আমাদের দৈনন্দিন জীবনে এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম (ফেসবুক, এক্স প্রভৃতি) ঢুকে গেছে। আমরা আমাদের অনেক মূল্যবান সময় এই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যয় করে ফেলি, যা আগে ছিল না। ৩ বা ৪ বছর পূর্বে মানুষের প্রাত্যহিক জীবনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ছিল না। তখন সেই সময়টায় নিজেদের ভিন্নভাবে প্রকাশ করা হতো, কেউ ছবি আঁকত অবসরে, কেউবা ভিন্ন ধরনের শৈল্পিক কাজ করত, আবার কেউবা ধর্মীয় বিষয়গুলোয় বেশি সময় দিত। ওইসব সময় এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম একাই দখল করে ফেলেছে। আগে বন্ধুদের আড্ডায় যেমন হাসিখুশি, চঞ্চলতা থাকত তা এখন আর দেখা যায় না, সবাই এই অনলাইন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিয়ে ব্যস্ত। একসাথে হলে পাশাপাশি বসেও সেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চ্যাটিং করতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। আমাদের মাঝে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটিয়ে দিল এই ২০০৪ সালে পথচলা শুরু করা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক। আমরা ভার্চুয়াল জগতে পড়ে গেলাম, ফেসবুকে কথা হলেও সামনাসামনি আন্তরিকতা আর নেই। সবার মাঝে বিষণœতা, ডিপ্রেশন তাহলে কি ফেসবুকই এনে দিচ্ছে? সারাদিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ঘেঁটে লাভ-লস বুঝি না কিন্তু সেখানে সময় দিতে হবেÑএমনটাই হয়ে যাচ্ছে আমাদের মধ্যে।
আরও একটা বৃহৎ ভাবনার বিষয় হলো, আমরা স্বাভাবিক মুডে থাকলে ওই সময়ে ফেসবুক-এক্স ঘেঁটে কোনো একটা খবর দেখি, যা দেখে মন খারাপ হয় মুহূর্তেই। হয়তো পড়ার ফাঁকে ফেসবুকে যাচ্ছি, তারপর আর পড়ার মনোযোগ থাকছে না। সাধারণত ঘুম থেকে উঠে আল্লাহর নাম নিয়ে কাজ শুরু করি, ধর্মীয় চর্চা করি, আর এখন এমন হয় যে ঘুম ভেঙে যাওয়ার পর দীর্ঘ সময় এই মোবাইল ফোন, ফেসবুক, এক্স, মেসেঞ্জার চেক করা। ৫ মিনিট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম চালাতে গিয়ে ৫ ঘণ্টাও হয়ে যায়, এতই আসক্তি এখনকার প্রজন্মে। সময়কে মূল্যহীন করে ফেলা হচ্ছে এই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম চালিয়ে। সারারাত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম চালিয়ে সজাগ থেকে নিজেদের অজান্তেই বড় বড় রোগের বাসা করা হচ্ছে শরীরে, চোখের জ্যোতি কমে যাচ্ছে, রাতের তাহাজ্জুদ নামাজ বিলুপ্ত ও গুরুত্বহীন হচ্ছে এই রাত জেগে। সময়ের কাজ সময়ে করা হয় না। পড়াশোনায় ব্যাপক ঘাটতি, এমনও হয় অনলাইন ঘেঁটে সময় পেলেই কেবল পড়তে বসে, যা অবসরে করার কথা তা না করে পড়ার সময়ে বা অন্যান্য গুরত্বপূর্ণ কাজে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার হচ্ছে, এভাবে বাড়ছে আবার অজ্ঞতাও। ঠিক কতটা আসক্ত হলে এই করুণ অবস্থায় পৌঁছায়?
এই প্রজš§ই যদি এমন অবস্থা হয়, আগামী ৫ বছর পর কেমন হতে পারে এই আসক্তি? স্বাভাবিক জীবন তো বিপন্ন হওয়ার পথে। মানুষের আবেগ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যেমন অনুভ‚তি প্রকাশ করে বাস্তবে ঠিক কতটা সত্যতা আছে তার? মনে প্রশ্ন জাগে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যতটা না উপকার করছে তার চেয়ে অনেক গুণ বেশি অপকার করে যাচ্ছে। আমরা বুঝিও কিন্তু সরে আসতে পারছি না। এভাবেই নীরবে থেকে থেকে অসীম পরিমাণ ক্ষতি করে যাচ্ছে। আমরা যদি এর পরিবর্তন না আনি তাহলে আগামীর সময় বড্ড কঠিন হয়ে যাবে, আসক্তি সরিয়ে স্বাভাবিক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যবহার হোক, সেটাই কাম্য। আর এটা সম্ভব আমাদের দ্বারাই, আমাদের সচেতনতা, মানসিকতায় পরিবর্তন এনেই।
জান্নাতুল ফেরদৌস পায়েল
শিক্ষার্থী, বাংলা বিভাগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়