সেমিনারে বক্তারা

সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিতে বড় ধরনের অপচয় হচ্ছে

নিজস্ব প্রতিবেদক: সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায় এমন অনেকে ভাতা পাচ্ছেন, যাদের পাওয়ার কথা নয়; তারা ধনী। তবুও তারা পেয়ে যাচ্ছেন। আর যাদের পাওয়া উচিত, এমন তাদের অনেকেই বাদ পড়ছেন। এই বাদ পড়াদের হার  প্রায় ৪৬ শতাংশ। তার মানে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিতে বড় ধরনের অপচয় হচ্ছে। আমি সেটা অস্বীকার করব না। কারণ এটা একটা গবেষণার ফলাফল থেকে প্রাপ্ত। আমরা চাইব, ২০২৫ সালের মধ্যে সব দরিদ্র মানুষ সামাজিক সুরক্ষার কোনো না কোনো কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত হোক।

গতকাল ‘করোনার প্রভাবে এসডিজি বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ: স্বাস্থ্য ও শিক্ষা’ অনলাইন সংলাপে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (জ্যেষ্ঠ সচিব) ড. শামসুল আলম।

অনলাইন সংলাপটি আয়োজন করে ডেভেলপমেন্ট জার্নালিস্ট ফোরাম অব বাংলাদেশের (ডিজেএফবি)। এটিতে পৃষ্ঠপোষকতা করে জার্মানির ব্রেড ফর দ্য ওয়ার্ল্ড। সহযোগিতায় ছিল অ্যাকশন ফর সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট (এএসডি)।

শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় বাড়ানোর বিষয়ে শামসুল আলম বলেন, ‘অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় আমরা শিক্ষা ব্যয় বাড়ানোর কথা বলছি। শিক্ষা ব্যয় জিডিপির ৪ শতাংশে উন্নীত করার কথা বলেছি। যেটি বর্তমানে ২ দশমিক ৬ শতাংশে আছে। আসলে আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী, শিক্ষা ব্যয় ৬ শতাংশে উন্নীত হওয়া উচিত। তবু এটা এখন যেহেতু ২ দশমিক ৬ আছে, এটাকে ৪ শতাংশে নিতে পারলেও বড় রকমের উল্লম্ফন হবে। আর স্বাস্থ্য খাতে আমরা এখন ব্যয় করছি ১ দশমিক ৬ শতাংশ। সেটি ২ শতাংশে নেয়ার কথা বলেছি অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায়। সেটি করতে পারলেও বড় রকমের উল্লম্ফন হবে।’

পরিকল্পনায় যা বলা হচ্ছে, তা বাজেটে বাস্তবায়ন হচ্ছে কি না সেদিকে নজর রাখার পরামর্শ দিয়ে সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের এ সদস্য বলেন, ‘যেসব বরাদ্দ যাচ্ছে আর পরিকল্পনায় যা বলা হচ্ছে, সেগুলোর সঙ্গে সংযোগ কতটা হচ্ছে, তা খেয়াল রাখতে হবে। যেমন পরিকল্পনায় আমরা বলেছি, অনুন্নত অঞ্চলগুলোর জন্য বিশেষ তহবিল রাখার জন্য বা সে এলাকায় স্কুল-কলেজ গড়ে তোলার জন্য। পরিকল্পনার সঙ্গে বাজেটের সমন্বয় না হলে পরিকল্পনা করে ফল পাওয়া যাবে না।’

শ্রেণিগত অসাম্য না থাকলেও বাংলাদেশে অঞ্চল বৈষম্য আছে। শামসুল আলম বলেন, ‘স্বাস্থ্যসেবা, দারিদ্র্য, শিক্ষা ক্ষেত্রে অঞ্চল বৈষম্য আছে। সে জন্য দেখবেন নারাণগঞ্জে ৩ শতাংশ দারিদ্র্য, অথচ রংপুরে ৭১ শতাংশ। এর জন্য আমরা অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় অনেকগুলো পদক্ষেপ রেখেছি। আপনারা নজরদারি করবেন, সেই প্রস্তাবগুলো কতটা বাজেটে প্রতিফলিত হচ্ছে।’

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে অ্যাকশন ফর সোশ্যাল ডেভেলপমেন্টের (এএসডি) নির্বাহী পরিচালক জামিল এইচ চৌধুরী বলেন, ‘করোনায় একটা বড় ক্ষতি হলো, অনেক শিক্ষার্থী ঝরে পড়েছে। অনেকে কাজ হারিয়েছেন, অনেকের বাল্য বিয়ে হয়ে গেছে। তাদের কীভাবে ফিরিয়ে আনা যায়? আবার অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী অনেক জায়গায় বড় বড় প্রণোদনা দিয়েছেন। বেসরকারিভাবে যারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালাতেন, সেগুলো বন্ধ হয়ে গেছে, সেগুলোর জন্য প্রণোদনার কথা শুনিনি। কতগুলো বন্ধ হয়েছে তা নিয়ে জরিপ করার প্রয়োজন এবং সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া দরকার। এগুলো করা দরকার বাজেটের আগেই।’

এই সংলাপে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের (বিআইআইএসএস) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ও অর্থনীতিবিদ ড. মাহফুজ কবীর।

করোনায় শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতের ক্ষতি পুষিয়ে কীভাবে এসডিজি বাস্তবায়নের দিকে এগিয়ে যাওয়া যায়, সে বিষয়ে করণীয় তুলে ধরে মাহফুজ কবীর বলেন, ‘স্বাস্থ্য খাতকে ঢেলে সাজাতে হবে। এজন্য বাজেট বরাদ্দ বাড়াতে হবে। বরাদ্দ দারিদ্র্য, প্রান্তিক ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষের কাছে পৌঁছতে হবে। সরকারি সেবার মান উন্নত করতে হবে। স্বাস্থ্যসেবার পেছনে পরিবারের অর্থব্যয় কমানোর ব্যবস্থা নিতে হবে। বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবায় আমূল সংস্কার জরুরি। অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি দূর করতে হবে যাতে মানুষ হয়রানিমুক্তভাবে ও কম খরচে বেসরকারি সেবা পেতে পারে। মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্যসেবার পরিধি বাড়াতে হবে। মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে।

শিক্ষার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘শিক্ষায় বাজেট বরাদ্দ জিডিপির ২ শতাংশের চক্র থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। এজন্য বরাদ্দের উল্লম্ফন প্রয়োজন। অনেক বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান করোনাকালে বন্ধ হয়ে গেছে। তাদের ফিরিয়ে আনতে বিশেষ প্রণোদনা দিতে হবে। ডিজিটাল ডিভাইসের কারণে টেলিভিশন ও অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম দারিদ্র্য, প্রান্তিক, দূরবর্তী ও সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছতে পারেনি। শহরের শিক্ষার্থীদের বেশিরভাগ অনলাইন শিক্ষার সুবিধা নিতে পারলেও গ্রামের অনলাইন শিক্ষার্থীরা কাক্সিক্ষত ফল পায়নি। অনেকেই বিশেষ করে মেয়েরা ঝরে পড়েছে তাদের আবার শিক্ষায় ফিরিয়ে আনতে হবে।’

মূল প্রবন্ধের ওপর আরও আলোচনা করেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. তানিয়া হক, রোগতত্ত্ববিদ ও মানিকগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ইসরাত শর্মী, উন্নয়ন কর্মী তাহমিনা শিল্পী, প্রতীক যুব সংসদের নির্বাহী প্রধান সোহানুর রহমান।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ডেভেলপমেন্ট জার্নালিজম ফোরাম অব বাংলাদেশের (ডিজেএফবি) সভাপতি ও ফাইন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের বিশেষ প্রতিনিধি হুমায়ুন কবির। সঞ্চালনা করেন যমুনা টেলিভিশনের বিশেষ প্রতিনিধি সুশান্ত সিনহা।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০