নিজস্ব প্রতিবেদক: বিদেশে সম্পদ অর্জন ও নির্বাচনী হলফনামায় তথ্য গোপন প্রসঙ্গে সাবেক ভূমিমন্ত্রীর ব্যাখ্যাকে অযৌক্তিক, অবান্তর ও অগ্রহণযোগ্য বলে মন্তব্য করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। একই সঙ্গে হলফনামায় মিথ্যা বা অপর্যাপ্ত তথ্য প্রকাশ করায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইনটেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) এবং অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) তা যথাযথভাবে যাচাইয়ের আহ্বান জানায় সংস্থাটি।
গত রোববার এক সংবাদ বিবৃতিতে সংস্থাটি এসব কথা জানায়।
এ বিষয়ে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সর্বশেষ চারটি জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেয়া ছয় হাজার সাত প্রার্থীর হলফনামার ভিত্তিতে সার্বিক আসন ও দলভিত্তিক তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরতে একটি ড্যাশবোর্ড প্রস্তুত ও তথ্য বিশ্লেষণ করে টিআইবি, যার উদ্দেশ্য নির্বাচনের প্রার্থী সম্পর্কে তথ্য, প্রার্থীদের আয় ও সম্পদ বৃদ্ধি এবং হলফনামায় প্রদর্শিত আয় ও সম্পদের তুলনামূলক চিত্র জনস্বার্থে তুলে ধরা। কিন্তু সাবেক ভূমিমন্ত্রীর প্রদর্শিত সম্পদের সঙ্গে তার প্রকৃত সম্পদের গরমিল থাকায় তার বিদেশে সম্পদ অর্জনের বিষয়টি উঠে এসেছে।
তিনি বলেন, সংবাদ সম্মেলনে সাবেক এ মন্ত্রী অভিযোগ করেন, তাকে ও সরকারকে বিব্রত করতেই টিআইবি এ কাজ করেছে। যদিও টিআইবি মনে করে এ ধরনের সঠিক তথ্য প্রকাশিত হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিব্রত হওয়াই স্বাভাবিক।
হলফনামায় বিদেশে থাকা সম্পত্তি আলাদা করে ঘোষণা করার কোনো কলাম নেই, এ অজুহাতে সেসব সম্পদের উল্লেখ করেননিÑসাবেক ভূমিমন্ত্রীর এ ব্যাখ্যাকে অযৌক্তিক ও অগ্রহণযোগ্য উল্লেখ করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, প্রথমত, সাবেক ভূমিমন্ত্রী হলফনামায় তথ্য গোপন করেছেন। আর নির্বাচনী হলফনামায় মিথ্যা বা অপর্যাপ্ত তথ্য প্রকাশ করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। হলফনামায় কোনো প্রার্থীর সব সম্পদের বিবরণ প্রদানের বাধ্যবাধকতা রয়েছে, তা দেশে বা বিদেশে যেখানেই থাকুক না কেন। বিদেশে সম্পদের জন্য আলাদা কলাম নেই বলে খোঁড়া যুক্তি দিয়ে তিনি নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা করছেন। আয়কর বিবরণীতে না থাকায় হলফনামায়ও বিদেশে সম্পদের কথা উল্লেখ করেননি বলে যে দাবি করেছেন, যা নিতান্তই অবান্তর যুক্তি।
বিদেশে সম্পদ গোপন করার ঘটনায় একটি নয়, সাবেক ভূমিমন্ত্রী বেশ কয়েকটি আইন ভেঙেছেন বলে উল্লেখ করে ড. জামান বলেন, সংবিধানের ১৪৭(৩) ধারা অনুযায়ী, দেশের মন্ত্রীসহ আট ধরনের সাংবিধানিক পদাধিকারী কোনো লাভজনক পদ কিংবা বেতন-ভাতাদিযুক্ত পদ বা মর্যাদায় বহাল হবেন না, কিংবা মুনাফা লাভের উদ্দেশ্যে যুক্ত কোনো কোম্পানি, সমিতি বা প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা বা পরিচালনায় কোনোরূপ অংশগ্রহণ করবেন না। অর্থাৎ সাবেক ভূমিমন্ত্রী শপথ নিয়ে সাংবিধানিক এ বিধানকেও লঙ্ঘন করেছেন, যা কোনোভাবে মেনে নেয়ার সুযোগ নেই।
সাবেক ভূমিমন্ত্রী দেশ থেকে টাকা নিয়ে বিদেশে সম্পদ গড়েননি দাবি করে যে বক্তব্য দিয়েছেন এবং তা তদন্তে যে কমিটি করার প্রস্তাব করেছেন, তা একেবারে অবান্তর বলে মনে করে টিআইবি।
অর্থপাচারসহ সাংবিধানিক ও আইনি বিধানের লঙ্ঘন কোনো তদন্ত কমিটির বিষয় নয়, বরং যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ায় দুদক, এনবিআর, বিএফআইইউ এবং সিআইডিসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে সুষ্ঠু তদন্তসাপেক্ষে যথাযথ জবাবদিহি নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।