কাজী জহিরুল ইসলাম: আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যুগে যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে সামাজিক মাধ্যম। এর মাধ্যমে আমরা দেশ-বিদেশের নানা খোঁজ-খবর পেয়ে থাকি। একে অপরের সঙ্গে সহজে যোগাযোগ করতে পারি। বিভিন্ন তথ্যের আদান-প্রদান একেবারে সহজলভ্য হয়েছে। অনেক অপরিচিতের সঙ্গে সহজে যোগাযোগের মাধ্যমে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি করে থাকি। কারও সঙ্গে সেটা মনের হƒদ্যতায় পর্যন্ত পৌঁছে যায়।
সামাজিক মাধ্যমে যোগাযোগ শুরু করার ক্ষেত্রে আমরা হরহামেশা অনেক ভুল করে থাকি। কারও সঙ্গে নতুন সম্পর্ক তৈরিতে আমরা কীভাবে শুরু করব, তা হয়তো ভাবি না। তাকে নক দিয়ে হায়-হ্যালো বলা শুরু করি। অনেকক্ষেত্রে কারও কাছ থেকে কোনো কিছু জানতে বা পরামর্শ নেয়ার ক্ষেত্রে তার সঙ্গে পরিচিত হওয়ার আগে সরাসরি কিছু জানতে চাই। নানা প্রশ্নবাণে তাকে জর্জরিত করি। কোনো স্থান-কাল বা ব্যক্তিবিশেষের সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ অনুযায়ী শুরুটা করি না। এতে আমরা তার কাছ থেকে প্রত্যাশিত রেসপন্স পাই না।
নতুন অপরিচিত কারও সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করার ক্ষেত্রে প্রথমে তাকে জানা জরুরি। এক্ষেত্রে তার প্রোফাইল ঘেঁটে তার সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা, তার চিন্তাভাবনা, বিশ্বাস ও মূল্যবোধ সহজে আঁচ করতে পারি। তার সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ অনুযায়ী তার সঙ্গে সম্ভাষণ শুরু করা প্রয়োজন। যেমন : বাংলাদেশে যে কাউকে সম্মানার্থে মুসলিম হলে সালাম এবং হিন্দু হলে আদাব দিয়ে শুরু করি। এতে করে শুরুতে পজিটিভ ধারণা তৈরি হয়। আপনি যদি শুরুতে নেগেটিভ অ্যাপ্রোচে যোগাযোগ শুরু করেন তাহলে আপনার সঙ্গে তার যোগাযোগটা ইফেক্টিভ হবে না। সে আপনাকে তার গুরুত্বপূর্ণ সময় নাও দিতে পারে।
কোনো প্রয়োজনে, কিছু জানতে বা কোনো সাহায্যের জন্য অপরিচিত কারও সঙ্গে কথা বললে সেক্ষেত্রে উচিত হবে প্রথমে নিজের পরিচয় দিয়ে কোনো বিষয়ে বা কী জন্য তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে আগ্রহী তা জানানো। কিন্তু বাস্তবিক হলেও সত্য বর্তমান প্রজš§ এক্ষেত্রে যথেষ্ট গ্যাপ আছে। কাউকে হাই-হ্যালো বলে নক দিয়ে নাম-পরিচয় ছাড়া সরাসরি কিছু জানতে চায়। সরাসরি নগদে সাহায্য চায়। যেটা অনেক প্রফেশনাল বা কর্মব্যস্ত মানুষ পজিটিভলি নেয় না। ফলে উদ্দেশ্য হাসিল হয় না।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নাম-পরিচয় বাদে অপরিচিত কাউকে নিজের প্রয়োজনে নক দিয়ে তাকে নানা প্রশ্নে জর্জরিত করাটাও সমস্যা। অপরিচিত কাউকে নক দিয়ে প্রথমে নিজের সম্পূর্ণ পরিচয় দিতে হবে। তারপর আপনি যাকে, যে কাজে যোগাযোগ করা হচ্ছে, তা খোলাসা করতে হবে। সে কী করে, কোথায় থাকে, ভাত খেয়েছে কি নাÑএ ধরনের ব্যক্তিগত প্রশ্ন করার আগে তার প্রোফাইল ঘেঁটে তার সম্পর্কে জানা উচিত। সে অনুযায়ী তার সঙ্গে যোগাযোগ করলে যোগাযোগটা ইতিবাচক হয়। শুরুতেই কাউকে বেহুদা যত প্রশ্ন করলে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার রাস্তা প্রশস্ত হবে। সেজন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক দিনের পরিচয়ে অহেতুক প্রশ্ন না করাই উত্তম। বিশেষ করে যারা কর্মব্যস্ত থাকে তাদের ক্ষেত্রে বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ।
পেশাজীবীদের সঙ্গে বেশিক্ষণ চ্যাট না গিয়ে তার কাছ থেকে সময় নিতে হবে। তিনি সময় দিলেই, নির্ধারিত সময়েই তার সঙ্গে কথা বলতে হবে। কী কী জানতে চাই বা বলতে চাই তা আগেই তালিকা করে রাখলে সুফল পাওয়া যায়। তাকে কল দিয়ে নিজের বিষয় না বলে অযথা তাকে প্রশ্ন করে বিব্রত করা ঠিক নয়। ভদ্রতার খাতিরে সে কেমন আছে এবং তার পরিবারের খোঁজ নেয়া যেতে পারে। একান্ত ব্যক্তিগত বিষয়ে তাকে প্রশ্নে জর্জরিত না করে বরং কী জানার, তা প্রথমেই বলা ভালো।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সম্পর্ক বৃদ্ধি করার জন্য কিছু দিন সময় নেয়া উচিত। এক দিনে নক দিয়ে সম্পর্ক পাকাপোক্ত করে সবকিছু জানা বুদ্ধিমানের কাজ নয়। ক্রমান্বয়ে কথা বলার মাধ্যমে আস্তে ধীরে সম্পর্ক বৃদ্ধি করাটা শ্রেয়। যার সঙ্গে যোগাযোগ করে সম্পর্ক বৃদ্ধি করতে আগ্রহী তার ভার্চুয়াল অ্যাক্টিভিটিজে বিভিন্ন গঠনমূলক মন্তব্যের মাধ্যমে প্রথমে ‘অপরিচিতের মাধ্যমে পরিচয় পর্ব’ তৈরি করাটা প্রয়োজন। এভাবে ইন্টারেক্টশনের ফলে পরবর্তী সময় এক দিন নক দিয়ে পরিচয় দিলে সহজে সে চিনতে পারবে। এরপর আপনি কোনো বিষয়ে কথা বলতে চান বা কী সাহায্য চান তা জানালে সে সহজে আপনাকে গ্রহণ করে নেবে। কারণ সে ইতোমধ্যে আপনাকে চেনে। এভাবে যোগাযোগ করলে সহজে যেকারও সঙ্গে ভালো সম্পর্ক তৈরি করা সম্ভব।
সামাজিক মাধ্যমে যোগাযোগের অ্যাপ্রোচের ওপর নির্ভর করে কে কতবেশি নেটওয়ার্কিং বৃদ্ধি এবং তা ক্রমান্বয়ে সমৃদ্ধি ঘটাতে সক্ষম। ভালোভাবে যোগাযোগ করার ফলে কেউ দেশ-বিদেশের অনেকের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করতে সক্ষম হয়। তারা বিভিন্ন বিষয়ে জানা ও সাহায্য পেতে পারে। পক্ষান্তরে যোগাযোগ অ্যাপ্রোচে ব্যর্থতার কারণে অনেকে বিভিন্ন জনের কাছে বিভিন্ন বিষয়ে জানতে গিয়েও প্রত্যাশা অনুযায়ী ব্যবহার পায় না। যার ফলে যার যোগাযোগ অ্যাপ্রোচ যত সুন্দর, গুছানো ও কার্যকর হবে তার নেটওয়ার্কং তত বাড়বে। সে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে বিভিন্ন বিষয়ে তথ্য, পরামর্শ ও সাহায্য পেয়ে এগিয়ে থাকবে।
শিক্ষার্থী, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ
মেরসিন বিশ্ববিদ্যালয়, তুরস্ক