ইসমাইল আলী: ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক থেকে উড়ালপথে (এলিভেটেড) যুক্ত হবে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক। মাঝে এটি যুক্ত করবে ঢাকা-মাওয়া মহাসড়ককেও। ঢাকার বাইরে দিয়ে তিন মহাসড়ককে যুক্ত করবে প্রস্তাবিত এক্সপ্রেসওয়েটি। সাভার থেকে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত প্রস্তাবিত এক্সপ্রেসওয়েটি ছাড়াও সাভারে একটি ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হবে। এর নাম দেওয়া হয়েছে ইস্ট-ওয়েস্ট এক্সপ্রেসওয়ে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১৭ হাজার ২০০ কোটি টাকা।
সম্প্রতি এক্সপ্রেসওয়েটির সম্ভাব্যতা যাচাই প্রতিবেদন জমা দিয়েছে চার পরামর্শক প্রতিষ্ঠান অস্ট্রেলিয়ার স্ম্যাক ইন্টারন্যাশনাল, ডেনমার্কের কাউই এবং বাংলাদেশের এসিই ও ডেভকন।
এতে বলা হয়, ইস্ট-ওয়েস্ট এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের দৈর্ঘ্য হবে ৩৯ দশমিক ২৪ কিলোমিটার। এটি ঢাকার পশ্চিম দিকের যানবাহনকে আরিচা থেকে ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কের কেরানীগঞ্জ দিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জকে যুক্ত করবে। এশিয়ান হাইওয়ের রুট উন্নয়ন ও ঢাকা স্ট্র্যাকচার প্ল্যানকে সামনে রেখে এটি নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছে। ফলে এক্সপ্রেসওয়েটি জয়দেবপুর, টাঙ্গাইল ও ময়মনসিংহ থেকে আসা যানবাহনকে ঢাকার বাইরে দিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ও পদ্মা সেতুর পথে যুক্ত করবে। এতে ব্যয় হবে ১৬ হাজার ৩৮৮ কোটি ৫১ লাখ টাকা।
এর বাইরে সাভারের ট্রাফিক অবস্থার উন্নয়নে সাভার থেকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক পর্যন্ত তিন দশমিক ৬৩ কিলোমিটারের একটি ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হবে। এজন্য ব্যয় হবে ৮০৫ কোটি ৯১ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৭ হাজার ১৯৪ কোটি ৪২ লাখ টাকা। টোল দিয়ে এক্সপ্রেসওয়েটিতে যানবাহন চলতে পারবে।
এক্সপ্রেসওয়েটি নির্মাণে জমি অধিগ্রহণ করতে হবে ৩৪১ একর। এতে প্রায় ৮০০ বাসাবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আর ছয় লেনের এক্সপ্রেসওয়েটির প্রস্থ ধরা হয়েছে ২০.৫৬ মিটার। আর ওঠানামার র্যাম্পের প্রস্থ ধরা হয়েছে ৭ দশমিক ১০ মিটার। সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বে (পিপিপি) এটি নির্মাণের সুপারিশ করা হয়। যদিও এক্সপ্রেসওয়েটি নির্মাণে আগ্রহ দেখিয়েছে মালয়েশিয়া। আগামী বছর পিপিপির অংশীদার বা অর্থায়নের ভিন্ন কোনো উৎস নির্বাচনের পাশাপাশি বিস্তারিত নকশা প্রণয়ন করা হবে। এরপর জমি অধিগ্রহণ ও নির্মাণকাজ করা হবে। এতে ২০২৪ সালে এক্সপ্রেসওয়েটি নির্মাণ সম্পন্ন হবে।
সমীক্ষার তথ্যমতে, এক্সপ্রেসওয়ের জন্য জমি অধিগ্রহণ ও ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনে ব্যয় ধরা হয়েছে তিন হাজার কোটি টাকা। এছাড়া বিস্তারিত নকশা প্রণয়নে ব্যয় হবে ৩৫১ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। আর শুধু এক্সপ্রেসওয়েটি নির্মাণে ব্যয় হবে ১১ হাজার ৭২৫ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। এছাড়া পরামর্শক ব্যয় ২৩৪ কোটি ৫২ লাখ, দর সমন্বয় ৭২৪ কোটি ৬৫ লাখ ও ভৌত সমন্বয় ৩৫১ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। এতে কিলোমিটারপ্রতি ব্যয় পড়বে ৪১৭ কোটি ৬৯ লাখ টাকা।
এদিকে সাভার ফ্লাইওভার নির্মাণে ব্যয় হবে ৭০৫ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। আর বিস্তারিত নকশা প্রণয়নে ব্যয় হবে ২১ কোটি ১৮ লাখ, পরামর্শক ব্যয় ১৪ কোটি ১২ লাখ, দর সমন্বয় ৪৩ কোটি ৬২ লাখ ও ভৌত সমন্বয় ২১ কোটি ১৮ লাখ টাকা। এতে ফ্লাইওভারটি নির্মাণে কিলোমিটারপ্রতি ব্যয় পড়বে ২২২ কোটি টাকা।
এক্সপ্রেসওয়েটিতে দৈনিক গড়ে ২৭ থেকে ৩৩ হাজার যানবাহন চলাচল করবে বলে ধরা হয়েছে। এতে ৩৬ বছরে টোলের মাধ্যমে পিপিপি বিনিয়োগকারী অর্থ তুলে নিতে পারবে। এক্ষেত্রে কিলোমিটারপ্রতি সম্ভাব্য হারও তুলে ধরা হয়েছে সম্ভাব্যতা যাচাই প্রতিবেদনে। এতে দেখা যায়, প্রতি কিলোমিটারে মোটরসাইকেল ও অটোরিকশার টোল হার হবে তিন টাকা ১৩ পয়সা, ব্যক্তিগত গাড়ি ও পিক-আপে ছয় টাকা ২৭ পয়সা, ছোট ও মাঝারি ট্রাকে ৯ টাকা ৪০ পয়সা, বড় ট্রাকে ১২ টাকা ৫৩ পয়সা এবং মিনিবাস ও বাসে ১৮ টাকা ৮০ পয়সা। অর্থাৎ পুরো এক্সপ্রেসওয়েতে চলাচলে টোল পড়বে মোটরসাইকেল ও অটোরিকশায় ১২৩ টাকা, ব্যক্তিগত গাড়ি ও পিক-আপে ২৪৬ টাকা, ছোট ও মাঝারি ট্রাকে ৩৬৭ টাকা, বড় ট্রাকে ৪৯২ টাকা এবং মিনিবাস ও বাসে ৭৩৮ টাকা।
জানতে চাইলে সেতু বিভাগের সিনিয়র সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম শেয়ার বিজকে বলেন, ইস্ট-ওয়েস্ট এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে তিন মহাসড়ককে যুক্ত করছে। ফলে এটি ঢাকার ভেতরের যানজটকে এড়িয়ে উত্তর এবং দক্ষিণ, দক্ষিণ-পূর্ব ও দক্ষিণ-পশ্চিমের জেলাগুলোকে যুক্ত করতে ভ‚মিকা রাখবে। এখন এক্সপ্রেসওয়েটির জন্য অর্থায়নের উৎস খোঁজা হবে। এরপর নির্মাণ শুরুর উদ্যোগ নেওয়া হবে।