সাময়িক হিসাবে জিডিপি প্রবৃদ্ধি বেড়ে দাঁড়াল ৫.৮২ শতাংশ

ইসমাইল আলী: চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই প্রান্তিকে অর্থনীতির গতি ছিল অনেক কম। বিশেষত দ্বিতীয় প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রভাব পড়ে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধিতে। প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ছয় শতাংশের ওপর থাকলেও দ্বিতীয় প্রান্তিকে তা তিন দশমিক ৭৮ শতাংশে নেমে যায়। তবে সাময়িক হিসাবে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রবৃদ্ধি আকস্মিকভাবে বেড়ে গেছে। যদিও অর্থনীতির বিভিন্ন সূচক রয়েছে দুর্বল অবস্থায়।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) গতকাল প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। এতে দেখা যায়, সাময়িক হিসাবে চলতি অর্থবছর প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে পাঁচ দশমিক ৮২ শতাংশ। গত অর্থবছর চূড়ান্ত হিসাবে এ হার ছিল পাঁচ দশমিক ৭৮ শতাংশ। যদিও চলতি অর্থবছর কৃষি ও শিল্প খাতে প্রবৃদ্ধি কমে গেছে বলেই দেখিয়েছে বিবিএস। সেবা খাতে প্রবৃদ্ধি বাড়লেও তা খুবই সামান্য। এরপরও অনেকটা অজ্ঞাত কারণে বেড়ে গেছে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার।

বিবিএসের তথ্যমতে, চলতি অর্থবছর সাময়িক হিসাবে কৃষি খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে তিন দশমিক ২১ শতাংশ, যা গত অর্থবছর ছিল তিন দশমিক ৩৭ শতাংশ। অর্থাৎ প্রবৃদ্ধি কমেছে শূন্য দশমিক ১৬ শতাংশ। একইভাবে চলতি অর্থবছর শিল্প খাতে প্রবৃদ্ধি কমে দাঁড়িয়েছে ছয় দশমিক ৬৬ শতাংশ, যা গত অর্থবছর ছিল আট দশমিক ৩৭ শতাংশ। অর্থাৎ শিল্প খাতে প্রবৃদ্ধি কমেছে এক দশমিক ৭১ শতাংশ। শিল্প খাতের এ প্রবৃদ্ধি চার বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। এর আগে ২০২০-২১ অর্থবছর শিল্প খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ১০ দশমিক ২৯ শতাংশ ও ২০২১-২২ অর্থবছর ৯ দশমিক ৮৬ শতাংশ।

চলতি অর্থবছর সেবা খাতে প্রবৃদ্ধি মাত্র শূন্য দশমিক ৪৩ শতাংশ বেড়েছে। গত অর্থবছর এ খাতে প্রবৃদ্ধির হার ছিল পাঁচ দশমিক ৩৭ শতাংশ, যা চলতি অর্থবছর সাময়িক হিসাবে দাঁড়িয়েছে পাঁচ দশমিক ৮০ শতাংশ। কৃষি ও শিল্পে প্রবৃদ্ধি হ্রাস পাওয়ার পরও সার্বিকভাবে জিডিপি প্রবৃদ্ধি কীভাবে বাড়লÑতার কোনো ব্যাখ্যা বিবিএসের প্রতিবেদনে দেয়া হয়নি। এছাড়া চলতি অর্থবছর প্রথম দুই প্রান্তিকে সেবা খাতে প্রবৃদ্ধি হ্রাস পাওয়ার পরও সাময়িক হিসাবে এ খাতের প্রবৃদ্ধি কেন বাড়ল তারও ব্যাখ্যা নেই। এর আগে প্রথম প্রান্তিকে সেবা খাতে তিন দশমিক ৭৩ ও দ্বিতীয় প্রান্তিকে তিন দশমিক ০৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছিল।

প্রসঙ্গত, গত অর্থবছরের শুরু থেকে চলা ডলার সংকট আরও প্রকট আকার ধারণ করা, আমদানিতে বড় ধরনের ধসের ফলে শিল্প খাতে প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়া, সরকারের উন্নয়ন বাজেট বাস্তবায়নে ধীরগতিসহ নানা কারণে চলতি অর্থবছর প্রবৃদ্ধি আরও কমবে বলেই প্রাক্কলন করেছিল বিশ্বব্যাংক। তবে বিবিএসের প্রতিবেদনে তার বিপরীত চিত্রই দেখা গেছে।

এদিকে চলমান অর্থনৈতিক মন্দা ও মাঝে কয়েক মাস রাজনৈতিক অস্থিরতার পরও বিনিয়োগে প্রবৃদ্ধি দেখিয়েছে বিবিএস। চলতি অর্থবছর বিনিয়োগের পরিমাণ দেখানো হয়েছে জিডিপির ৩০ দশমিক ৯৮ শতাংশ। গত অর্থবছর বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল জিডিপির ৩০ দশমিক ৯৫ শতাংশ। এছাড়া মন্দায় মানুষ সঞ্চয় ভেঙে চলছে বলে বিভিন্ন গবেষণায় দেখানো হলেও বিবিএসের হিসাবে মোট দেশজ সঞ্চয় ও জাতীয় সঞ্চয় বেড়েছে।

অন্যদিকে সম্প্রতি ডলারের রেকর্ড অবমূল্যায়ন হলেও তা জিডিপি ও মাথাপিছু আয়ের ক্ষেত্রে বিবেচনা করা হয়নি। সাময়িক হিসাবে চলতি অর্থবছর মাথাপিছু আয় দেখানো হয়েছে দুই হাজার ৭৮৪ ডলার, যা গত অর্থবছর ছিল দুই হাজার ৭৪৯ ডলার। এক্ষেত্রে ডলারের বিনিময় হার ১০৯.৯৭ টাকা দেখানো হয়েছে। অথচ গত ৮ মে ডলারের বিনিময় হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১৭ টাকা। এটিকে বিবেচনায় নেয়নি বিবিএস।

বিবিএসের প্রতিবেদনে দেখা যায়, শিল্প খাতের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা ছিল বিদ্যুৎ ও গ্যাস খাতে। এ খাতে গত অর্থবছর প্রবৃদ্ধি ছিল দুই দশমিক ৪৬ শতাংশ, যা চলতি অর্থবছর কমে দাঁড়িয়েছে শূন্য দশমিক ৩৩ শতাংশ ঋণাত্মক। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে প্রবৃদ্ধি তিন দশমিক ৪০ শতাংশ থেকে কমে দাঁড়িয়েছে শূন্য দশমিক ২১ শতাংশ ঋণাত্মক। আর গ্যাসের প্রবৃদ্ধি এক দশমিক ৮৪ শতাংশ ঋণাত্মক থেকে কমে দাঁড়িয়েছে শূন্য দশমিক ৯৩ শতাংশ ঋণাত্মক। এছাড়া সেবা খাতের আওতায় পানি সরবরাহ খাতে প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে শূন্য দশমিক ২৭ শতাংশ ঋণাত্মক।

বিবিএসের তথ্যমতে, ২০২৩-২৪ অর্থবছর বৃহৎ শিল্পে প্রবৃদ্ধি অনেকখানি কমে গেছে। এ শিল্পে প্রবৃদ্ধির হার ২০২২-২৩ অর্থবছর ছিল আট দশমিক ৫৩ শতাংশ, যা চলতি অর্থবছর হ্রাস পেয়ে হয়েছে ছয় দশমিক ৬০ শতাংশ। একইভাবে চলতি অর্থবছর ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে প্রবৃদ্ধির হারও হ্রাস পেয়েছে। গত অর্থবছর এ হার ছিল ৯ দশমিক ১৫ শতাংশ, চলতি অর্থবছর দাঁড়িয়েছে ছয় দশমিক ৮৪ শতাংশ। এছাড়া গত অর্থবছর কুটিরশিল্পে প্রবৃদ্ধি দাঁড়ায় ১০ দশমিক ০১ শতাংশ, যা চলতি অর্থবছর দাঁড়িয়েছে ছয় দশমিক ০৮ শতাংশ।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০