সায়াটিকাকে বেশিরভাগ মানুষ বাতের ব্যথা মনে করলেও এটি আসলে একটি স্নায়ুজনিত সমস্যা। যখন কোনো কারণে এই নার্ভ বা স্নায়ুর উৎস বা বিস্তারে কোথাও ক্ষতিগ্রস্ত হয় বা চাপ লাগে বা প্রদাহ হয়, তখন তাকে সায়াটিকা বলা হয়। কোমরের উভয় অংশ ও দুই পায়েই সায়াটিকা হতে পারে, তবে একপাশে ও এক পায়েই বেশি হতে দেখা যায়। কোমরে ব্যথা হয় সাধারণত নিচের দিকে ও একপাশে, ব্যথা কোমর থেকে পায়ের দিকে ছড়িয়ে যায়। ঊরুর দিকে বেশি অনুভূত হয়।
অনেক ক্ষেত্রে কোমরে কোনো ব্যথা থাকে না। কিন্তু ঊরুর পেছন দিক থেকে শুরু করে হাঁটুর নিচের মাংসপেশির মধ্যে বেশি ব্যথা করে। ব্যথা সাধারণত তীব্র হয়। শুয়ে থাকলে ব্যথা কম থাকে, কিছুক্ষণ হাঁটলেও ব্যথা কমে যায়। কিন্তু বসে বা দাঁড়িয়ে থাকলে ব্যথা বাড়ে।
অনেক সময় কিছুক্ষণ হাঁটলে আর হাঁটা যায় না। তখন কিছুটা বিশ্রাম নিলে আবার কিছু সময় হাঁটা যায়। আক্রান্ত পায়ে ঝিনঝিন বা অবশ ভাব হয় এবং দুর্বলতা অনুভূত হয়।
প্রথম অবস্থায় রোগী দুই সপ্তাহ পূর্ণ বিশ্রাম (শক্ত বিছানায় শুয়ে) নিলে এবং কিছু নির্দিষ্ট ওষুধ খেলে ব্যথা সেরে যায়। কিছু ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে বের হয়ে আসা ডিস্ক অপসারণ করতে হয় বা সরু হয়ে যাওয়া স্পাইনাল ক্যানাল ঠিক করা হয়।
অস্ত্রোপচার ছাড়া চিকিৎসার মধ্যে আছে ঠাণ্ডা বা গরম সেঁক নেয়া। সাধারণত প্রতি দুই ঘণ্টা পরপর ২০ মিনিট ঠাণ্ডা বা গরম, কিছু ক্ষেত্রে একবার ঠাণ্ডা, একবার গরমÑএভাবে সেঁক নিতে হয়।
তিন মাস বাড়িতে থেকে চিকিৎসা নেয়ার পরও যদি ব্যথা না কমে, ব্যথা এত বেশি তীব্র যে রোগী শুয়ে থাকলেও ব্যথা হয়, যদি রোগীর মলমূত্র নিয়ন্ত্রণ ব্যাহত হয়, যদি পা (বিশেষ করে পাতা) অবশ হয়ে যায়, অথবা পায়ের বোধশক্তি কমে যায় বা বোধশক্তি একেবারে চলে যায়, সেক্ষেত্রে চিকিৎসা প্রয়োজন।
সায়াটিকা সেরে গেলে আবার হতে পারে। তাই কিছু সতর্কতা মেনে চলা উচিত। যেমন শক্ত বিছানায় শোয়া। ঝুঁকে কোনো কাজ না করা। একনাগাড়ে অনেকক্ষণ বসে কাজ না করা। বেশি সময় ধরে বসে থাকতে হয়, এমন ভ্রমণ এড়িয়ে চলা। চিকিৎসকের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যায়াম করা। একসঙ্গে বেশিক্ষণ না হাঁটা। অনেক উঁচুতে সিঁড়ি বেয়ে না ওঠা। পরামর্শমতো গরম সেঁক দেয়া।
অধ্যাপক ডা. হারাধন দেবনাথ
নিউরোসার্জারি বিভাগ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যাল