শেখ আবু তালেব: ব্যাংকিং বলতে একসময় শহরের মানুষের সেবা বোঝাত। সেই ব্যাংক এখন মফস্বলের ইউনিয়ন পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। ফলে ব্যাংকিং সেবা এখন হাতের মুঠোয়, যদিও মোট জনসংখ্যার অর্ধেকই এখনও ব্যাংকিং সেবার আওতায় আসেননি। তাই গ্রাহক টানতে প্রতিনিয়ত শাখা বাড়াচ্ছে ব্যাংকগুলো। বর্তমানে সারাদেশে প্রায় ১১ হাজার শাখা রয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশে অনুমোদিত তফসিলি ব্যাংকের সংখ্যা ৬১টি। গত ডিসেম্বর শেষে সারাদেশে এসব ব্যাংকের শাখার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ৯৩৭টিতে। এর মধ্যে শহর তথা বিভাগ, সিটি করপোরেশন ও উপজেলা সদরে অবস্থিত পাঁচ হাজার ৬২৩টি, অবশিষ্ট পাঁচ হাজার ৩১৪টি গ্রামাঞ্চলে। এসব শাখার বেশিরভাগই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের।
শাখার সংখ্যা বিবেচনায় এখনও শীর্ষে রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের ব্যাংকগুলো। দেশে সর্ববৃহৎ নেটওয়ার্কের রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের শাখার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে এক হাজার ২২৭টিতে। এরপর ৯৬২টি শাখা নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংক। তৃতীয় অবস্থানে থাকা জনতা ব্যাংকের শাখা ৯১৪টি।
চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে রূপালী ব্যাংক, ৫৮৬টি। অবশ্য বিশেষায়িত ব্যাংক বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের শাখার সংখ্যা এক হাজার ৩৮টি। এছাড়া বেসরকারি খাতের মধ্যে শাখার সংখ্যা বিবেচনায় শীর্ষে রয়েছে পূবালী ব্যাংক। সারাদেশে শহুরে এলাকায় ২৮৮টি ও গ্রামীণ এলাকায় ২০২টি নিয়ে ব্যাংকটির শাখার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৯০টিতে। এরপর রয়েছে শরিয়াহ্ভিত্তিক বাংলাদেশ ইসলামী ব্যাংকের ৩৮৪টি শাখা। এসবের মধ্যে শহুরে এলাকায় রয়েছে ২৩৭টি ও গ্রামীণ এলাকায় ১৪৭টি। এরপর উত্তরা ব্যাংকের ২৪৩টি। এছাড়া ২২০টি শাখা নিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করছে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক। সারাদেশে ব্যাংকটির শাখার মধ্যে শহরে ১৫০টি ও গ্রামে রয়েছে ৭০টি।
এদিকে বাংলাদেশে কার্যরত বিদেশি শাখাগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ শাখা রয়েছে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের। এ ব্যাংকটির মোট শাখার সংখ্যা ১৮টি। আর ১১টি শাখা নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে কমার্শিয়াল ব্যাংক অব সিলন। সাতটি শাখা নিয়ে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে ব্যাংক আল-ফালাহ, দি এইচএসবিসি লিমিটেড ও উরি ব্যাংক। বর্তমানে দেশে ৯টি বিদেশি ব্যাংকের শাখা রয়েছে। সারাদেশে তাদের ৬৫টি শাখার সবই শহরে। মফস্বলে তাদের কোনো শাখা নেই।
দেশে ব্যাংকের সংখ্যা ৬১টি হলেও সিটিজেনস ব্যাংক এখনও কোনো শাখা খুলতে পারেনি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ব্যাংক খাতে এক লাখ ৮৬ হাজারের বেশি জনবল নিয়োজিত রয়েছে। ফলে প্রাতিষ্ঠানিক হিসেবে কর্মসংস্থানের জন্য বিশাল ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে ব্যাংক খাতে।
প্রসঙ্গত, গত নভেম্বর পর্যন্ত এসব ব্যাংকের মাধ্যমে বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৫ লাখ ৮১ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা। এর বিপরীতে একই সময় আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৩ লাখ ৯৩ হাজার ৭৩৮ কোটি টাকায়। ডিসেম্বরের তথ্য এখনও প্রকাশ করেনি বাংলাদেশ ব্যাংক।
জানা গেছে, একসময় ব্যাংকিং সেবা শুধু শহুরে এলাকায় সীমাবদ্ধ ছিল। জনগণের চাহিদা মেটাতে শুধু রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের শাখা শহুরে এলাকার বাইরে গ্রামে সেবা দিত। সময়ের আলোকে দেশে বেসরকারি খাতের ব্যাংকের পরিসর বড় হওয়ায় তা গ্রামে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলো গ্রামে যেতে আগ্রহ দেখাত না। তখন বাংলাদেশ ব্যাংক সিদ্ধান্ত নেয় শহরে দুটি শাখা করলে তৃতীয় শাখা করতে হবে গ্রামে। অর্থাৎ গ্রামে একটি শাখা করলে তার বিপরীতে শহরে দুটি শাখা করার অনুমোদন দেয়া হয়।
এতে কাজ হয়। ব্যাংকগুলো শহরে সংখ্যা বাড়াতে ছুটে যায় গ্রামীণ এলাকায়। বর্তমানে এ নিয়ম পরিবর্তন করে ১:১ করা হয়েছে। অর্থাৎ শহরে একটি শাখা করলে গ্রামেও একটি শাখা খুলতে হবে। ফলে শাখার সংখ্যা বাড়াতে ব্যাংকগুলো এখন একটু সতর্ক হচ্ছে।
শাখা স্থাপনের চেয়ে উপ-শাখা ও এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের দিকে ঝুঁকে পড়ছে। ক্ষেত্রভেদে ৫-৭ জন নিয়েই একটি উপ-শাখা পরিচালনা করা যায়। শাখার অধীনেই এসব উপ-শাখা পরিচালিত হয়। সব ধরনের ব্যাংকিং সেবাই এখন উপ-শাখা থেকে পাওয়া যাচ্ছে। পরিচালন খরচ কম হওয়ায় ব্যাংকগুলো এদিকে ঝুঁকছে। আবার মফস্বল এলাকায় নিজেদের নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণে এজেন্ট ব্যাংকও খুলছে তারা। এভাবে শহর থেকে ইউনিয়নের প্রত্যন্ত এলাকার মানুষ সহজেই এখন ব্যাংকিং সেবার আওতায় চলে আসছে।
ইতিবাচক সাড়া পেয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের চেয়ে এখন বেসরকারি ব্যাংকগুলো প্রত্যন্ত এলাকায় শাখা পরিচালনায় আগ্রহী হয়ে উঠেছে। সারাদেশের মধ্যে মফস্বল এলাকায় শাখার সংখ্যা পাঁচ হাজার ৩১৪টি। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের শাখাই তিন হাজার ৮১০টি। অবশিষ্ট ২ হাজার ৫০টি শাখা বেসরকারি ব্যাংকের। মোট ১০ হাজার ৯৩৭টি শাখার মধ্যে পাঁচ হাজার ৫৫০টি হচ্ছে বেসরকারি খাতের।