প্রতিনিধি, ফরিদপুর: ফরিদপুর-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) মজিবুর রহমান ওরফে নিক্সন চৌধুরীর বিরুদ্ধে ফরিদপুর আদালতে দ্রুত বিচার আইনে মামলা হয়েছে। এ মামলায় ৯৮ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাত আরও ৩০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। গত বুধবার ভাঙ্গা উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি সাইদুর রহমান সিকদার ওরফে মিঠু এ অভিযোগ দাখিল করেন। আদালত অভিযোগটি তদন্তের জন্য ফরিদপুর পিবিআই পুলিশকে দায়িত্ব দিয়েছেন।
মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে প্রাণনাশের হুমকি, চাঁদাবাজি, দাঙ্গা সৃষ্টি, সন্ত্রাসীদের মদত দেয়া ও অন্যের সম্পদ লুণ্ঠনের অভিযোগ আনা হয়েছে। এ মামলায় অন্য আসামিদের মধ্যে রয়েছেনÑবরখাস্ত ফরিদপুর জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শাহাদাৎ হোসেন, ভাঙ্গা থানার সাবেক ওসি মামুন আল ইসলাম, সাবেক দুই উপজেলা চেয়ারম্যান, স্থানীয় আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের নেতাকর্মী, সাবেক এমপি নিক্সন চৌধুরী-সমর্থিত ভাঙ্গা উপজেলা ও ইউনিয়নের সাবেক জনপ্রতিনিধি এবং আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্লাহর সমর্থিত নেতাকর্মীরা।
মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে সাইদুর রহমান মিঠুর পক্ষের আইনজীবী নুর আলম সিদ্দিকী লালন জানান, বাদীপক্ষের অভিযোগটি শুনানি শেষে আমলে নেন আদালত। পরে মামলার তদন্তের জন্য জেলা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক মোহাম্মদ নাসিম মাহমুদ।
মামলার এজাহারে বলা হয়, গত ৫ জুলাই সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটা আরোপ নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শুরু হয়। এরই ধারাবাহিতায় ৩ আগস্ট সকাল ১০টায় ভাঙ্গা ইন্টারচেঞ্জ এলাকায় মহাসড়কে বাদীসহ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা একটি শান্তিপূর্ণ মিছিল করেন। ওইদিন প্রধান আসামি সাবেক এমপি নিক্সন চৌধুরী জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শাহাদাৎ হোসেন, ভাঙ্গার সাবেক ওসি মামুন আল ইসলামসহ এক থেকে ১০নং আসামির নির্দেশনায় ও পরস্পর যোগসাজশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে প্রতিহত করার জন্য সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ দেন।
নালিশের বিবরণে জানা যায়, আসামিদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ অংশগ্রহণে হত্যার উদ্দেশ্যে শিক্ষার্থীদের লক্ষ করে ককটেল, হাতবোমা ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। ভাঙ্গা থানার ওসি মামুন আল ইসলামসহ তার সহযোগীরা প্রায় ১০০ রাউন্ড গুলি ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। এতে বাদীসহ ছাত্র-জনতা ও সাধারণ পথচারী আহত হন। একপর্যায়ে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে বাদীসহ আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীরা ভাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যান চিকিৎসা নিতে। সেখানেও আসামিদের আক্রমণ ও ভীতি সৃষ্টির কারণে নিরুপায় হয়ে আহতরা অন্যখানে চিকিৎসা নেন। এ ঘটনায় মামলার জন্য কয়েক দিন পর ভাঙ্গা থানায় যান বাদী। কিন্তু ওসি মামুন আল ইসলামের কাছে কোনো আইনি সহায়তা না পাওয়ায় ফরিদপুর কোর্টের দ্বারস্থ হন বাদী।
এ বিষয়ে ভাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাইফুর রহমান মিরন দাবি বলেন, ‘যদি কোনো ঘটনা ঘটে থাকে তাহলে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হোক, কিন্তু কোনো নিরীহ ব্যক্তি যেন হয়রানির শিকার না হন।’
সাবেক এমপি নিক্সন চৌধুরীর সমর্থক উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সোবাহান মুন্সী দাবি করেন, ভাঙ্গায় শিক্ষক, বয়োবৃদ্ধ, সংবাদকর্মীসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের জড়িয়ে মিথ্যা দুটি মামলায় হয়রানি করা হচ্ছে। এ বিষয়ে নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে ন্যায়বিচারের দাবি জানান তিনি।
ভাঙ্গা থানার সাবেক ওসি মামুন আল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, বাদীকে তিনি চেনেন না। অভিযোগটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট।