সারা দেশে আজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা

নিজস্ব প্রতিবেদক: নিরাপদ সড়ক চেয়ে গত চারদিন ধরে রাজধানীতে আন্দোলন করছে স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীরা। এর জের ধরে নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে আজ সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ গতকাল এ ঘোষণা দেন।
বৃহস্পতিবার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণার আগে তিনি নিজ মন্ত্রণালয়ে বৈঠক করেন সিনিয়র কর্মকর্তাদের নিয়ে। বৈঠকে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সোহরাব হোসাইন, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. মাহবুবুর রহমান এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবরা উপস্থিত ছিলেন।
সড়ক দুর্ঘটনায় দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় নিরাপদ সড়ক চেয়ে আন্দোলন করছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। রাস্তায় অবরোধ করে রাখায় রাজধানী ঢাকা মূলত দিনের বেলায় স্থবির হয়ে পড়ছে। দুর্ঘটনার জন্য দায়ী চালকদের ফাঁসি, ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলাচল এবং লাইসেন্স ছাড়া চালকদের গাড়ি চালানো বন্ধ করাসহ বিভিন্ন দাবিতে গতকালও সারা দিন রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ, অবরোধ ও ভাংচুর চলে।
এ বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ছে চট্টগ্রামসহ অন্যান্য বিভাগীয় শহর থেকে জেলা শহরেও। যানবাহন সংকটে সাধারণ মানুষের কষ্ট হলেও কোনো ক্ষোভ বা অসন্তোষ নেই আন্দোলনকারীদের প্রতি। উল্টো নৈতিক সমর্থন জানাচ্ছেন সবাই।
গতকাল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এক সভায় শিক্ষামন্ত্রী মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় দুই শিক্ষার্থীর নিহত ও কয়েকজন শিক্ষার্থীর আহত হওয়ার ঘটনায় গভীর শোক ও সমবেদনা প্রকাশ করেন। নাহিদ বলেন, ‘এ ধরনের অনাকাক্সিক্ষত দুর্ঘটনায় সহপাঠীর মৃত্যুতে কোমলমতি শিক্ষার্থীসহ আমরা শিক্ষা পরিবারের সবাই শোকার্ত। ওই দুর্ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা এবং সড়ক পরিবহনকে সুশৃঙ্খল ও নিরাপদ করার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন।’
দোষীদের গ্রেফতার করা হয়েছে ও শাস্তির বিষয়ে আইনানুগ কার্যক্রম গ্রহণ অব্যাহত আছে। সভায় মন্ত্রী সংশ্লিষ্ট সব শিক্ষক, অভিভাবক ও অন্যদের শিক্ষার্থীদের পাশে থেকে শিক্ষা কার্যক্রমে সহযোগিতা করার জন্য ভূমিকা রাখতে অনুরোধ জানান।
গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা যায়, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা গাড়ি থামিয়ে চালকদের লাইসেন্স পরীক্ষা করছে। বাংলামোটরে উল্টো পথে যাওয়ার সময় বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের গাড়ি ফিরিয়ে দেয় তারা। সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড়ে ছাত্ররা পুলিশের একটি গাড়ি আটক করে চালকের লাইসেন্স দেখতে চায়। পুলিশের এক কনস্টেবল চালকের লাইসেন্স দেখাতে না পারলে দুই ঘণ্টা আটকে রাখে গাড়িটি। পরে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এসে গাড়িটি ছাড়িয়ে নেন।
বিরাজমান এসব পরিস্থিতির মধ্যে সচিবালয়ে পরিবহন মালিক ও শ্রমিক প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। সেখানে নৌ-মন্ত্রী শাহজাহান খানও উপস্থিত ছিলেন। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সোহরাব হোসাইন, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. মাহবুবুর রহমান এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবরা ওই সভায় উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকের পরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে সব পদক্ষেপ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফিরে যাওয়ার জন্য আহ্বান জানান। কিন্তু স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এ ঘোষণা বাস্তবে কোনো প্রতিফলন দেখা যায়নি।
ছাত্রছাত্রীরা বৃহস্পতিবারও আন্দোলন অব্যাহত থাকবে বলে ঘোষণা দেয়। এরকম পরিস্থিতিতে নিরাপত্তার কারণ ও ছাত্রছাত্রীদের উদ্বেগের কারণ দেখিয়ে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ঘোষণা দেন শিক্ষামন্ত্রী।

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০