বর্তমানে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোর অপব্যবহার উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তির উৎকর্ষের সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলছে প্রতারক চক্রের দৌরাত্ম্য। প্রতারণার মাধ্যম হিসেবে ইচ্ছেমতো ব্যবহার করা হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। তথ্যপ্রযুক্তি যেমন আপডেট হচ্ছে, তাদের কৌশলও বেশ পরিবর্তন হচ্ছে। যার ফলে প্রতিদিনই বিপুলসংখ্যক মানুষ প্রতারণার শিকার হচ্ছে। অনেক হ্যাকার ফেসবুক, মেসেঞ্জার, টুইটার, ইমু হ্যাকড করে ব্যাকমেইল করে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করেই চলছে। হোক সেটা ব্যক্তিগত কিংবা আর্থিক। পাসওয়ার্ড হ্যাক করে অনেকেই টাকা ছিনিয়ে নিচ্ছে। মানুষের সরলতার সুযোগ নিয়ে এরা প্রতারণা করছে। অনলাইন সেবা মানুষকে অনেক সুবিধা দিয়েছে, সেটা অস্বীকার করা যাবে না। ঘরে বসেই পাওয়া যাচ্ছে সব সেবা, এর ফাঁকেই ডুকে যাচ্ছে বড় বড় প্রতারক। ফেসবুকে সমস্যাটা দিন দিন জটিল হচ্ছে। বিশেষ করে নারীদের নামে ফেইক অ্যাকাউন্ট খুলে গভীর বন্ধুত্ব স্থাপন করে, কৌশলে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়। এগুলোর শেষ কোথায়? অনলাইনে কেনাকাটায় অসংখ্য প্রতারণার ঘটনা ঘটছে। অনেক ভুক্তভোগী প্রতিকারের পথ পাচ্ছে না।
সাম্প্রতিক সময়ে অনেক প্রতারক চক্র অনলাইন শপিং পেজ খুলে ভালো ভালো পণ্য বিশেষ মূল্য ছাড়ে বিক্রি করার বিজ্ঞাপন দিয়ে ক্রেতাদের সঙ্গে প্রতারণা করছে। এসব অনলাইন শপ থেকে পণ্য অর্ডার করে ক্রেতারা পাচ্ছে পুরোনো ও নষ্ট পণ্য। এসব অনলাইন পেজের বাহারি অফার সহজেই মন কেড়ে নেয় যেকোনো অজ্ঞ ক্রেতার। আর এসব ফাঁকে বেশিরভাগই কিশোর-কিশোরী, সহজ-সরল এমন মানুষেরাই প্রতারিত হচ্ছে। প্রতিদিন সারাদেশে থেকে নিয়মিত কত মানুষ এভাবে প্রতারিত হচ্ছে তার কোনো ইয়ত্তা নেই। সাইবার ক্রাইমের বিশেষ টিম প্রতিনিয়ত এরকম প্রতারক চক্র গ্রেপ্তার করছে, তারপরও এদের দৌরাত্ম্য যেন কমছেই না। ফেসবুকে প্রতারণার অন্যতম টার্গেট নারীরা। নারীদের পোশাক বিক্রির লোভনীয় প্রস্তাব দেয়া হচ্ছে ফেসবুকের মাধ্যমে। তাতে আকৃষ্ট হয়ে কেউ অর্থ পাঠালে দেয়া হচ্ছে নিকৃষ্ট এমনি পুরোনো অব্যবহার যোগ্য পোশাক। শুধু তাই নয়, অসুস্থতার নামে প্রতারকরা ফেইক অ্যাকাউন্ট খুলে ক্যান্সার কিডনি নষ্ট বলে পোস্ট করে সাধারণ মানুষকে ধোঁকা দিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা।
তথ্যপ্রযুক্তির সুবিধা অস্বীকার করা যাবে না। যুগের সঙ্গে আমাদের তাল মিলিয়ে চলতে হবে। গড্ডলিকা প্রবাহে গা ভাসানো যাবে না। ফেসবুকসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বন্ধুত্ব গড়ার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে। কেউ বন্ধুতের অনুরোধ পাঠালে সঙ্গে সঙ্গে গ্রহণ না করে ভালোভাবে বোধ-বুদ্ধি দিয়ে যাচাই করতে হবে। কেন ও কী কারণে বন্ধুত্বের অনুরোধ পাঠানো হয়েছে। বন্ধুত্ব মানে ফ্যান্টাসি বা অযাচিত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়া নয়। এর মধ্যে নীতি, নৈতিকতা, মূল্যবোধ বজায় থাকতে হবে। কারণ ফেসবুকের পাতার অপর পৃষ্ঠার ব্যক্তিটি বন্ধু নাকি, বন্ধুবেশী প্রতারক তা শুধু ছবি দেখে আর সংক্ষিপ্ত চ্যাটিংয়ের মাধ্যমে বোঝা সম্ভব নয়। প্রতারিত হয়ে নিজের সর্বনাশ ডেকে আনা বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দ্বারস্থ হওয়ার পূর্বেই সতর্ক হওয়া বাঞ্ছনীয়। বিস্তৃত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কে, কীভাবে প্রতারিত হচ্ছে তা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটা পক্ষে কোনোভাবেই মনিটর করা সম্ভব নয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যবস্থা নিতে পারবে যখন তারা সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাবে। এ ধরনের অভিযোগের ভিত্তিতেই র?্যাব-১ একটি প্রতারক চক্রকে ধরতে সক্ষম হয়েছিল। আমরা আশা করব, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে এ ধরনের প্রতারণাপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়মিত মনিটরিং করবে এবং একটি প্রতারক চক্রের সূত্র ধরে অন্য প্রতারক চক্রকেও শনাক্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। এর পাশাপাশি আমাদের নিজেদের সচেতন হতে হবে, যাতে যে কেউ আমাদের বিরুদ্ধে সুযোগ নিতে না পারে।
মোস্তফা কামাল
শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়