শেয়ার বিজ ডেস্ক : বিএনপির ডাকা তিন দিনের অবরোধ কর্মসূচির প্রথম দিনে সারাদেশে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও পুলিশের ত্রিমুখী সংঘর্ষে দুজন নিহত ও শতাধিক আহত হয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরে বিএনপির সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে দুজন নিহত হয়েছেন। অন্যদিকে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও পুলিশের মধ্যে ত্রিমুখী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষে পুলিশ সদস্যসহ অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। এদিকে হবিগঞ্জের বাহুবলে বিএনপির অবরোধ চলাকালে দলটির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও পুলিশের সংঘর্ষ হয়। এছাড়া লক্ষ্মীপুর জেলার কয়েটি স্থনে সড়কে গাছের গুঁড়ি ফেলে ও টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন অবরোধকারীরা। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর:
কিশোরগঞ্জ: কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরে বিএনপির সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে। এতে দুজন নিহত হয়েছেন। তারা কৃষক দল ও ছাত্রদলের নেতা বলে দাবি করেছে বিএনপি। গতকাল সকাল ৮টায় উপজেলার ছয়সূতী ইউনিয়নের ছয়সূতী এলাকায় এ সংঘর্ষ ঘটে। এ ঘটনায় বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সকাল ৯টায় কুলিয়ারচর উপজেলার ছয়সূতী ইউনিয়নে আঞ্চলিক সড়কে অবস্থান নেন বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। পুলিশ বাধা দিলেও সড়কে মিছিল করেন তারা। এ সময় পুলিশের সঙ্গে নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ বাধে।
বিএনপি নেতাকর্মীদের দাবি, সংঘর্ষে পুলিশের গুলিতে ছয়সূতী ইউনিয়নের চার নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রদলের সহসভাপতি রেফায়েত উল্লাহ (২২) এবং একই ইউনিয়েনের ৫ নম্বর ওয়ার্ড কৃষক দলের সদস্য বিল্লাল হোসেন (৩০) নিহত হয়েছেন।
কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ ইমরান সালে প্রিন্সের দাবি, আমাদের দুজন কর্মী নিহত হয়েছেন। পুলিশের গুলিতে তারা মারা গেছেন।
ভাগলপুর জহিরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার রোকন উদ্দীন বলেন, আমাদের হাসপাতালে একজনকে মৃত অবস্থায় আনা হয়েছে। তার নাম রেফায়েত উল্লাহ। বয়স ২০ বছর। তার বাড়ি উপজেলার ছয়সূতী ইউনিয়নের বড় ছয়সূতী গ্রামে।
শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. কামরুল হাসান বলেন, বিল্লাল হোসেন (৩০) নামে
একজনের মরদেহ হাসপাতালে এনেছে পুলিশ। এছাড়া একজন আহত ব্যক্তিকেও আনা হয়েছে।
কুলিয়ারচর থানার ওসি মো. গোলাম মোস্তফা বলেন, বিএনপির সমর্থকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ ঘটেছে। এ সময় পুলিশকে মারতে এলে তখন আত্মরক্ষায় গুলি ছুড়লে দুজন নিহত হওয়ার খবর শুনেছি। তবে কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ একজনের নিহত হওয়ার খবর নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, কীভাবে ওই যুবক নিহত হয়েছেন, তা এখনো বলা যাচ্ছে না। পরে বিস্তারিত জানা যাবে।
নারায়ণগঞ্জ: বিএনপি-জামায়াতের ডাকা অবরোধের প্রথম দিনে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও পুলিশের মধ্যে ত্রিমুখী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষে পুলিশ সদস্যসহ অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৮টায় আড়াইহাজারে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ককের পাঁচরুখী এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এসময় কয়েকটি বাস ভাঙচুর করা হলে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
স্থানীয়রা জানান, বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদের নেতৃত্বে বিএনপির নেতাকর্মীরা আগুন জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করলে পুলিশ এতে বাধা দেয়। এসময় বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষ শুরু হয়। সংঘর্ষের একপর্যায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও অংশ নেন। শুরু হয় ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া। ত্রিমুখী সংঘর্ষ কয়েক ঘণ্টা ধরে চলে। এসময় পুলিশ বিএনপির নেতাকর্মীদের ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ারশেল ও ফাঁকা গুলি ছোড়ে।
বিএনপির গুলিবিদ্ধরা হলেনÑবিএনপির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ, জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মাসুকুল ইসলাম রাজীব, উপজেলা বিএনপির সভাপতি জুয়েল আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান হাবু, কালাপাহাড়িয়া ইউনিয়ন যুবদলের সাবেক আহ্বায়ক মুছা, জেলা কৃষক দলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আলম এবং বিশনন্দী ইউনিয়ন বিএনপির মুজিবর ও খাজা মাঈনুদ্দিন। সংঘর্ষে আড়াইহাজার থানার তদন্ত কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির মোল্লা, এএসআই মতিন ও কনস্টেবল নজরুল হক আহত হন।
নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) আমীর খসরু বলেন, বিএনপির নেতাকর্মীরা আমাদের ডিউটিরত পুলিশের ওপর চড়াও হয়। আমাদের বেশ কয়েকজনকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে আহত করে তারা। তাদের মধ্যে দুই পুলিশ সদস্যকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি করা হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। হামলাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
লক্ষ্মীপুর: বিএনপির ডাকা টানা তিন দিনের অবরোধের প্রথম দিন আজ মঙ্গলবার লক্ষ্মীপুর জেলার কয়েটি স্থানে সড়কে গাছের গুঁড়ি ফেলে ও টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করে অবরোধকারীরা। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে তারা সটকে পড়ে। এ সময় পুলিশ সড়ক থেকে প্রতিবন্ধকতা সরিয়ে দেয়। এদিকে জেলার বিভিন্ন স্থানে গতকাল সোমবার দিবাগত রাতে ও গতকাল অভিযান চালিয়ে ২৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
লক্ষ্মীপুর-ঢাকা সড়কের আলিয়া মাদ্রাসা, বাস টার্মিনাল ও লক্ষ্মীপুর-রামগতি সড়কের মিয়ার রাস্তার মাথাসহ বিভিন্ন রাস্তায় গাছের গুঁড়ি ফেলে ও টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেছেন অবরোধকারীরা। অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা এড়াতে শহরের বিভিন্ন স্থানে সতর্ক অবস্থায় রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের শহরের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করতে দেখা যায়। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোহাম্মদ আবু বকর সিদ্দিক জানান, অবরোধে কেউ যেন কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটাতে না পারে, সেদিকে পুলিশের নজর রয়েছে। সড়ক ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। নাশকতার আশঙ্কায় ২৪ জনকে আটক করা হয়েছে।
হবিগঞ্জ: হবিগঞ্জের বাহুবলে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও পুলিশের সংঘর্ষে অন্তত ২২ জন আহত হয়েছেন। গতকাল দুপুরে উপজেলার মিরপুর বাজারে এ ঘটনা ঘটে। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে ছয়জন পুলিশ সদস্য রয়েছেন। গুরুতর আহত এক পুলিশ সদস্যকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। অন্য আহত ব্যক্তিরা হবিগঞ্জ জেলা হাসপাতাল ও বাহুবল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছেন।
এ সম্পর্কে বাহুবল থানার ওসি মশিউর রহমান বলেন, গণপরিবহনের নিরাপত্তার জন্য সকাল থেকে পুলিশ ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের মিরপুর এলাকায় অবস্থান নেয়। বিএনপির নেতা-কর্মীরা হঠাৎ পুলিশ সদস্যদের লক্ষ করে হামলা চালান। এতে ছয় পুলিশ সদস্য আহত হন। তাদের মধ্যে গুরুতর আহত একজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
বাহুবল উপজেলা বিএনপির সভাপতি তোষার চৌধুরী বলেন, তারা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করতে মিরপুর বাজার এলাকায় জড়ো হন। তখন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা হঠাৎ করে পুলিশের সহযোগিতা নিয়ে তাদের ওপর হামলা চালান। এতে তাদের ১০-১২ জন নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন।
বাহুবল উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল হাই বলেন, বিএনপির নেতা-কর্মীরা পুলিশের ওপর হামলা চালান। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা পুলিশকে সহযোগিতা করেন।