নিজস্ব প্রতিবেদক: হাইকোর্ট কর্তৃক প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটাসহ ৫৬ শতাংশ কোটা পুনর্বহালের আদেশের বিরুদ্ধে এবং ২০১৮ সালের পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে আজ রোববার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন কর্মসূচি ঘোষণা দিয়েছেন কোটা সংস্কার আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোয় ‘বাংলা বøকেড’ (অবরোধ) কর্মসূচিরও ঘোষণা দেয়া হয়েছে।
রোববার বিকাল ৩টায় সারাদেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ‘বøকেড’ কর্মসূচি শুরু হবে বলে শনিবার বিকাল সাড়ে ৫টায় শাহবাগ মোড়ে অবরোধ শেষে এ ঘোষণা দেন কোটা আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম।
বিকাল ৩টায় শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি হল থেকে আলাদা ব্যানারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট্রাল লাইব্রেরির সামনে জড়ো হন। পরে সেখান থেকে বিশাল মিছিল নিয়ে হলপাড়া-ভিসি চত্বর-টিএসসি-বকশীবাজার-বুয়েট-ইডেন কলেজ-হোম ইকোনমিকস-নীলক্ষেত-টিএসসি হয়ে বিকাল ৫টায় শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা।
সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘সরকার ভেবেছে আমরা এক-দুদিন আন্দোলন করব এবং একদিন ক্লান্ত হয়ে যাব। আমরা এখন পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করে যাচ্ছি। আমাদের যদি বাধ্য করা হয় আমরা প্রয়োজনে সারাদেশে হরতালের মতো কর্মসূচি দিতে বাধ্য হব। আজকের ছাত্রসমাজকে আদালতের মুখোমুখি করা হচ্ছে’Ñএ দায় নির্বাহী বিভাগ এড়াতে পারে না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে যেতে বাধাদানের কারণে ছাত্রলীগের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে নাহিদ বলেন, ‘আমরা কিন্তু হলের তালা ভাঙতে জানি। শিক্ষার্থীদের যদি বাধা দেয়া হয় এর জবাব আপনাদের দিতে হবে। যদি আমরা চাকরি না পাই তাহলে আপনাদেরও চাকরি থাকবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা শুধু শাহবাগে বসে থাকব না। আগামীকাল বিকাল ৩টা থেকে ‘বাংলা বøকেড’ কর্মসূচি ঘোষণা করা হলো। আগামীকাল ঢাকা শহরের শাহবাগ, নীলক্ষেত, মতিঝিল, চানখারপুল, সায়েন্সল্যাবসহ প্রতিটি পয়েন্টে শিক্ষার্থীরা নেমে আসবেন এবং বাংলা বøকেড কর্মসূচি সফল করবেন। ঢাকার বাইরে শিক্ষার্থীরা সব মহাসড়কগুলো অবরোধ করবেন।’
নাহিদ ইসলাম আরও বলেন, ‘আমরা নির্বাহী বিভাগের কাছে জানতে চাই ২০১৮ সালের পরিপত্র কেন বাতিল করা হলো? শিক্ষকদের আন্দোলন কিন্তু বন্ধ হয়ে যাবে, আমাদের আন্দোলন বন্ধ হবে না। এরই মধ্যে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ক্লাস পরীক্ষা বর্জন করে আমাদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেছে। আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা ক্লাসে ফিরে যাব না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি ও সায়েন্স লাইব্রেরি খুলে দেয়ার আহŸান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনারা যদি না খোলেন তাহলে আমরা নিজ দায়িত্বে খুলে নিতে বাধ্য হবো।’
এদিকে সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি সংস্কার ও মেধাভিত্তিক নিয়োগ নিশ্চিতের দাবিতে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। গতকাল বিকাল ৩টায় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মিছিল নিয়ে নগরীর শিববাড়ি মোড়ে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। তাদের কর্মসূচিতে খুলনার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। এ সময় নগরীর শিববাড়ি মোড়ে সড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। এতে খুলনা-যশোর মহাসড়ক, শিববাড়ি-সোনাডাঙ্গা সড়ক ও শিববাড়ি-ময়লাপোতা সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
অন্যদিকে পদযাত্রা ও ছাত্রসমাবেশ করেছে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) সাধারণ শিক্ষার্থীরা। দাবি আদায়ে গতকাল দুপুরে নগরীর মডার্ন মোড়ে রংপুর-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল ও ছাত্রসমাবেশ করেন তারা। এ সময় মহাসড়?কের কয়েক? কি?লোমিটার এলাকাজুড়ে যান চলাচলে বিঘœ সৃষ্টি হয়। এর আগে দুপুর ১২টার দিকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বঙ্গবন্ধু ম্যুরাল থেকে একটি পদযাত্রা বের করা হয়। ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ শেষে আন্দোলনকারীরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে মডার্ন মোড়ে রংপুর-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করেন।
এছাড়া টাঙ্গাইলে মহাসড়ক অব?রোধ ক?রে কোটা পদ্ধতি বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ ক?রে?ছে শিক্ষার্থীরা। মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এ কর্মসূচি পালন ক?রেছে। এ সময় মহাসড়?কের কয়েক? কি?লোমিটার এলাকায় যান চলাচল বন্ধ ছিল।
