উপমহাদেশের প্রখ্যাত কণ্ঠশিল্পী মান্নাদের গাওয়া ‘কফি হাউজের সেই আড্ডাটি আজ আর নেই, কোথায় হারিয়ে গেল সোনালি বিকেলগুলো সেই গানটি শুনেনি বা পছন্দ করেন না এমন বাঙালি খুব কম পাওয়া যাবে। এ গানটি তারাই শুনেন যাদের জীবনে আছে যৌবনে ছুটে চলার দুরন্ত সব স্মৃতি, প্রাণবন্ত আড্ডার মুখরিত পথচলা, বন্ধুদের সঙ্গে কাটানো সোনালি সময়ের উচ্ছ্বাস। ব্যস্ততাকে পাশ কাটিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের ভালোবাসার টানে ৮ মার্চ ছুটে আসেন অনেক প্রাক্তন শিক্ষার্থী। তাদের একটাই চাওয়া প্রাণের ক্যাম্পাস রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আবার ফিরে পাব হারানো দিনের প্রিয় বন্ধুদের। হয়েছেও তাই। সেদিন তারা ফিরে পেয়েছিলেন প্রিয় বন্ধুদের, মিলেছিলেন প্রাণের বন্ধনে। বাংলা বিভাগের দ্বিতীয় অ্যালামনাই চলেছে দুই দিন ধরে। ওই দুইদিনে সাবেক ও বর্তমানদের প্রাণবন্ত আড্ডা চোখে পড়েছে। মতিহারের সবুজ চত্বরে পুরোনো দিনের বন্ধুদের নিয়ে অনেকেই দাপিয়ে বেড়িয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আনাচে-কানাচে। খেলা, গান, নাচ আর ভালোবাসায় সিক্ত হয় বিভাগের সব শিক্ষার্থী। দু’দিনের জন্য হলেও প্রাক্তনরা ফিরে পেয়েছিলেন সোনালী অতীত। বসন্তের মাঝামাঝিতে জীবনের হাজারো ব্যস্ততায় আরও বসন্তের সুবাস নিতেই তাদের একত্র হয়েছিলেন।
৮ মার্চ সকাল ৯টায় জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া, জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও পায়রা উড়িয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আবদুল খালেক। উদ্বোধন শেষে শহীদুল্লাহ কলাভবনের সামনে প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে এক বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করা হয়। শোভাযাত্রা শেষে অগ্রজ ও অনুজদের আনন্দ সম্মিলন শুরু হয়। এরপর বেলা ১১টায় অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা সভা। সভায় বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের জন্য সাত শিক্ষার্থী ও দুই গবেষককে বিশেষ সম্মাননা পুরস্কার দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আবদুস সোবহান ও সহ-উপাচার্য আনন্দ কুমার সাহা। এছাড়া বিকাল ৫টায় স্মৃতিচারণ ও উš§ুক্ত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে প্রথম দিনের সমাপনী অনুষ্ঠিত হয়। শুক্রবার ৯ মার্চ একইভাবে চলে সাবেক ও বর্তমানদের স্বপ্নের আড্ডা।
সম্মিলনে যোগ দিতে ছুটে এসেছেন বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও সাবেক অতিরিক্ত সচিব আপেল আবদুল্লাহ। অনেকদিন পর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের বন্ধুদের কাছে পেয়ে কী করবেন সেটাই ভাবতে পারছিলেন না। তিনি বলেন, সে সময়ের আড্ডা-গল্প, ক্যাম্পাস দাপিয়ে বেড়ানো,
নাচ-গান, হাসি-তামাশা, গল্প-গুজব আর কখনও ফিরে আসবে না জানি। তবু দু-এক দিনের জন্য ক্যাম্পাসে আসতে পেরে ভালো লাগছে। পুরোনো স্মৃতিকে ফিরে পাব।
বিভাগের বর্তমান শিক্ষার্থী সেতু খাতুন বলেন, অগ্রজরা সবসময়ই আমাদের অনুপ্রেরণা। তাদের কাছ থেকে অনেক কিছুই শেখার আছে। তাদের কাছে পেয়ে আমরা আনন্দিত। অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় দিন আনন্দ বিচরণ, স্মৃতিচারণ, র্যাফেল ড্র, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
নাজমুল মৃধা পাভেল
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়