নিজস্ব প্রতিবেদক: শিগগির ৩৩ হাজার বিদ্যালয়ে পাঠাগার তৈরি করা হবে। পর্যায়ক্রমে সারাদেশের সব বিদ্যালয়ে পাঠাগার করা হবে। এছাড়া দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ডিজিটাল মনিটরিংয়ের আওতায় আনা হবে।
গতকাল শনিবার রাজধানীর মহানগর নাট্যমঞ্চে কাজী বশির মিলনায়তনে বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির ৪১তম সাধারণ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা জানান শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে পাঠাগার তৈরির একটি প্রকল্প আমাদের ৩০০টি বিদ্যালয়ে ছিল। সেটি আমরা ৩৩ হাজার বিদ্যালয়ে নিয়ে যেতে চাই। এর জন্য অনেক বড় বিনিয়োগ লাগছে, কিন্তু আমরা সেটি করব। এরই মধ্যে তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। এ নিয়ে নানা প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছিল। সেগুলো যাচাই-বাছাই করতে সময় লেগেছিল। আশাকরি শিগগিরই কাজ শুরু হবে। দুশ্চিন্তার কোনো কারণ থাকবে না। তারপরও এ বছর যা বাস্তবায়িত হবে, আগামী বছর তা আরও পরিশীলিতভাবে করতে পারব বলে আশা করি।’
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘সারাদেশে পাঠাগার চালু করার জন্য বারবার তাগাদা দিচ্ছি। আমাদের অনেক বেশি মনিটর করতে হবে। এজন্য সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে ডিজিটাল কানেক্টে আনার চেষ্টা করছি, যাতে আমরা এক জায়গায় বসে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম নিয়মিত দেখতে পাই। ডিজিটাল হয়ে গেলে আমরা পাঠাগারের কার্যক্রমও দেখতে পাব।’
তিনি আরও বলেন, ‘পাঠাগারের একটা ঘর আছে, একটি আলমারি আছে, এগুলোয় তালা মারা থাকে, ভেতরে ধুলাবালি পড়ে থাকে, তেমন যেন না হয়। পাঠাগারের কাজ ঠিকমতো হওয়া প্রয়োজন। লাইব্রেরিয়ান পদটিকে শিক্ষকের মর্যাদা দেয়া হয়েছে। সেটি যেহেতু করা হয়েছে, তাহলে পাঠাগারের উন্নয়ন অবশ্যই হবে।’
প্রকাশকদের পক্ষে পুরস্কার হিসেবে বই দেয়ার প্রস্তাবে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘পুরস্কারের নির্দেশনা আগেই দেয়া হয়েছে। আমি এরই মধ্যে যে কয়েক জায়গায় গিয়েছি, প্লেট-বাসন, এটা-ওটা দিয়েছে। এর বদলে এখন বই দেয়ার কাজটি শুরু হয়েছে। এটি হয়তো আরও ব্যাপকভাবে হতে হবে, আমরা যত বেশি প্রচার করতে পারব।’
দীপু মনি বলেন, ‘শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে শুধু অনুরোধ নয়, নির্দেশনা দিচ্ছি। আরও বেশি মনিটর করব। আপনারা (প্রকাশকরা) আরও বেশি মনে করিয়ে দিতে থাকবেন। তাহলে আরও বেশি মনিটার করার সুযোগ তৈরি হবে।’
একদিকে কাগজ আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি। অন্যদিকে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বছরের প্রথম দিন শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছে দেয়ার জন্য ডিসেম্বরের মধ্যেই পাঠ্যবই চেয়েছেন প্রকাশকদের কাছে।
অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘সারাবিশ্ব সংকটের মুখে। তাড়াতাড়ি সুসংবাদও পাব না। টিকে থাকতে হবে। কদিন আগে কাগজ বিক্রেতাদের সঙ্গে বসেছি। তারা কথা দিয়েছেন ১ জানুয়ারিতে বই দিতে পারব। এরপরও কথার খেলাপ হলে সরকার ব্যবস্থা নেবে। সন্তানদের শিক্ষার সঙ্গে আপসের সুযোগ নেই। বই আমার লাগবেই এবং ১ তারিখেই লাগবে।’
প্রসঙ্গত, গত ৬ অক্টোবর মুদ্রণ প্রতিষ্ঠান মালিক ও পেপারমিল মালিককের সঙ্গে বৈঠক করেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এবং শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী। ওই বৈঠকের সিদ্ধান্তে বলা হয়, দেশীয় পেপার মিল মালিকরা দরপত্রের স্পেসিফিকেশনের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ মূল্যে কাগজ সরবরাহ করবেন। দেশীয় পেপার মিল মালিকরা সংগতিপূর্ণ মূল্যে এবং চাহিদা অনুযায়ী কাগজ সরবরাহ না করলে মুদ্রণশিল্প মালিকদের কাগজ আমদানির অনুমতি দেয়া হবে। আগামী বছর ১ জানুয়ারিতে শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দিয়ে সরকারের অঙ্গীকার বাস্তবায়নে পেপার মিল মালিক, মুদ্রণশিল্প মালিকসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে সহযোগিতা করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়। পরবর্তী শিক্ষাবর্ষে স্পেসিফিকেশন ঠিক করার সময় ব্রাইটনেস বিষয়ে পেপার মিল মালিকদের প্রস্তাব বিবেচনায় নেয়া হবে বলে বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির ৪১তম সাধারণ সভায় গতকাল শিক্ষামন্ত্রী মিল মালিকরা স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী কাগজ না দিলে ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানান।