Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 2:32 am

সাবেক এমডিসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট

নিজস্ব প্রতিবেদক: ক্যাডেট পাইলট নিয়োগে প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা ও বয়সের ক্ষেত্রে বিধি না মানা এবং লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় অবৈধ সুবিধা দেয়ার অভিযোগে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ চার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে চার্জশিট অনুমোদন দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল বুধবার দুদকের প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত কমিশন বৈঠকে এ চার্জশিট অনুমোদন দেয়া হয়।

বিষয়টি নিশ্চিত করে দুদক সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেন, আসামিরা অসৎ উদ্দেশ্যে ক্ষমতার অপব্যবহার এবং অপরাধমূলক অসদাচরণের মাধ্যমে অবৈধভাবে বিমানের ক্যাডেট পাইলট নিয়োগ করে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। আসামিদের বিরুদ্ধে ১৯৪৭ সনের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারা এবং দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় কমিশন কর্তৃক চার্জশিট দাখিলের অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

২০১৯ সালের ২৫ নভেম্বর দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে অনুসন্ধান কর্মকর্তা দুদকের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বাদী হয়ে এ বিষয়ে মামলা দায়ের করেন। তিনিই মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পালন করছেন।

মামলার আসামিরা হলেনÑবিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও আবুল মুনীম মোসাদ্দিক আহমেদ, পরিচালক (ফ্লাইট অপারেশন্স) ক্যাপ্টেন ফারহাত হাসান জামিল, বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ট্রেনিং সেন্টারের (বিএটিসি) অধ্যক্ষ পার্থ কুমার পণ্ডিত এবং বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ব্যবস্থাপক (নিয়োগ) ফখরুল হোসেন চৌধুরী।

তদন্ত প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, ‘আসামিরা ২০১৮ সালে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসে ক্যাডেট পাইলট নিয়োগের সময় প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা ও বয়স নির্ধারণে বিমানের প্রচলিত বিধিবিধান অনুসরণ করেননি। নিজেদের ইচ্ছেমতো ব্যাখ্যা দিয়ে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে এবং পরে ওই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি সংশোধন করে ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল মুনীম মোসাদ্দিক আহমেদের ভাতিজাসহ ৩০ জন প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা শিথিল করে নিজেরা লাভবান হয়ে ওই প্রার্থীদের অবৈধ সুবিধা দেন। লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার মানবণ্টন ম্যানুয়াল অনুযায়ী না করে মৌখিক পরীক্ষায় ৫০ শতাংশ নম্বর রেখে বিশেষ প্রার্থীদের অবৈধ সুবিধা দেয়া এবং লিখিত পরীক্ষায় গ্রেস দেয়ার মাধ্যমে প্রার্থী চূড়ান্ত করে অবৈধভাবে বিমানের ক্যাডেট পাইলট নিয়োগ দেয়া হয়েছে।’

দুদক জানায়, ক্যাডেট পাইলট নিয়োগে ভাইভা পরীক্ষায় সব পরিচালকসহ কমিটির সদস্য সংখ্যা ছিল ১০ জন। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ৭৬ প্রার্থীর মধ্যে ২২ জনকে মৌখিক পরীক্ষায় ফেল করানো হয়েছে। অথচ লিখিত পরীক্ষায় কম নম্বর পাওয়া অনেককেই মৌখিক পরীক্ষায় পাস করানো হয়েছে। এছাড়া ১০০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষার সঙ্গে ১০০ নম্বরের ভাইভা নেয়ার কোনো নজির বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস বিধিমালায় নেই। পাইলট নিয়োগের বয়স যুক্তিহীনভাবে ৪০ বছর পর্যন্ত বাড়িয়ে নীতিহীন কাজ হয়েছে, যা অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে। অর্থাৎ ক্যাডেট পাইলট নিয়োগ প্রক্রিয়ার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি থেকে শুরু করে ৩২ জনকে নিয়োগ দেয়া পর্যন্ত অনিয়ম হয়েছে।

আসামিদের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার ও অপরাধমূলক অসদাচরণের দায়ে ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারা এবং দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।

অভিযোগ অনুসন্ধানে সাবেক এমডি মোসাদ্দিক আহমেদ, সাবেক এমডি ও পরিচালক (ফ্লাইট অপারেশন্স) ক্যাপ্টেন ফারহাত হোসেন জামিল, ব্যবস্থাপক (নিয়োগ) ফখরুল হোসেন চৌধুরী এবং বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ট্রেনিং সেন্টারের (বিএটিসি) অধ্যক্ষ পার্থ কুমার পণ্ডিতসহ বিমানের বর্তমান ও সাবেক সাত পরিচালককে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক।

২০১৯ সালের ২৯ জুলাই জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ক্যাপ্টেন ফারহাত হাসান জামিল দাবি করেন, ‘পাইলট নিয়োগ নিয়ে কোনো দুর্নীতি হয়নি। আর ঘুষ, দুর্নীতিও হচ্ছে না।’