নিজস্ব প্রতিবেদক: এসএমই খাতে প্রতি বছরই ব্যাংকগুলোর অর্থছাড় বাড়ছে। তবে একই সঙ্গে বাড়ছে এ খাতের খেলাপি ঋণ। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) এক গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
এতে বলা হয়েছে, এসএমই খাতের অর্থ ছাড়ের প্রবৃদ্ধি ২০১৬ সালে ছিল ২১ শতাংশ। এ সময়ে মোট অর্থছাড় হয়েছে এক লাখ ৩৬ হাজার ১৭৬ কোটি টাকা। অন্যদিকে খাতটিতে একই সময়ে খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ২২ হাজার ৪৯৪ কোটি টাকা।
গতকাল রাজধানীর মিরপুরে বিআইবিএম অডিটোরিয়ামে এক সেমিনারে ‘ইমপ্যাক্ট অব এসএমই ফাইন্যান্সিং অন ব্যাংকস প্রফিটেবিলিটি: অ্যান ইনকোয়ারি অ্যাক্রোস ব্যাংকস ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে আসে। প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন বিআইবিএমের সহকারী অধ্যাপক মো. মাসুদুল হক। সেমিনারে ‘ইমপ্যাক্ট অব সোশ্যাল সেফটি নেট প্রোগ্রামস অন দ্য পারফরম্যান্স অব এসওসিবিএস’ শীর্ষক আরও একটি গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন বিআইবিএমের পরিচালক (ডিএসবিএম) ও অধ্যাপক মো. মহীউদ্দিন ছিদ্দিকী।
এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিআইবিএমের চেয়ার প্রফেসর ও সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ। সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য রাখেন পরিচালক (গবেষণা উন্নয়ন ও কনসালট্যান্সি) ড. প্রশান্ত কুমার ব্যানার্জী।
‘ইমপ্যাক্ট অব এসএমই ফাইন্যান্সিং অন ব্যাংকস প্রফিটেবিলিটি: অ্যান ইনকোয়ারি অ্যাক্রোস ব্যাংকস ইন বাংলাদেশ’ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১০ সালে এসএমই খাতে খেলাপি ঋণ ছিল মাত্র দুই হাজার ৬৪৪ কোটি টাকা। ২০১৪ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১১ হাজার ৬১ কোটি টাকায়। এর পরের বছর তা আরও বেড়ে দাঁড়ায় ১৮ হাজার ৩৪২ কোটি টাকায়। ২০১৬ সালে আরও চার হাজার খেলাপি ঋণ যুক্ত হয়ে এর পরিমাণ দাঁড়িয়েছে সাড়ে ২২ হাজার কোটি টাকা। এদিকে ‘ইমপ্যাক্ট অব সোশ্যাল সেফটি নেট প্রোগ্রামস অন দ্য পারফরম্যান্স অব এসওসিবিএস’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে ব্যাংকগুলোর সমন্বয় জরুরি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী বলেন, এসএমই খাতে অর্থায়ন ব্যাংকের মুনাফায় তেমন প্রভাব ফেলছে না। কিন্তু আজকের এসএমই আগামী দিনে বড় প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে। এ বিষয়টিকে বিবেচনায় নিয়ে এসএমই খাতে অর্থায়নের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে হবে।
ডেপুটি গভর্নর এ খাতে জামানতবিহীন ঋণ দেওয়ার জন্য ফ্যাক্টরিংয়ের মতো নতুন সেবাগুলো চালু করার পরামর্শ দিয়েছেন।
অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শামসুল ইসলাম বলেন, ব্যাংকাররা গ্রামে পল্লিঋণের মাধ্যমে দেশের উন্নয়নে অগ্রণী ভ‚মিকা পালন করছে। তিনি বলেন, দারিদ্র্য দূরীকরণে এসএমই ঋণের গুরুত্ব অপরিসীম। তিনি এসএমই সেক্টর ও এসএমই অর্থয়নে সঠিক কর্মপন্থার প্রতি গুরুত্বারোপ করেন।
এবি ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মশিউর রহমান চৌধুরী বলেন, এসএমই’তে ঋণ দিতে পারলে বাংলাদেশ উন্নতি করবে। এসএমই-লোন কোন সেক্টরে ব্যবহার করা হচ্ছে, তা পর্যবেক্ষণ করতে হবে।
আইডিএলসি ফাইন্যান্স লিমিটেডের ব্যবস্থপনা পরিচালক আরিফ খান বলেন, এসএমই খাতে তাদের ঋণের পরিমাণ তিন হাজার কোটি টাকা। তাদের এই খাতে নন-পারফরমিং লোন দুই শতাংশের কম।
সেমিনারে আরও বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ।