সারাদেশে খাল পুনরুদ্ধারে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিন

পানিপ্রবাহের ক্ষেত্রে খাল মানবদেহের শিরা-উপশিরার মতো কাজ করে থাকে। কোনো একটি রক্তনালি বন্ধ হয়ে গেলে যেমন মানুষের শরীরে রক্তক্ষরণ হয়, তেমনি কোনো স্রোতস্রিনী বন্ধ করে দেয়া হলে তার আশপাশের এলাকা প্লাবিত হয়ে যায়। বর্তমানে আমাদের দেশে তেমনটিই ঘটছে। বর্ষাকালে বৃষ্টির পানি বহন করে নদীতে নিয়ে ফেলে ছোট ছোট খাল। এসব খালের অধিকাংশই প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্টি। পানি নিজেই তার প্রবাহের জন্য এসব গতিপথ সৃষ্টি করে নেয়। কিন্তু উন্নয়নের নামে সারাদেশে অনেক খাল ভরাট করা হয়েছে। এর ফলে স্বাভাবিকভাবে পানি প্রবাহের যে ব্যবস্থা তা বিঘ্নিত হচ্ছে। এতে বিভিন্ন অঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে এবং মানুষ দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। সর্বশেষ দেশের পূর্বাঞ্চলের বন্যায় এ বিষয়টি আবারও প্রমাণিত হয়েছে। উজান থেকে পানি আসা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর মাস পেরিয়ে গেলেও এখনও উপদ্রুত এলাকার অনেক স্থানে জলাবদ্ধতা বিরাজ করছে। এর কারণ হিসেবে খাল ভরাটকেই দায়ী করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

দৈনিক শেয়ার বিজে গতকাল ‘খাল ভরাটের কারণে নোয়াখালীর বন্যা পরিস্থিতি দীর্ঘায়িত হয়েছে’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনের তথ্য মতে, নোয়াখালীতে সাম্প্রতিক বন্যার পর পানি নামার জায়গা পাচ্ছে না। কারণ, বেশিরভাগ খাল-বিলই ভরাট করে ফেলা হয়েছে। ফলে বন্যা থেমে গেলেও পানি নামেনি। কারণ, এখানে বন্যা হতে পারে এমন ধারণাই কেউ করেননি। ফলে বেশিরভাগ খাল-বিলই ভরাট করে ফেলা হয়েছে। যার কারণে সমুদ্র থেকে যে জোয়ার আসছে সেটি আর ফেরত যাওয়ার জন্য জায়গা পাচ্ছে না। এমন মন্তব্য করেছেন সরকারের পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টাও।
উপদেষ্টার এ মন্তব্য অত্যন্ত যুক্তিসংগত বৈকি। কেননা, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আবাসন ও অন্যান্য বাণিজ্যিক প্রয়োজনে পানি প্রবাহের প্রাকৃতিক মাধ্যমগুলো ভরাট করে ফেলা হয়েছে। এতে করে সামান্য বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। এছাড়া বিভিন্ন অঞ্চলের প্রভাবশালী মহল নিজেদের প্রয়োজনে পানি প্রবাহের অনেক স্রোতধারা ভরাট করে ফেলেছে। ফলে নানা অঞ্চলে কৃষকের আবাদি জমি পানিতে নিমজ্জিত হয়ে গেছে। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে খালগুলো পুনরুদ্ধারের বিকল্প নেই।

বিগত সরকারের আমলে বেশকিছু খাল পুনরুদ্ধারের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। বিশেষ করে ঢাকা শহরের বেশ কয়েকটি খাল পুনরুদ্ধার সম্পন্ন হয়। বর্তমান সরকারের উচিত খাল পুনরুদ্ধার কার্যক্রম সচল রাখা। এছাড়া সারাদেশের খাল খনরের জন্য যেসব প্রকল্প রয়েছে, সেগুলো সঠিকভাবে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া আবশ্যক। বিগত সরকারের আমলে এসব প্রকল্পে অর্থ তছরুপের অভিযোগ রয়েছে। ঠিকভাবে কাজ না করেই অনেক ঠিকাদার টাকা তুলে নিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এসব ক্ষেত্রে উপযুক্ত ঠিকাদার নিয়োগ করে সরকারি অর্থের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করে খাল পুনরুদ্ধারের উদ্যোগ নিতে হবে। সংশ্লিষ্ট মহল এ বিষয়ে উদ্যোগী হবে বলেই প্রত্যাশা।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০