সারাদেশে নজরদারি বাড়াতে হবে: প্রধানমন্ত্রী

শেয়ার বিজ ডেস্ক: সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে দেশের প্রতিটি এলাকায় নজরদারি বাড়ানোর পাশাপাশি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের শান্তি সম্মেলন, শান্তি মিছিল ও শান্তি সভার আয়োজন করতে বলেছেন দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

দুর্গাপূজার মধ্যে সম্প্রতি দেশের কয়েকটি জেলায় হিন্দুদের ওপর সাম্প্রদায়িক সহিংসতার প্রেক্ষাপটে গতকাল বৃহস্পতিবার এক ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে একথা বলেন তিনি। সূত্র: বিডি নিউজ।

এ অনুষ্ঠানে কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের নবনির্মিত অফিস ভবন উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কুমিল্লাতেই গত ১৩ অক্টোবর পূজামণ্ডপে ‘কোরআন অবমাননার’ কথিত অভিযোগ তুলে ধরে মন্দিরে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের প্রথম ঘটনাটি ঘটে। পরে তা ছড়িয়ে পড়ে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মৌলভীবাজার, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, গাজীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী ও রংপুরে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আওয়ামী লীগের কর্মীদের এটাই মনে রাখতে হবে যে, আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে মানুষের সেবা করতে। মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের পর জাতির পিতা যখন প্রত্যাবর্তন করলেন, তখন তিনি যে ভাষণ দিয়েছিলেন, সেখানেও তিনি সেই কথা বলেছেন। তার জীবনটাকে তিনি বিলিয়ে দিয়েছেন বাংলার মানুষের জন্য। কাজেই সেই আদর্শের যারা নেতাকর্মী, তাদের মাথায় সেটাই থাকতে হবে।’

নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে হবে। প্রত্যেকটা এলাকায় এলাকায় আমাদের নেতাকর্মীদের নজরদারি বাড়াতে হবে। শান্তি সম্মেলন, শান্তি মিছিল ও শান্তি সভা করতে হবে।’

সম্প্রীতির ব্যবস্থা নিতে হবে, যেন কোনো রকমের সংঘাত দেখা না দেয়। কারণ এই মাটিতে প্রত্যেকটা ধর্মের মানুষ সে মুসলমান হোক, হিন্দু হোক, খ্রিস্টান হোক, বৌদ্ধ হোক সবাই যেন ভালোভাবে বাঁচতে পারে।

সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে এরই মধ্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। চার শতাধিক ব্যক্তিকে এরই মধ্যে আটক করেছে পুলিশ।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কুমিল্লার ওই ঘটনার পর সঙ্গে সঙ্গে পীরগঞ্জসহ বিভিন্ন জায়গায় ঘটনা ঘটেছে। সঙ্গে সঙ্গে যাদের ঘরবাড়ি পুড়িয়েছে, টেন্ট করে তাদের থাকার ব্যবস্থা এবং প্রথমে শুকনো খাবারের ব্যবস্থা, পরে রান্না করা খাবার দেয়া হচ্ছে। তাদের কাপড়চোপড়সহ সবকিছুর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। যাদের এভাবে ক্ষতি হয়েছে, ক্ষতিগ্রস্তদের সবাইকেই আমরা ঘরবাড়ি তৈরি করে দেব এবং এরই মধ্যে সেই ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি।

বিএনপির সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘যেখানেই মানুষের ওপর এ ধরনের নির্যাতন হয়, আওয়ামী লীগ পাশে থাকে। আর বিএনপি-জামায়াত তাদের কাজই তো ধ্বংস করা। তাদের অগ্নিসন্ত্রাসে কত মানুষ জীবন দিয়েছে, কত মানুষ মারা গেছে। আমাদের কত নেতাকর্মীদের ওপর অকথ্য অত্যাচার করেছে, নির্যাতন করেছে দিনের পর দিন।’

দেশের সার্বিক উন্নয়নে আওয়ামী লীগ সরকারের নেয়া নানা পদক্ষেপের কথাও অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, ‘দেশটা যখন উন্নত হচ্ছে, একটা শ্রেণি আছে, তারা কখনও সেটা মানতে পারে না এবং তাদের কাছে সেটা পছন্দই নয়। বাংলাদেশ মাথা উঁচু করে চলবে, সম্মান নিয়ে চলবে, এটা বোধহয় এদের পছন্দই হয় না। আর বিশেষ করে বিএনপি-জামায়াত, এদের তো হবেই না। কারণ খালেদা জিয়া নিজেই অন্তরে সব সময় ছিল পেয়ারে পাকিস্তান। সে তো সব সময় পেয়ারে পাকিস্তান নিয়েই থাকত। এটা হলো বাস্তব কথা।’

ভবিষ্যতে আর কেউ বাংলাদেশের ‘ক্ষতি করতে পারবে না’ বলে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা আর কখনও কারও অধীনস্থ হব না। স্বাধীন জাতি হিসেবে সারাবিশ্বে মাথা উঁচু করে আমরা চলব। সেই কথাটা সবাইকে মনে রাখতে হবে।’

বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের জীবনমান উন্নয়নে সরকারের নেয়া পদক্ষেপের কথা অনুষ্ঠানে তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মানুষকে মানুষ হিসেবে আমি দেখি। কাজেই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদেরও মানুষকে মানুষ হিসেবেই দেখতে হবে। আর সেভাবে মানুষের সেবা করতে হবে।’

১৯৭৫ সালে জাতির পিতাকে হত্যার পর এদেশে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর ‘অনেক অত্যাচার’ হয়েছে বলে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সেই জিয়াউর রহমান যখন সংবিধান লঙ্ঘন করে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে, তার পর থেকে এদেশে সেনাবাহিনীতে ১৯টা ক্যু হয়েছে। যে সেনাবাহিনীতে ১৯টা ক্যু হয়, আর প্রত্যেকটা ক্যুর পর সেনা অফিসার, সৈনিকদের হত্যা করা হয়, সেই সেনাবাহিনীকে শক্তিশালী বা ডিসিপ্লিনড সেনাবাহিনী কখনও বলা যায় না। আওয়ামী লীগ সরকারে ফেরার পর সশস্ত্র বাহিনীর উন্নয়ন ও আধুনিকায়নের উদ্যোগ নেয়।’

কুমিল্লা জেলার উন্নয়নে আওয়ামী লীগ সরকারের নেয়া নানা পদক্ষেপের কথাও অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০