়। এছাড়া দুটি মাছের খামার এবং একটি চিংড়ি চাষের প্রকল্প রয়েছে। সিপির খামার থেকে সপ্তাহে একদিন বয়সী দেড় লাখ বাচ্চা উৎপাদন হয়।
হ্যাচারির বাচ্চাগুলোকে ওষুধ ও রোগ প্রতিরোধক টিকাসহ সবকিছুই দেওয়া হয় উন্নত প্রযুক্তির সাহায্যে। আটটি জেলায় রয়েছে এসব হ্যাচারি।
ফিড মিল থেকে শুরু করে মুরগির মাংস প্রক্রিয়াজাত করা পর্যন্ত প্রতিটি পর্যায়ে ব্যাপক নিরাপত্তা ও সাবধানতা অবলম্বন করায় বিশেষ আস্থা অর্জন করে সিপি। প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা মো. আবদুস সাত্তার বলেন, ‘ভেনটিলেশন সিস্টেম, তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণসহ পানি ও খাবার ব্যবস্থাপনা করা হয় সম্পূর্ণ আধুনিক পদ্ধতিতে। দুর্গন্ধ যাতে লোকালয়ে পৌঁছতে না পারে, সেজন্য রয়েছে অভ্যন্তরীণ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ব্যবস্থা।’ বায়ো সিকিউরিটির কারণে সিপির খামারে বার্ড ফ্লু আক্রমণ হয়নি। ফলে তাদের ডিম সম্পূর্ণ স্বাস্থ্যকর বলে দাবি করেন আবদুস সাত্তার।
সাভারের হেমায়েতপুরে মাংস প্রক্রিয়াকরণ করে প্যাকেটজাত করা হয়। সিপির ওই প্যাকেটজাত মাংসই দেশের বিভিন্ন সুপার শপে পাওয়া যায়। এছাড়া সারা দেশের প্রায় ৩০০ আউটলেটে সিপির ফ্রাইড চিকেন পাওয়া যায়।
সিপি কর্মকর্তারা জানান, চাহিদা ও সরবরাহের ক্ষেত্রে শক্তিশালী সাপ্লাই চেইন অনুসরণ করায় এখানে কোনো পর্যায়ে অপচয় হয় না। নিয়মিত খাবারের স্বাদ ঠিক রাখার জন্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়।