নিজস্ব প্রতিবেদক : নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের জন্য সার্চ কমিটি গঠনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট আবেদন করা হয়েছে। গতকাল সুপ্রিমকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এ আবেদন জমা দেন আইনজীবী ইউনুস আলী আকন্দ। ইসি গঠনে আইন প্রণয়নের নির্দেশনা চেয়ে গত ১১ জানুয়ারি একটি রিট আবেদন করেছিলেন তিনি।
সে সময় ইউনুছ আলী বলেছিলেন, ‘সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদে একটি আইনের অধীনে নির্বাচন কমিশন গঠন ও কার্যক্রম পরিচালনার কথা বলা থাকলেও এখন পর্যন্ত সেই আইন প্রণয়ন করা হয়নি। ফলে একটি গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান সংবিধানের বিধানের বাইরে চলতে পারে না। আর আইনে সার্চ কমিটির কথা নেই। তাই সার্চ কমিটি গঠন করে যে গেজেট জারি করা হয়েছে, তার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে।’
জানা গেছে, সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছেÑ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অনধিক চারজন নির্বাচন কমিশনারকে লইয়া বাংলাদেশের একটি নির্বাচন কমিশন থাকিবে এবং উক্ত বিষয়ে প্রণীত কোনো আইনের বিধানাবলী-সাপেক্ষে রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারকে নিয়োগ দান করিবেন। এছাড়া, নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে স্বাধীন থাকিবেন এবং কেবল এই সংবিধান ও আইনের অধীন হইবেন।’
ইউনুছ আলী আকন্দ বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য আইন তৈরির নির্দেশনা চেয়ে একটি রিট আবেদন বিচারাধীন। এ অবস্থায় সার্চ কমিটি গঠন অবৈধ।’
এই আবেদনে তিনি সার্চ কমিটির বৈধতা নিয়ে রুল চেয়েছেন এবং নির্বাচন কমিশন, মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও আইন সচিবকে বিবাদী করেছেন।
প্রসঙ্গত, রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ গত বুধবার সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে এ সার্চ কমিটি গঠন করে ১০ কার্যদিবসের মধে?্য নতুন নির্বাচন কমিশনের জন?্য নাম প্রস্তাবের দায়িত্ব দিয়েছেন।
সেই মোতাবেক নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে অংশ নেওয়া রাজনৈতিক দলগুলোকে নাম প্রস্তাব করতে বলেছে সার্চ কমিটি। গতকাল শনিবার সার্চ কমিটির প্রথম সভার পর মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের জানান, যে ৩১টি দল সংলাপে অংশ নিয়েছে, তাদের ৩১ জানুয়ারি বেলা ১১টার মধ্যে পাঁচটি করে নাম প্রস্তাব করতে বলা হয়েছে।
এছাড়া নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে মতামত নেওয়ার জন?্য আগামী সোমবার বিকাল ৪টায় সুপ্রিমকোর্টের জাজেস লাউঞ্জে বিশিষ্ট নাগরিকদের সঙ্গে বসবেন সার্চ কমিটির সদস্যরা। এ জাজেস লাউঞ্জেই শনিবার বেলা ১১টা থেকে পৌনে দুই ঘণ্টার প্রথম বৈঠকে সার্চ কমিটির ছয় সদস্যের সবাই উপস্থিত ছিলেন বলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান। নির্ধারিত ১০ কার্যদিবস, অর্থাৎ ৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সার্চ কমিটির সব কার্যক্রম শেষে আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যেই নতুন কমিশন পাওয়া যাবে বলে আশা করছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম।
এদিকে নির্বাচন কমিশন গঠনে সার্চ কমিটি ‘দলীয় সংকীর্ণতা’র ঊর্ধ্বে উঠে কাজ করতে পারবে কি না, সে বিষয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে বিএনপি। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘যে সার্চ কমিটি গঠিত হয়েছে, তারা কী করবেন, এটা সম্পর্কে আমাদের ধারণা প্রায় স্পষ্ট। সেজন্য আমরা পার্টি হিসেবে নতুন করে কোনো আশা দেখতে পাচ্ছি না।’ জাতীয়তাবাদী যুবদলের নবগঠিত কমিটিকে সঙ্গে নিয়ে শনিবার শেরেবাংলা নগরে জিয়াউর রহমানের কবরে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সার্চ কমিটি নিয়ে কথা বলেন বিএনপি মহাসচিব।
এ কমিটি নিয়ে বিএনপির আপত্তির কথা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ প্রত্যাশা করে, রাজনৈতিক সংকট নিরসন করতে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য একটি নিরপেক্ষ সার্চ কমিটি সত্যিকার অর্থেই নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের দিয়ে গঠন করা হবে। কিন্তু… দুর্ভাগ্যজনকভাবে সার্চ কমিটির যারা সদস্য হয়েছেন, তারা প্রায় সবাই আওয়ামী লীগের সাথে সম্পৃক্ত। সেক্ষেত্রে তাদের দ্বারা গঠিত নির্বাচন কমিশন কতটুকু নিরপেক্ষ হবে, সে সম্পর্কে আমরা সন্দেহ প্রকাশ করেছি।’
অন্যদিকে সার্চ কমিটির প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলছেনে, ‘রাষ্ট্রপতির নির্দেশে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য যে সার্চ কমিটি গঠন করা হয়েছে, তা অত্যন্ত নিরপেক্ষ ও খুবই ভালো। সার্চ কমিটির সদস্যরা অত্যন্ত জ্ঞানী-গুণী ও ভালো লোক। যারা সার্চ কমিটি নিয়ে অভিযোগ তুলেছেন তারা ভ্রান্ত ও রাবিশ। এর কোনো ভিত্তি নেই।’
শনিবার (২৮ জানুয়ারি) দুপুরে হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ জে কে উচ্চ বিদ্যালয়ের শতবর্ষ পূর্তি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এ কথা বলেন।
Add Comment