প্রতিনিধি, রাজশাহী: জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল কর্মপরিকল্পনার আওতায় রাজশাহীতে গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত গণশুনানি করেছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। গণশুনানিতে পুলিশের সার্জেন্ট ও বিআরটিএর কর্মকর্তাদের হয়রানির কথা বলতে গিয়ে চালকদের কেউ কেউ কেঁদে ফেলেন।
বিআরটিএর চেয়ারম্যান এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে তাৎক্ষণিকভাবে কিছু সমস্যা সমাধানের নির্দেশ দেন। শুনানিতে রাজশাহীর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) সাবিহা সুলতানা, বিআরটিএর রাজশাহী সার্কেলের উপপরিচালক এসএম কামরুল হাসান ও সহকারী পরিচালক মোশাররফ হোসেনও উপস্থিত ছিলেন। তারাও বিভিন্ন সমস্যার সমাধান দেন।
ড্রাইভিং লাইসেন্সের স্মার্টকার্ড মুদ্রিত হওয়ার আগে চালকদের ই-ড্রাইভিং লাইসেন্স দেয় বিআরটিএ। কিন্তু রাজশাহী অঞ্চলের অনেক সার্জেন্ট ওই ই-ড্রাইভিং লাইসেন্স মানতে চান না। ই-ড্রাইভিং লাইসেন্সধারী চালকদেরও সার্জেন্টরা মামলা দেন বলে অভিযোগ করেন মো. জনি নামের এক ট্রাকচালক। তিনি বলেন, তিনি ই-ড্রাইভিং কার্ড পেয়েছেন ৬ আগস্ট। এখনও স্মার্টকার্ড পাননি। কিন্তু সার্জেন্ট ই-ড্রাইভিং লাইসেন্স দেখালে বলেন, এটা দিয়ে গাড়ি চালানো যাবে না। সার্জেন্টের সঙ্গে কথা বলা যায় না। এ নিয়ে কথা বললে সার্জেন্ট বলেন, ‘যত কথা, ২০০ টাকা করে তত জরিমানা বাড়বে।’ তারা হয় মামলা দেন, অথবা টাকা নেন। তাদের জন্য চালকেরা রাস্তায় অসহায়।
এ নিয়ে বিআরটিএ চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার বলেন, ই-ড্রাইভিং লাইসেন্স চালুর পরপরই তারা পুলিশের মহাপরিদর্শককে (আইজিপি) চিঠি দিয়েছেন। সারাদেশে পুলিশের ইউনিটে চিঠি দিয়েছেন, যেন মামলা না দেয়া হয়। এই কার্ডে কিউআর কোড আছে। সার্জেন্ট তা যাচাই করতে পারেন। এরপরও মামলা দেয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।
এরপর রাজশাহী জেলা পুলিশের ট্রাফিক পরিদর্শককে ডেকে পাঠান বিআরটিএ চেয়ারম্যান। ট্রাফিক পরিদর্শক আনোয়ার হোসেন এসে ই-ড্রাইভিং লাইসেন্সের বৈধতা সম্পর্কে জানেন বলে জানান। বিআরটিএ চেয়ারম্যান তাকে এই লাইসেন্সের বিষয়ে সব ট্রাফিক সার্জেন্টকে জানানোর নির্দেশনা দেন।
বিআরটিএর হয়রানির কথা বলতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন নাটোরের বাসচালক আবদুল মমিন। তিনি বলেন, তার লাইসেন্সের বয়স ১০ বছরের বেশি। এখন তার ভারী যানের লাইসেন্স প্রয়োজন। ঘুরতে ঘুরতে তার লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। চার মাস তার চাকরিও নেই। এখন নতুন করে হালকা যানের লাইসেন্স নিতে হবে। তা ছাড়া ভারী গাড়ি চালানো যাবে না।
আবদুল মমিন বলেন, ‘এ অবস্থায় বিআরটিএর কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলা যায় না, স্যার; বলে, বেরিয়ে যান।’ চালক মমিনের এ কথায় সমর্থন দিয়ে অন্য চালকেরা হাততালি দেন। এরপর বিআরটিএ চেয়ারম্যান তাকে এক দিনের মধ্যেই লাইসেন্স দেয়ার নির্দেশনা দেন কর্মকর্তাদের।
গণশুনানিতে কয়েকজন চালক জানান, তারা ২০১৯ সালে লাইসেন্স করতে দিয়েছেন। কিন্তু এখনও লাইসেন্স পাননি। দু-তিন মাস পরপর বিআরটিএ কার্যালয়ে আসেন। তখন হাতে লেখা লাইসেন্সের মেয়াদ বাড়িয়ে দেয়া হয়। দীর্ঘ সময় ধরে তারা এ ভোগান্তির মধ্যে আছেন। এ সময় বিআরটিএ চেয়ারম্যান এ সমস্যার কারণ জানতে চান কর্মকর্তাদের কাছে।
বিআরটিএর রাজশাহী সার্কেলের কর্মকর্তারা জানান, লাইসেন্স কার্ড প্রস্তুতের দায়িত্বে থাকা আগের প্রতিষ্ঠান টাইগার আইটির কারণে রাজশাহীর প্রায় ৩৫০ চালক এমন দুর্ভোগের মধ্যে আছেন। তখন বিআরটিএ চেয়ারম্যান বলেন, টাইগার আইটি কালো তালিকাভুক্ত হয়ে পড়ায় আর কাজ পায়নি। তখন সারাদেশের কিছু ড্রাইভিং লাইসেন্সের কাজ তারা শেষ করে যায়নি। কোনো ডেটাবেজও দিয়ে যায়নি। ফলে চালকদের লাইসেন্স দেয়া সম্ভব হয়নি। তবে এবার তিনি উদ্যোগ নেবেন। আগের জমা দেয়া টাকাতেই চালকদের নতুন করে লাইসেন্স দেয়া হবে।
গণশুনানিতে রাজশাহী বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মতিউল হক, রাজশাহী মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মাহাতাব হোসেন চৌধুরী, রাজশাহী ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কালাম আজাদ, রাজশাহী ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ফরিদ আলী প্রমুখ বক্তব্য দেন।
