নিজস্ব প্রতিবেদক: সশস্ত্র বাহিনীতে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে সামরিক আইন সংস্কারে কমিশন গঠনের দাবি জানিয়েছেন সাবেক সেনা কর্মকর্তারা। তারা বলেন, সামরিক বাহিনীকে রাজনীতিমুক্ত করতে হবে। গত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে রাজনৈতিক কারণে যাদের চাকরিচ্যুত করা হয়েছে, তাদের পুনর্বহাল করতে হবে। যাদের চাকরির বয়স শেষ হয়েছে তাদের আর্থিক সহায়তা দিতে হবে।
রাজধানীর মহাখালী ডিওএইচএস এলাকার রাওয়া ক্লাব মিলনায়তনের ঈগল হলে গতকাল আয়োজিত ‘বৈষম্যমুক্ত সশস্ত্র বাহিনীÑবাংলাদেশ ২.০ বিনির্মাণ প্রয়োজনীয় রূপরেখা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা এ কথা বলেন। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) হাসান নাসিরের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কমান্ডার (অব.) নেছার আহমেদ জুলিয়াস।
মূল প্রবন্ধে বলা হয়, ক্ষমতাসীনদের স্বার্থে সশস্ত্র বাহিনীর নিরপেক্ষতা ও পেশাদারিত্ব বারবার বিঘ্নিত হয়েছে। সামরিক আইন ও নিয়মের অপব্যবহার হয়েছে। বাহিনীর মেধাবী কর্মকর্তাদের অযৌক্তিকভাবে সামরিক আদালতে দোষী সাব্যস্ত করে বিনা পেনশনে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। নেছার আহমেদ বলেন, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সামরিক বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে প্রশ্ন ওঠে। বিশেষ করে গত ১৫ বছরে গুম, খুন ও ‘আয়নাঘরের’ মতো মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়।
অনুষ্ঠানে সাবেক সেনা কর্মকর্তারা সেনাবাহিনী ও প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) কিছু কর্মকর্তার অনিয়ম-দুর্নীতি ও ‘আয়নাঘর’ বানিয়ে গুম-খুন ও নির্যাতনের কথা তুলে ধরেন। তারা এনটিএমসির মাধ্যমে বেআইনিভাবে ফোনে আড়িপাতার সমালোচনা করেন এবং এসব ঘটনায় জড়িত কর্মকর্তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহ এবং আইনজীবী আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বিশেষ অতিথি হিসেবে আলোচনায় অংশ নেন।
সারজিস আলম বলেন, খুনি-ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার অবৈধ সরকার সশস্ত্র বাহিনী, বিশেষ করে সেনাবাহিনীকে জনগণের বাহিনীর চেয়ে আওয়ামী বাহিনী হিসেবে বেশি ব্যবহারের চেষ্টা করেছে। সশস্ত্র বাহিনীর কতিপয় আওয়ামী দোসর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বিগত সরকারকে সহযোগিতা করেছেন। আগামীতে আবার যেন কোনো ফ্যাসিস্টের দোসর তৈরি হতে না পারে, তা নিশ্চিত করার দাবি করেন তিনি। অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমিকার সমালোচনা করে সারজিস বলেন, বর্তমানে যে সুশীলতা ও নিরপেক্ষ ভূমিকা দেখানো হচ্ছে, তা ছাত্র-জনতার আবেগ ও ত্যাগের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা।
হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ৫ আগস্টের পরে এ সরকারের উচিত ছিল কিছু পদক্ষেপ নেওয়া, যা তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়াবে। একটি হলো বিচার নিশ্চিত করা। এ সরকারে যারা রয়েছেন, তাদের বুঝতে হবে এ সরকার কোনো সংবিধান-নিয়ম মেনে আসেনি। তাই ফ্যাসিবাদ ব্যবস্থা বিলোপ করতে সংবিধান সংস্কার করতে হবে। তিনি বলেন, ‘দুই মাসে আমরা প্রত্যাশিত কোনো পদক্ষেপ দেখিনি, যার মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয়, এ সরকার বিপ্লবী সরকার।’
নিজের গুম-নির্যাতন ও চাকরিচ্যুত হওয়ার বর্ণনা দিয়ে লে. কর্নেল (অব.) হাসিনুর রহমান বলেন, ‘আমাকে ২০১১ সালে কর্মস্থল থেকে গুম করা হয়। ৪৩ দিন আমাকে হাত-পা ও চোখ বেঁধে রাখা হয়। আমার সঙ্গে আওয়ামী লীগ সরকার যে আচরণ করেছে, তা লজ্জাকর।’ জিয়াউল আহসানের সঙ্গে ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বের কারণে তাকে গুম, নির্যাতন ও চাকরিচ্যুত করা হয় বলে জানান তিনি।
আলোচনা অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন সাবেক রাষ্ট্রদূত মারুফ জামান, লে. কর্নেল (অব.) শাহির বীর প্রতীক, কমান্ডার (অব.) মোহাম্মদ শাহরিয়ার আকন্দ, মেজর (অব.) আবদুল্লাহ আল মাহমুদ, ক্যাপ্টেন (অব.) হেফাজ উদ্দিন, লেফটেন্যান্ট (অব.) সাইফুল্লাহ খান প্রমুখ।