Print Date & Time : 18 June 2025 Wednesday 10:18 pm

সারে ভর্তুকি লাগবে ২৮ হাজার কোটি টাকা: কৃষিমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক: আন্তর্জাতিক বাজারে সারের দাম বাড়ায় দেশে চলতি অর্থবছরে (২০২১-২২) সারে ভর্তুকিতে ২৮ হাজার কোটি টাকা লাগবে বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক। গতকাল ঢাকায় এফডিসিতে ‘নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতকরণে সরকারের যথাযথ পদক্ষেপ নিয়ে’ ছায়া সংসদে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। জাতীয় নিরাপদ খাদ্য দিবস উপলক্ষে ডিবেট ফর ডেমোক্র্যাসি এ বিতর্ক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

অনুষ্ঠানে মন্ত্রী বলেন, এত বিশাল অঙ্কের ভর্তুকি কোথা থেকে আসবে এ বিষয়ে সরকার দুশ্চিন্তায় রয়েছে। তবে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের গতি শ্লথ হলেও সারে ভর্তুকি দিয়ে যাবে সরকার।

বর্তমান সরকার কর্তৃক সারের চার দফা দাম কমানোর যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত ও ভর্তুকি দেয়ার প্রসঙ্গ তুলে কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, চলতি অর্থবছরে সারের ভর্তুকিতে ২৮ হাজার কোটি টাকা লাগবে। এখন পর্যন্ত ১৯ হাজার কোটি টাকার ভর্তুকি দেয়া হয়েছে এবং আগামী জুন পর্যন্ত আরও ৯ হাজার কোটি টাকা (মোট ২৮ হাজার কোটি) প্রয়োজন হবে। আন্তর্জাতিক বাজারে সারের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধি ও পরিবহন ব্যয় বাড়ার ফলেই এ বিশাল অঙ্কের ভর্তুকি লাগবে। এমনিতে আমাদের প্রতি বছর আট থেকে ৯ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকিতে লাগে।

তিনি বলেন, এত ভর্তুকি দিলে অন্যান্য উন্নয়ন কর্মকাণ্ড স্থবির হয়ে যাবে। কিন্তু কৃষকবান্ধব ও কৃষকদরদী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন কৃষকের কল্যাণে ও কৃষির উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে এ মুহূর্তে সারের দাম বাড়াবেন না। অন্যান্য উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের গতি শ্লথ হলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারে ভর্তুকি দিয়ে যাবেন।

প্রসঙ্গত, চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ছয় হাজার কোটি টাকার ভর্তুকি দেয়া হয়েছে, প্রক্রিয়াধীন রয়েছে ১৩ হাজার কোটি টাকা। আর জুন পর্যন্ত প্রয়োজন হবে আরও ৯ হাজার কোটি টাকা। কৃষি মন্ত্রণালয়ের পর্যালোচনায় এ তথ্য উঠে এসেছে। এদিকে গত ২০২০-২১ অর্থবছরে সারে ভর্তুকি দেয়া হয়েছিল সাত হাজার ৭০০ কোটি টাকা।

আগামী তিন-চার বছরের মধ্যে সবার জন্য নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা সম্ভব হবে জানিয়ে কৃষিমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার সবার জন্য নিরাপদ খাবারের নিশ্চয়তা দিতে নিরলসভাবে কাজ করছে। সেজন্য নিরাপদ খাদ্য আইন প্রণয়ন করেছে, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ গঠিত হয়েছে। নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সক্ষমতা বৃদ্ধির কাজ চলছে। এছাড়া ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক মানের অনেকগুলো ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে। আরও অনেকগুলো স্থাপনের উদ্যোগ চলছে।

বিদেশে রপ্তানি করার ক্ষেত্রেও নিরাপদ খাদ্যের নিশ্চয়তা দিতে হবে উল্লেখ করে কৃষিমন্ত্রী বলেন, নিরাপদ ফসলের উৎপাদনের প্রচেষ্টা চলছে। ইতোমধ্যে উত্তম কৃষি চর্চা মেনে উৎপাদন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এটি মেনে ফসল উৎপাদিত হলে খাবার যেমন নিরাপদ ও পুষ্টিকর হবে, তেমনই রপ্তানি বৃদ্ধি পাবে। পূর্বাচলে আন্তর্জাতিক মানের প্যাকিং হাউস ও ল্যাব স্থাপনের কাজ চলছে। সরকারের এসব পদক্ষেপের ফলে আগামী তিন-চার বছরের মধ্যে সবার জন্য নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে আমরা সক্ষম হবো।

আব্দুর রাজ্জাক বলেন, নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাবার নিশ্চিত করতে হলে সাধারণ মানুষের আয়ও বাড়াতে হবে। আয় বাড়াতে না পারলে, জীবনযাত্রার মানের উন্নয়ন ঘটাতে না পারলে ভেজাল ও অনিরাপদ খাবারের প্রকোপ আরও বাড়বে। সেজন্য মানুষের আয় বৃদ্ধি ও গ্রামীণ কৃষিজীবী বৃহৎ জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নত করতে সরকার কৃষি যান্ত্রিকীকরণ, বাণিজ্যিকীকরণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণের কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছে। কৃষিপণ্য রপ্তানি বৃদ্ধি ও উচ্চ মূল্যের অর্থকরী ফসল উৎপাদনে গুরুত্বারোপ করা হচ্ছে।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্বের বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্র্যাসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতে ১০ দফা সুপারিশ তুলে ধরেন। আইনের যথাযথ প্রয়োগ ও জনসচেতনতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করেন বিতর্কে ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের বিতার্কিকরা অংশগ্রহণ করে।