নিজস্ব প্রতিবেদক: জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর যারা অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করেছিল, তারা ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে যতটা মনোযোগী ছিল, দেশের প্রতিরক্ষা বাহিনীর উন্নয়নে ততটা নজর তাদের ছিল না। গতকাল গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে ‘নৌ ও বিমানবাহিনীর নির্বাচনী পর্ষদ (প্রথম পর্ব) ২০২১’ এ যোগ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ মন্তব্য করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে প্রতিরক্ষা নীতিমালা প্রণয়ন করে দিয়ে গেছেন, তারই আলোকে আওয়ামী লীগের বর্তমান সরকার নৌ ও বিমানবাহিনীকে যুগোপযোগী করে গড়ে তুলতে কাজ করছে। অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি যুদ্ধজাহাজ ও যুদ্ধবিমানের ‘অপারেশনাল সক্ষমতা’ বাড়ানোর বহুমুখী পরিকল্পনা নিয়েছে।
তিনি বলেন, ‘১৯৭৫ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে যদি নির্মমভাবে হত্যা করা না হতো, তাহলে হয়ত অনেক আগেই আমাদের প্রতিটি বাহিনী আরও উন্নত ও সমৃদ্ধ হতে পারত। কিন্তু তখন যারা সংবিধান লক্ষণ করে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করেছিল, তাদের ক্ষমতাটাকে টিকিয়ে রাখার দিকে যতটা নজর ছিল, স্বাধীনতা, সার্বভৈৗমত্ব রক্ষায় আমাদের প্রতিরক্ষা শক্তি বৃদ্ধি বা সেটাকে আধুনিকায়ন করার দিকে তাদের কোনো দৃষ্টিই ছিল না। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যদিও তারা ছিল সামরিক শাসক। তারপরও আমি বলব, আমাদের সামরিক বাহিনীর উন্নয়নে আপনারা যদি একটু তুলনা করেন, তাহলে সেটা নিশ্চয়ই দেখতে পারবেন। সমুদ্র সীমার অধিকার নিয়ে জাতির জনকই আইন করে দিয়ে গিয়েছিলেন। মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনা করে একটা সীমারেখাও নির্দিষ্ট করেছিলেন। একদিকে ভারত, আরেকদিকে মিয়ানমার … দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো, ’৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর যারা সরকারে এসেছিল, তারা কখনও কেউ বিশাল এই সমুদ্রসীমায় বাংলাদেশের যে একটা অধিকার আছে, এই অধিকার নিয়ে কোনোদিন একটা কথাও বলেনি বা কোনো উদ্যোগই নেয়নি আমি বলব।’
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারে ফেরার পর এ ব্যাপারে উদ্যোগ নেয় জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘যার ফলে দুটো প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ঠিক রেখে বাংলাদেশ বিশাল সমুদ্রসীমা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।’
শোষিত বঞ্চিত মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আজীবন সংগ্রামের কথা তুলে ধরার পাশপাশি ১৯৭৫ সালে তাকে সপরিবারে হত্যার কথাও অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন সরকারপ্রধান।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ যেন বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে চলতে পারে, সেজন্য স্বাধীনতার পরপরই জাতির জনক কাজ শুরু করেছিলেন।
তিনি বলেন, ‘সীমিত শক্তির মধ্যেও স্বাধীন বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য যা যা প্রয়োজন, অতি অল্প সময়ের মধ্যে বঙ্গবন্ধু সেগুলো করে দিয়ে গেছেন। তিনি একটা পেশাদার, উন্নত সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। এবং সেই লক্ষ্যে তিনি একটা প্রতিরক্ষা নীতিমালা ১৯৭৪ সালে প্রণয়ন করেন। তাছাড়া একটা দক্ষ, শক্তিশালী, আধুনিক নৌবাহিনী গড়ে তোলার লক্ষ্যে যুগোসøাভিয়া ও ভারত থেকে পাঁচটি আধুনিক রণতরী সংগ্রহের পাশপাশি নৌবাহিনীর বৃহত্তম প্রশিক্ষণ ঘাঁটি বানৌজা ঈশা খাঁর কমিশনিং করেন এবং নৌবাহিনীকে নেভাল এনসাইন প্রদান করেন।’
তিনি বলেন, সে সময় যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে বঙ্গবন্ধুর ‘অপরিসীম প্রজ্ঞা ও প্রচেষ্টায়’ এদেশে একটি আধুনিক ও শক্তিশালী বিমানবাহিনীর যাত্রা শুরু হয়েছিল।
বঙ্গবন্ধুর সময়ই তখনকার সবচেয়ে আধুনিক যুদ্ধবিমান মিগ ২১ সংগ্রহ করা হয়েছিল জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘তাছাড়া এএন ২৬ পরিবহন বিমান, এমআই ৮ হেলিকপ্টার ও এয়ার ডিফেন্স রেডার এগুলো সবই তিনি সংগ্রহ করেন।’
নৌ ও বিমানবাহিনীর আধুনিকায়ন ও উন্নয়নে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের নেয়া নানা পদক্ষেপের কথাও অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন সরকারপ্রধান। ঢাকা সেনানিবাসের নৌ ও বিমানবাহিনী সদর দপ্তরে এ নির্বাচনী পর্ষদের আয়োজনে দুই বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।