বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) ও জার্মান উন্নয়ন সংস্থা (জিআইজেড) আয়োজিত বৃহস্পতিবার এক অনুষ্ঠানে আলোচকরা বলেছেন, বাংলাদেশের বিদ্যমান আর্থসামাজিক বাস্তবতায় এখন সামাজিক বিমা চালুর সময় এসেছে। সরকারের কর্মপরিকল্পনার মধ্যে বিষয়টি নিয়ে আসা উচিত। কিন্তু এ ক্ষেত্রে দেশ এখনও অনেক পিছিয়ে আছে। অনেক দেশ ১০০ বছর আগে সামাজিক বিমা চালু করেছে, এখন তার সুফল তারা ঘরে তুলছে। বাংলাদেশের উচিত দেশগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে এ বিষয়ে অগ্রসর হওয়া। এখন শুধু সামাজিক নিরাপত্তা জালের মধ্যে থাকলে চলবে না।
আলোচকদের বক্তব্য আমাদের নীতিনির্ধারকরা গুরুত্ব সহকারে বিবেচনায় নেবেন বলে আমরা মনে করি। সিপিডির ওই অনুষ্ঠানে পঠিত মূল প্রবন্ধে বলা হয়েছে, দেশের বিদ্যমান সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিতে অনেক ধরনের ফাঁকফোকর রয়েছে। যাদের এ সুরক্ষা পাওয়ার কথা, তারা পান না। আবার যাদের পাওয়ার কথা নয়, তারা পান। এই বাস্তবতায় সামাজিক বিমা চালু করা হলে এসব ফাঁকফোকর বন্ধ হবে। বিশ্বের অনেক দেশেই সামাজিক বিমা চালু আছে। কোথাও এই বিমা বাধ্যতামূলক, কোথাও আবার স্বেচ্ছাপ্রণোদিত। বাংলাদেশ এসব দেশের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিতে পারে।
দুর্ভাগ্যজনক হলো আমাদের দেশের বিমার ব্যাপারে সাধারণ মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি ইতিবাচক নয়। কেউ তো রাখঢাক না করেই বলেন, বিমা মানেই ফাঁকিবাজি, প্রতারণা। তাদের অশিক্ষিত গেঁয়ো আখ্যায়িত করে বক্তব্য পাশ কাটিয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। বরং তাদের মন্তব্য যুক্তিযুক্ত বলেই প্রতীয়মান হবে। পলিসির মেয়াদ পূর্তির পরও বিমাগ্রহীতা যদি মাসের পর মাস ধরনা দিয়েও প্রাপ্য অর্থ আদায় করতে না পারেন কিংবা সাধারণ মানুষ বিশেষ করে বিমাগ্রহীতার কাছে বিমার খুঁটিনাটি খোলাসা না করা হয় এবং ক্ষতিগ্রস্ত ও হয়রানির শিকার গ্রাহক নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে প্রতিকার না পানÑতাহলে নিরীহ মানুষের যাওয়ার জায়গা থাকল কই! সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির অনিয়ম অব্যবস্থাপনা নিয়ে অনেক তথ্য গণমাধ্যমের কল্যাণে সবার কাছে স্পষ্ট। এ অবস্থায় সামাজিক বিমার প্রতি সাধারণ মানুষ আগ্রহী হবেন কোন যুক্তিতে!
অনুষ্ঠানে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) ঢাকা কার্যালয়ের প্রধান কারিগরি পরামর্শক দেশে এত দিনেও সামাজিক নিরাপত্তা বিমা চালু না হওয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করেন। এ জন্য তিনি আমলাতন্ত্রের ধীরগতিকে দায়ী করেন। কেননা সরকার সামাজিক নিরাপত্তা কৌশল প্রণয়ন করেছে আট বছর আগে। কিন্তু তা বাস্তবায়নের গতি খুবই কম। এ জন্য আমলাতন্ত্রের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার ঘাটতিকে দায়ী করেন তিনি। তার পর্যবেক্ষণ অমূলক নয়। আমাদের দেশে প্রতিষ্ঠানে স্বচ্ছতা, জবাবদহিহি না থাকায় গ্রাহক তথা সেবাগ্রহীতা সুরক্ষা পান না এটি বড় বাস্তবতা। গ্রাহকের অভিযোগ নানা ছুতোয় অগ্রাহ্য হয়। বিমায় যে অনিয়ম-অব্যবস্থাপনা আছে, সেগুলো দূর করতে হবে আগে। বিমার ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তা শুধু ব্যবসা বোঝেন, মৃত্যুদাবির চেক বিতরণের খবর প্রায়ই প্রকাশিত হয় গণমাধ্যমে; কিন্তু গ্রাহকের বিড়ম্বনা কমিয়ে আনতে প্রয়াস লক্ষণীয় নয়।
সামাজিক বিমা যেহেতু কর্মজীবী মানুষের জন্য, তাই এই কাজের ব্যক্তি, নিয়োগ কর্তা, সরকারÑসংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে আন্তরিক ও দায়িত্বশীল হতে হবে। একটি সর্বজনীন আইনি কাঠামো করতে হবে; যাতে বিমাগ্রহীতা কোনোভাবে প্রতারিত ও বঞ্চিত না হন।